সাংবাদিক সম্মেলনে রিপোর্ট প্রকাশ করছেন অরুণ জেটলি এবং কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী বীরেন্দ্র সিংহ। ছবি: পিটিআই।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক মাপকাঠিতে গ্রামের মানুষের দুরবস্থার ছবিটা খোলসা করে দিল দেশের প্রথম আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত জনগণনা। কিন্তু, কোন জাতের মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে বা সামাজিক ভাবে কী অবস্থায় রয়েছেন, সেই তথ্য প্রকাশ করল না নরেন্দ্র মোদী সরকার।
স্বাভাবিক নিয়মেই প্রশ্ন উঠেছে, বিহার নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই জাতপাতের হিসেব প্রকাশ থেকে নরেন্দ্র মোদী সরকার পিছিয়ে এল কি না? কারণ জনগণণায় যদি দেখা যেত, জাতপাতের নিরিখে সমাজের নীচের অংশ অর্থনৈতিক ভাবেও পিছিয়ে রয়েছেন, তা হলে নীতীশ কুমার বা লালুপ্রসাদদেরই সুবিধা হয়ে যেত। কারণ তাঁরা সমাজের নীচের অংশের নেতা হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেন। নতুন করে সংরক্ষণের দাবিও উঠত বলে অনেকের আশঙ্কা।
এমনিতেই বিহারে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছেন নীতীশ কুমার ও লালুপ্রসাদ। পাশে রয়েছে কংগ্রেসও। নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ—দু’জনের কাছেই বিহারের ভোট তাই ‘অ্যাসিড টেস্ট’। রাজনৈতিক সূত্রের ব্যাখ্যা, এই প্রেক্ষিতে জাতিগত গণনার হিসেব তুলে ধরে লালু-নীতীশের হাতে নতুন হাতিয়ার হাতে তুলে দিতে চাননি তাঁরা। বিজেপি নেতৃত্ব ধর্মের নামে গোটা হিন্দু সমাজকেই একজোট করতে চায়। কিন্তু, তার মধ্যে জাতপাত ও অর্থনীতির ভিত্তিতে ভেদাভেদ তৈরি হলে বিজেপির অসুবিধা। লালু-নীতীশদেরও।
প্রকাশ্যে অবশ্য এ কথা মানতে চাননি সরকারের মন্ত্রীরা। বৃহস্পতিবার ‘আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত জনগণনা’-র রিপোর্ট প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চৌধুরী বীরেন্দ্র সিংহ। কিন্তু সেখানে শুধুই বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক মাপকাঠির ভিত্তিতে গ্রামীণ ভারতের পরিসংখ্যান ছিল। কোন জাতের মানুষের সংখ্যা কত, তাঁদের আর্থিক পরিস্থিতি কী, তার কোনও পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়নি। প্রশ্ন হঠে, জাতপাতের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান প্রকাশ হল না কেন? বীরেন্দ্র বলেন, ‘‘এ’টি জনগণনা দফতরের অধিকর্তার সিদ্ধান্ত।’’
এর সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক রয়েছে বলেও মানতে নারাজ নরেন্দ্র মোদী সরকার। বীরেন্দ্রর দাবি, ‘‘এমন কোনও বিষয় নেই। এর সঙ্গে নির্বাচনকে জুড়ে দেখা ঠিক নয়।’’ ভবিষ্যতে ওই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে কি না, তা-ও খোলসা করতে চাননি তিনি। তাঁর যুক্তি, কেন্দ্রীয় সরকার আর্থ-সামাজিক পরিসংখ্যান নিয়ে বেশি চিন্তিত। এর ভিত্তিতেই একশো দিনের কাজের মতো বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি হবে। কারা পিছিয়ে রয়েছেন, তাঁদের উন্নয়নের জন্য কী ধরনের সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প দরকার, তা এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাবে।
আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত গণনার কাজ শুরু হয়েছিল ইউপিএ-জমানায়, ২০১১-তে। ১৯৩১-র পর এই প্রথম দেশে এই ধরনের গণনা হল। সেই সময়ই জাতিগত গণনা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চরমে উঠেছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনগ্রসর নেতারা দাবি তুলেছিলেন, কোন জাতের পরিবার অর্থনৈতিক ভাবে কী অবস্থায় রয়েছে, তা জনগণনায় দেখা হোক। ইউপিএ-নেতৃত্বেরও সেই দাবি ছিল। তিন যাদব নেতা—মুলায়ম সিংহ, লালুপ্রসাদ, শরদ যাদবরাও সংসদে বারবার এই দাবিতে সরব হয়েছেন। কিন্তু ইউপিএ-র মধ্যেই একাংশের আশঙ্কা ছিল, এইধরনের গণনার ফলাফল প্রকাশ হলে নতুন করে জাতপাতের ভিত্তিতে সংরক্ষণের দাবি উঠবে। জাতপাতের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক বৈষম্য রয়েছে বলে তথ্য প্রকাশিত হলে জাতপাতের ভেদাভেদ আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তাই জনগণনার ফর্মে জাতি লেখার জায়গাটি রাখা হবে কি না, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলে। শেষ পর্যন্ত জনগণনায় কার কত আয়, বাড়িতে টেলিফোন, গাড়ি বা রেফ্রিজারেটর রয়েছে কি না, তা জানতে চাওয়ার পাশাপাশি জাতপাতও জানতে চাওয়া হবে বলে ঠিক হয়।
এই পরিসংখ্যান প্রকাশ না হলেও সরকারের কাজে কোনও অসুবিধা হবে না বলেই কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর যুক্তি, দারিদ্রতার বিভিন্ন দিকগুলি এই জনগণনায় উঠে এসেছে। যার ভিত্তিতে সার্বিক ভাবে দারিদ্র দূরীকরণের পরিকল্পনা তৈরি করা যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy