জিএসটি চালু করতে কংগ্রেসের মুখরক্ষার জন্য তাদের কিছু দাবি মেনে নিতে তৈরি নরেন্দ্র মোদী সরকার। আর মোদী সরকার সেই দাবি মেনে নিলে জিএসটি পাশের পুরো কৃতিত্বই রাহুল গাঁধীকে দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে কংগ্রেস।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের বাসভবনে সনিয়া গাঁধী-সহ কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে সনিয়ার সঙ্গে মনমোহন সিংহ থাকলেও ছিলেন না রাহুল। আলোচনার পরে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানান, বৈঠকে জিএসটি নিয়ে কংগ্রেসের দাবিগুলি যেমন তাঁরা শুনেছেন, তেমনই বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন নিজেদের অবস্থানের পিছনে থাকা অর্থনীতির অঙ্কের কথা। সরকারি সূত্রের দাবি, মনমোহন বেশ কিছু বিষয়ে জেটলির সঙ্গে একমতও হন। কিন্তু সনিয়া তখনই জানিয়ে দেন, কংগ্রেসের অন্দরে আলোচনা করেই তাঁরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। বিজেপি নেতাদের দাবি, দলের মধ্যে আলোচনার অর্থ আসলে রাহুলের সঙ্গে কথা বলা। সনিয়া চাইছেন, রাহুলই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন।
কারণ রাহুলই জিএসটি প্রসঙ্গে কংগ্রেসের বিভিন্ন দাবি নিয়ে বারবার সরব হচ্ছেন।
আজ সকালেই রাহুল তাঁর বাড়িতে কংগ্রেসের লোকসভার নেতা মল্লিকার্জুন খড়গের সঙ্গে বৈঠক করেন। জিএসটি নিয়ে কংগ্রেসের রণকৌশল কী হবে, তা নিয়ে দু’জনের আলোচনা হয়। গত কাল প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, লোকসভার খড়গে, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, রাজ্যসভার আনন্দ শর্মারা বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুও। এ দিন সকালে রাহুলের বাড়িতে বৈঠকের পরেই খড়গে, সিন্ধিয়াদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন বেঙ্কাইয়া। খড়গে পরে বলেন, ‘‘আমাদের উদ্বেগের বিষয়গুলি মেনে নেওয়া হলে এবং সমাধানসূত্র বের হলে আমরা এগোতেই পারি।’’
জিএসটি-র করের হার ১৮ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখা এবং শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির জন্য প্রস্তাবিত বাড়তি ১ শতাংশ কর না-বসানোর যে দাবি রাহুল তুলেছেন, তার সঙ্গে শিল্পমহলও কমবেশি একমত। মোদী সরকার এই দাবিগুলি আংশিক মেনে নিলেও রাহুল বলতে পারবেন, তিনিই সরকারের উপর চাপ তৈরি করে শিল্পমহল ও সাধারণ মানুষের স্বার্থে এটা আদায় করেছেন। রাহুল যাতে সেই কৃতিত্ব পান,
সেই লক্ষ্যেই সক্রিয় কংগ্রেস। খড়গে ছাড়াও আজ সারা দিনই কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও আলাপ-আলোচনা চালিয়ে গিয়েছেন রাহুল।
এই সংক্রান্ত আরও খবর...
চাপ বড় বালাই, মোদীর মুখে কংগ্রেস নাম
এই দু’টি দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলেও জেটলি গতকালের বৈঠকে মনমোহনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এখন জিএসটি চালুর জন্য সংবিধান সংশোধনী হচ্ছে। কংগ্রেসের দাবি মেনে সেই বিলেই জিএসটি-র হার ১৮ শতাংশে বেঁধে রাখা হলে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে। যেমন, যদি কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামাল দিতে বাড়তি কর বসানোর কথা ভাবা হয়, তা হলেও জরুরি ভিত্তিতে তা করা যাবে না। সে জন্যও সংবিধান সংশোধনের অপেক্ষা করতে হবে। তা ছাড়া শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির রাজস্ব ক্ষতি সামাল দিতে বাড়তি ১ শতাংশ কর বসানোর যে প্রস্তাব রয়েছে, তা মানা না হলে ওই রাজ্যগুলি জিএসটি পাশের ব্যাপারে বেঁকে বসবে। একই ভাবে কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদের মীমাংসার আলাদা ব্যবস্থা তৈরি হলে জিএসটি কাউন্সিলের কাজ ধাক্কা খাবে। সেই সঙ্গে জিএসটি চালুর ক্ষেত্রেও বারবার বাধা আসতে পারে।
জেটলির আরও যুক্তি ছিল, করের হার কী হবে, তা সুপারিশ করার জন্য মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমের কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে তিনি সুপারিশ জানাতে পারেন। জিএসটি-র হার কী হবে, তার প্রথম শর্তই হল, রাজ্য ও কেন্দ্রের রাজস্ব আয় যাতে না কমে যায়। সেই সুপারিশ খতিয়ে দেখে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের এমপাওয়ার্ড কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে জিএসটি-র হার কী হবে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, বিভিন্ন পরিস্থিতির কথা ভেবে বিভিন্ন ধরনের জিএসটি-র হার সুপারিশ করতে পারেন সুব্রহ্মণ্যম। আপাতত পেট্রোল-ডিজেলের মতো পেট্রোলজাত পণ্য জিএসটি-র বাইরে থাকবে। অ্যালকোহল বরাবরের মতোই জিএসটি-র বাইরে থাকবে। এই দু’টি পণ্যের জন্য পৃথক হার ঠিক হতে পারে। তা সত্ত্বেও কংগ্রেসের মুখরক্ষার জন্য কিছু দাবি মেনে নিয়েই জিএসটি-র সমঝোতা সূত্র বের করতে চাইছেন মোদী-জেটলি। অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিনহা বলেন, ‘‘আমরা আশাবাদী, জিএসটি নিয়ে সমাধানসূত্র বের হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy