ধানবাদের প্রভাত স্টেডিয়ামে মমতা। চন্দন পালের তোলা ছবি।
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এসে মমতা জানিয়ে দিলেন, ঝাড়খণ্ডে তাঁর ‘পাখির চোখ’ কিন্তু রাজ্যের আগামী বিধানসভা নির্বাচন। জানিয়ে দিলেন, লোকসভায় ১৪টি আসনের মধ্যে এ বার তিনি ১১টি আসনে প্রার্থী দিলেও, বিধানসভায় কিন্তু ৮২টি আসনেই তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দেবে। এবং ঝাড়খণ্ডে শুধু ভোটের মরসুমেই নয়, আগামী ছ’মাসে তিনি বার বার আসবেন।
গত কয়েক দিন ধরেই রাঁচিতে অন্যতম আলোচ্য ছিল মমতার আজকের সভা। দিল্লির সভায় লোক না হওয়ার পর হিন্দি বলয়ের এই নির্বাচনী সভায় কত মানুষ আসবেন, তা নিয়ে কৌতূহলও ছিল চরমে। কিন্তু সকাল থেকেই জামশেদপুর, বহরাগোড়া, রাজমহল, হাজারিবাগের মতো বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস ভরে মানুষ এসে জড়ো হন রাঁচির মোরাবাদী ময়দানে। দলের দুই সম্ভাবনাময় প্রার্থী বন্ধু তিরকি ও চামড়া লিণ্ডারা তৃণমূল নেতৃত্বকে রাঁচিতেই জনসভা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। নিজেদের বিধানসভা কেন্দ্র মান্দার ও বিষুনপুর থেকেও প্রচুর মানুষ জড়ো হন মোরাবাদী ময়দানে। প্রবল গরমের মধ্যেও হাজার পনেরো মানুষের ভিড়ে ভরে যায় সভাস্থল।
আজ মমতার প্রথম সভাটি ছিল ধানবাদে। সেখানকার তৃণমূল প্রার্থী চন্দ্রশেখর তথা দদাই দুবের সমর্থনে ধানবাদের প্রভাত স্টেডিয়ামেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। গত দু’দিনের তুলনায় শনিবার ঝাড়খণ্ডের তাপমাত্রা খানিকটা বেশিই ছিল। প্রায় ৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রার সঙ্গে তীব্র বেগে বয়েছে গরম হাওয়া লু। ১২টা ৪০ নাগাদ মমতার কনভয় এসে পৌঁছয় ধানবাদের মুগমার প্রভাত স্টেডিয়ামে। হাজার আটেক মানুষের ভিড় তৃণমূল নেত্রীকে স্বাগত জানায়।
রাঁচি-ধানবাদ, দু’জায়গাতেই মমতার শরীরী ভাষায় স্পষ্ট হয়ে যায় দিদি খুশি। জনতার ভিড়, তাঁদের উল্লাসে এক বারও মনে হয়নি মমতা ভিন রাজ্যের কোনও সভায় রয়েছেন। একেবারে নিজস্ব স্টাইলেই শুরু করেন তিনি। কখনও উর্দু শায়েরি। কখনও আবার হিন্দি গানের কলি। কর্ডলেস মাইক হাতে মঞ্চের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে বক্তৃতা।
ঝাড়খণ্ডের মানুষের কাছে ভোট চান তৃণমূল নেত্রী। নিজের বক্তব্যের শুরুতেই জানিয়ে দেন তাঁর লক্ষ্য। মমতা বলেন,“তিন-চার মাস পরে এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। লোকসভা নির্বাচন দিয়ে শুরু করলাম। এ বার এ রাজ্যে আমি বার বার আসব। ১৪ বছরে ন’বার এখানে সরকার তৈরি হয়েছে। আয়ারাম-গয়ারামের মতো কংগ্রেস আর বিজেপি সরকার তৈরি করেছে। কংগ্রেস আর বিজেপিকে আপনারা দেখেছেন। এক বার তৃণমূলকে সুযোগ দিন।”
এ রাজ্যের বর্তমান জেএমএম-কংগ্রেস সরকারের থাকা না থাকার চাবিকাঠিটিও যে তাঁর হাতেই রয়েছে, তা-ও তিনি জানিয়ে দেন। মমতা বলেন, “এ রাজ্যে কী চলছে আমি তার সব খবর রাখি। চাইলে আজই সরকার ফেলে দিতে পারি। কিন্তু আমি জনতার রায় জানতে চাই। তাই সরকার ফেলিনি। জনতার স্বার্থেই আমরা কাজ করি।” একই সঙ্গে এ রাজ্যের বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও তিনি বিজেপি আর কংগ্রেসকে একহাত নেন। সুযোগ পেলে পশ্চিমবঙ্গের মতোই এ রাজ্যের আদিবাসী আর সংখ্যালঘুদের উন্নয়নেও তাঁর দল কাজ করবে বলে জানান মমতা। তাঁর সঙ্গে এ দিন মিঠুন চক্রবর্তী ছাড়াও ছিলেন কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় প্রচারে গিয়ে মমতা তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন বিজেপিকে। শনিবার ঝাড়খণ্ডের দু’টি নির্বাচনী সভাতেই তাঁর আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য ছিল বিজেপি। তাঁর বক্তব্য, “বিজেপি শুধু দাঙ্গা করছে। ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদ করছে। দেশের নেতা কখনও দাঙ্গাবাজ হতে পারে না!’’ আজ ফের এক বার বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রসঙ্গ টেনে এনে মমতা দাবি করেন, এই কাজে কংগ্রেসেরও হাত ছিল। ঠিক যেমন তেলঙ্গানা গঠনে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপি ভাগাভাগির রাজনীতি করেছে। জনতার কাছে মমতা দাবি জানিয়ে গেলেন, “ওদের পরিত্যাগ করুন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy