Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জোট নিয়ে ক্ষোভ এআইইউডিএফে

কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এআইইউডিএফ মাত্র ৬০টি আসনে লড়বে ও ৬৬টি আসন অন্য ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দলের জন্য ছেড়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করায় হাইলাকান্দি জেলায় তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাইলাকান্দি ও গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:০০
Share: Save:

কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এআইইউডিএফ মাত্র ৬০টি আসনে লড়বে ও ৬৬টি আসন অন্য ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দলের জন্য ছেড়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করায় হাইলাকান্দি জেলায় তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সেখানকার তৃণমূল স্তরের কর্মীদের দাবি, জেলার তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রই কংগ্রেসের দখলে। কংগ্রেসের সঙ্গে এআইইউডিএফের গোপন বোঝাপড়ার হলে জয়লাভের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও বিনা যুদ্ধে হাইলাকান্দিতে এআইইউডিএফকে জমি হারাতে হবে।

অন্য দিকে, বিজেপি ও অসম গণ পরিষদের মধ্যে মিত্রতার সম্ভাবনা জোরালো হওয়ায় রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিজেপি কর্মীরা আন্দোলনে নেমেছেন। অগপর সঙ্গে জোট বাঁধার প্রতিবাদে এদিন কয়েকশো বিজেপিকর্মী হেঙেরাবাড়িতে বিজেপি সদর দফতরেও চড়াও হন।

রাজ্যের ১২৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬৬টি আসনে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দলকে ‘বিবেক ভোট’ দেওয়ার আবেদন রেখেছে এআইইউডিএফ। কিন্তু দলীয় সূত্রে খবর, বাকি ৬৬টি আসনে কংগ্রেসকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই বদরুদ্দিন আজমল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলের এই রণকৌশলে সবচেয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন হাইলাকান্দির দলীয় নেতা-কর্মীরা। এই জেলায় কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের মন্ত্রী গৌতম রায়ের বিরোধিতা করেই পায়ের নীচে মাটি শক্ত করেছে এআইইউডিএফ। এই অবস্থায় যদি কংগ্রেসের সঙ্গে আজমলের বোঝাপড়া হয়ে যায়— তা হলে প্রচারে গিয়ে নেতাদের মুখ দেখানোর জায়গা থাকবে না।

কংগ্রেস ও এআইইউডিএফের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ বোঝাপড়া’ হলে হাইলাকান্দির একটি বিধানসভা কেন্দ্রও এআইইউডিএফের পাওয়ার কথা নয়। কারণ তিনটি আসনই কংগ্রেসের দখলে রয়েছে।

গত লোকসভা নির্বাচনে করিমগঞ্জ-হাইলাকান্দির তফশিলিদের জন্য সংরক্ষিত আসনটি দখল করার পাশাপাশি এই জেলার তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রেই ভোটের হিসেবে এআইইউডিএফ প্রথম স্থানে ছিল। তার আগে, আলগাপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মন্ত্রী গৌতম রায়ের পত্নী, কংগ্রেস প্রার্থী মন্দিরা রায়কে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিলেন এআইইউডিএফ প্রার্থী মেহেবুবুল হাসান। মাত্র ৯৪৪ ভোটে জিতে মন্দিরাদেবী হাইলাকান্দি জেলার প্রথম মহিলা বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলার কাটলিছড়া এবং হাইলাকান্দি কেন্দ্রেও এআইইউডিএফ প্রার্থী তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরেছিলেন। আলগাপুর কেন্দ্রে অগপ প্রার্থী সহিদুল আলম চৌধুরীকে সমর্থন করেছিল আজমলের দল। তিনি জয়ী হয়েছিলেন।

এআইইউডিএফ ও কংগ্রেসের বোঝাপড়ার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে দলের জেলা সভাপতি হিলাল উদ্দিন বড়ভুইয়া বলেন, ‘‘আপাতত বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের বিবেচনাধীন। এখনই এ ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না। তবে আমার আশা হাইলাকান্দির সব আসন ছাড়া হবে না।’’ কাটলিছড়ার এআইইউডিএফ কর্মীরা অবশ্য বলছেন, ‘‘যদি শত্রু দল কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের দলের বোঝাপড়া হয়, আমরা সেই সিদ্ধান্ত মানব না। আমাদের পছন্দের প্রার্থী দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে আনব।’’ হাইলাকান্দি এবং আলাগাপুরের তৃণমূল স্তরের কর্মী-সমর্থকদেরও একই মনোভাব।

হাইলাকান্দি জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দিন বড়ভুঁইঞা বলেন, ‘‘এই বোঝাপড়ায় কংগ্রেস উজানি অসমে উপকৃত হলেও বরাকে তার প্রভাব পড়বে না। এআইইউডিএফের সঙ্গে এখানে কংগ্রেসের লড়াই হবেই।’’

এ দিকে, আজ মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, ‘‘কংগ্রেস মোটেই এআইইউডিএফের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেনি। এআইইউডিএফ ৬৬টি আসন বিজেপির জন্য ছেড়েছে। কংগ্রেস বড়জোড় ৫ থেকে ১০টি আসন নিয়ে অন্য কোনও দলের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে পারে।’’

অন্য দিকে, অসম গণ পরিষদের সঙ্গে বোঝাপড়া নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে বিজেপি। কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিজেপি কর্মীরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এ দিন মাজুলি, বঙাইগাঁও, বরপেটা, মরিগাঁও, কামরূপ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিজেপি কর্মীরা অগপর সঙ্গে জোট বাঁধার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নামেন। রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা বিজেপি কর্মীরা আজ গুয়াহাটির হেঙেরাবাড়িতে বিজেপির সদর দফতরে গিয়েও জোট বাঁধার প্রতিবাদ জানান। অনেকে অর্ধ-উলঙ্গ হয়ে দফতরের সামনে বসে পড়েন। উলুবাড়িতেও বিজেপি কর্মীরা জোটের প্রতিবাদে রাস্তায় শুয়ে প্রতিবাদ জানান। শুধু কর্মীরাই নন, বিধায়ক যাদবচন্দ্র ডেকা এবং সাংসদ রাজেন গোঁহাইও বলেন, কর্মীদের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে অগপর সঙ্গে জোট বাঁধা উচিত নয়। অগপ তেমন গণভিত্তিও নেই। এতে আখেরে দলের ক্ষতিই হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE