Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চৈত্রেও নাথু লা-য় একটানা তুষারপাত

আর পাঁচটা বছর চৈত্র মাসে খুব একটা তুষারপাত হয় না সিকিমে। কিন্তু এ বার মার্চের শেষে মধ্য চৈত্রেও পূর্ব সিকিমের নাথু লা ও লাগোয়া এলাকায় টানা তুষারপাত চলছে। সৌজন্যে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। তুষারপাত দেখতে সিকিম ও লাগোয়া দার্জিলিঙে উপচে পড়ছে পর্যটকদের ভিড়। গ্যাংটকের এমজি মার্গ থেকে দার্জিলিঙের ম্যাল চৌরাস্তায় হিমেল বাতাসের পরশ গায়ে মেখে নিতে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আনাগোনায় উচ্ছ্বসিত পর্যটন মহল।

সপ্তাহখানেক ধরে এমনই বরফে ঢেকে রয়েছে নাথু লা-র অদূরে শেরেথাং এলাকা। ছবি: সম্রাট সান্যাল।

সপ্তাহখানেক ধরে এমনই বরফে ঢেকে রয়েছে নাথু লা-র অদূরে শেরেথাং এলাকা। ছবি: সম্রাট সান্যাল।

কিশোর সাহা
গ্যাংটক শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৬
Share: Save:

আর পাঁচটা বছর চৈত্র মাসে খুব একটা তুষারপাত হয় না সিকিমে। কিন্তু এ বার মার্চের শেষে মধ্য চৈত্রেও পূর্ব সিকিমের নাথু লা ও লাগোয়া এলাকায় টানা তুষারপাত চলছে। সৌজন্যে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা।

তুষারপাত দেখতে সিকিম ও লাগোয়া দার্জিলিঙে উপচে পড়ছে পর্যটকদের ভিড়। গ্যাংটকের এমজি মার্গ থেকে দার্জিলিঙের ম্যাল চৌরাস্তায় হিমেল বাতাসের পরশ গায়ে মেখে নিতে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আনাগোনায় উচ্ছ্বসিত পর্যটন মহল। পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে রাজ্য সরকারের কাজের প্রতিবাদ করে পাহাড়ে বন্ধ ডেকেও দোলাচলে রয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাও। ইতিমধ্যেই গুড ফ্রাইডে-র কারণ দেখিয়ে তার আগের দিন ২ এপ্রিলের পূর্ব ঘোষিত বন্ধ পিছিয়েও দিয়েছে তারা। সিকিমের পর্যটন বিভাগের এক মুখপাত্র জানান, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের পরে সাধারণত তুষারপাত তেমন হয় না। চলতি বছরে ১৫ মার্চ থেকে ঝিরঝিরে তুষারপাত হওয়ায় পর্যটকের ঢল নেমেছে।

তুষারপাতের জেরে তাপমাত্রাও কমছে সিকিমে। গ্যাংটকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এ দিন ৩ ডিগ্রি কমে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে। মঙ্গনের তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রিতে নেমে যায়। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহার কথায়, “শুধু পশ্চিমী ঝঞ্ঝা নয়, একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখাও সিকিমের উপর রয়েছে। সে কারণেই সিকিম জুড়ে বৃষ্টি চলছে। দিন ভর মেঘে ঢাকা থাকছে সিকিম। এই পরিস্থিতি তুষারপাতের অনুকূল। সে কারণেই উঁচু এলাকাগুলিতে টানা তুষারপাত চলছে। নাথু লা, ছাঙ্গুতে নিয়মিত তুষারপাত চলছে। আরও অন্তত এক সপ্তাহ এই পরিস্থিতি চলবে।”

বস্তুত, আবহাওয়ার পূর্বাভাস পেয়ে ভরা গ্রীষ্মে গুজরাত, কেরলের একাধিক পর্যটক দল হাজির হয়েছেন গ্যাংটকে। রোজই নাথুলার পথে চোখে পড়ছে গাড়ির লম্বা লাইন। নাথুলায় পর্যটকদের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সেনাবাহিনী। বরফের চাদরে মোড়া শেরেথাংয়ের ‘রেস্ট শেড’-এর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ছে রোজই। নাথু লা দিয়ে মানস সরোবর যাতায়াতের পথে তীর্থযাত্রীদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ওই ‘শেড’ আধুনিকীকরণ করেছে সিকিম সরকার। সেখানে দাঁড়িয়ে গুজরাতের বাসিন্দা রূপকুমার চৌধুরী বললেন, “ট্যুর অপারেটরের কাছে নাথুলায় তুষারপাত হচ্ছে শুনেই বাগডোগরা হয়ে হেলিকপ্টারে গ্যাংটকে এসেছি।”

পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে তাপমাত্রা কমেছে দার্জিলিঙেরও। এ দিন টাইগার হিলে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রিতে নেমে যায়। দার্জিলিং শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ছিল স্বাভবিকের থেকে কম। শৈল শহরে এ দিনের তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রির আশেপাশে ঘোরাফেরা করেছে। শিলিগুড়ির সর্ব নিম্ন তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ছিল। তা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছে পিঠেই ছিল। সারা দিনই শীতল বাতাস বয়েছে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতে। শুক্রবার আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে উত্তর এবং পূর্ব সিকিমে ভারি এবং মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

টাইগার হিলের প্যাভিলিয়ানের ম্যানেজার প্রদীপ লামা বলেন, “প্রতি দিন পর্যটকদের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে আকাশে মেঘ থাকায় সূর্যোদয় দেখা যাচ্ছে না। কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘাও।” কলকাতার শ্যামবাজারের বাসিন্দা প্রদীপন মুখোপাধ্যায় পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছেন দার্জিলিঙে। তিনি বলেন, “কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে না পাওয়ায় সকলেই হতাশ। শীতের আমেজ কিন্তু খুব ভাল লাগছে আমাদের।”

এ দিন সন্ধ্যায় পুরুলিয়ায় ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হয়েছে। বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরে ৪৫ মিনিট ভাল বৃষ্টি হয়েছে। তাতে এক ধাক্কায় অনেকটাই তাপমাত্রা কমেছে। মানুষের স্বস্তি ফিরেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE