Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

টানা বৃষ্টি মহারাষ্ট্রে, মলিণ গ্রামে উদ্ধার ৪১টি দেহ

এখানে ওখানে ছড়িয়ে ঘর-গৃহস্থালির টুকরো চিহ্ন। ইতস্তত উঁকি দিচ্ছে ভাঙাচোরা বাসন, ছেঁড়া কাপড়। বোঝা যায়, দু’দিন আগেও একটা গ্রামের অস্তিত্ব ছিল ওখানে। অস্তিত্ব ছিল জনজীবনের। আচমকা ধস নেমে কয়েক মুহূর্তেরই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা গ্রামটাই।

চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: এএফপি।

চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
পুণে শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০২
Share: Save:

এখানে ওখানে ছড়িয়ে ঘর-গৃহস্থালির টুকরো চিহ্ন। ইতস্তত উঁকি দিচ্ছে ভাঙাচোরা বাসন, ছেঁড়া কাপড়। বোঝা যায়, দু’দিন আগেও একটা গ্রামের অস্তিত্ব ছিল ওখানে। অস্তিত্ব ছিল জনজীবনের। আচমকা ধস নেমে কয়েক মুহূর্তেরই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা গ্রামটাই। নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে প্রায় ৪৫টা ছোট ছোট বাড়ি আর একটা বড় মন্দির। সেই সঙ্গেই চাপা পড়ে গিয়েছেন প্রায় দু’শো গ্রামবাসী। কাদা-বালি-মাটি-পাথরের স্তূপে বিধ্বস্ত প্রহরীর মতো জেগে আছে কয়েকটা গাছের মাথা, বাড়ি তৈরির বাঁশ ইত্যাদি।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পুণে থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে আম্বেগাঁও এলাকার মলিণ গ্রামের ধ্বংসস্তূপ থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪১টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে ১৬ জন মহিলা, ছ’জন শিশু। এ দিন গণচিতার আয়োজন করা হয় তাঁদের জন্য। জখম অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছে ১৪ জনকে। ধ্বংসস্তূপে এখনও আটকে প্রায় দেড়শো জন।

বুধবার ভোর পাঁচটা নাগাদ বিপর্যয়টি ঘটার তিন ঘণ্টার মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয়ে যায় উদ্ধারকাজ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে গত কালই পুণেয় পৌঁছে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তিনি। জানিয়েছেন, দুর্গতদের পরিবারকে দু’লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে কেন্দ্রীয় সরকার।

দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর আঞ্চলিক কম্যান্ড্যান্ট অলোক অবস্তি বললেন, “প্রায় আস্ত একটা ফুটবল মাঠের মতো এলাকা ১০-১৫ ফুট গভীর কাদা-মাটি-বালি-পাথরের স্তূপের তলায় চলে গিয়েছে। যত সময় পেরোচ্ছে, আটকে পড়া মানুষগুলিকে জীবিত উদ্ধার করা কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠছে। তবে অলৌকিক কিছু এখনও ঘটে।” ঘটনার পর পেরিয়েছে ৪০ ঘণ্টা। অক্লান্ত ভাবে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা। হাত লাগিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। এগিয়ে এসেছে একাধিক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা। তবে বেহাল রাস্তাঘাট আর অবিরাম বৃষ্টিতে অসুবিধার মুখে পড়ছেন তাঁরা। এক উদ্ধারকারী বললেন, “গাছপালা কেটে ফেলা আর অবিরাম বৃষ্টির জন্য সংলগ্ন পাহাড়ের গা নরম হয়ে গিয়েছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে যতই কাদা-মাটি সরাচ্ছি, আরও কাদা এসে জমা হচ্ছে।” স্থানীয়রা বলছেন, কয়েক ঘণ্টা পরে ধসটা নামলে বেঁচে যেত অনেকগুলো প্রাণ। বুধবার করে হাট বসে পাশের গ্রামে। সকাল ন’টা থেকেই সেখানে চলে যান গ্রামের বহু মানুষ। তাই বুধবার আর কয়েক ঘণ্টা সময় পেলেই সরে যেতে পারতেন মানুষগুলো।

ধ্বংসস্তূপের কোথায় কোথায় প্রাণের সন্ধান রয়েছে তা বুঝতে পারার জন্য সাধারণত পুলিশ কুকুরদের কাজে লাগানো হয়। কিন্তু বৃষ্টির জন্য তা-ও করা সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টি এবং ভেজা মাটিতে ঠিক কাজ করে না কুকুরের ঘ্রাণেন্দ্রিয়। ঘটনাস্থলে নিয়ে গেলেও নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই আটকে রাখা হয়েছে পুলিশ কুকুরের বাহিনীকে।

অবিরাম বৃষ্টির ভ্রুকুটি সারা মহারাষ্ট্র জুড়ে। গত কালই ঠাণের প্রাায় ৫০টি গ্রাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা দফতর জানিয়েছে, মুরবাদ ও পালঘরের গ্রামগুলি জলের তলায়। ভেঙেছে একাধিক সেতু। বানভাসি গ্রামের মানুষদের নিরাপদ এলাকায় সরানোর কাজ করছে দমকল বাহিনী। ৪৮ ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে মুম্বই শহরতলির চেম্বুর এলাকাতেও বৃহস্পতিবার ধস নামে। ঘুমন্ত অবস্থাতেই মারা যায় গণেশকুমার কোরাদে নামের ছ’বছরের এক শিশু।

উত্তরাখণ্ডে ভারী বৃষ্টিতে মৃত পাঁচ

ভারী বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত উত্তর ভারত। এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচ জন। আবহ দফতর সূত্রের খবর, এ দিন ভোর তিনটে নাগাদ মেঘ ভাঙা বৃষ্টি আছড়ে পড়ে উত্তরাখণ্ডের তেহরি জেলার নেতাদ গ্রামে। নিকটবর্তী রুইস নালা উপচে বানভাসি হয়ে যায় দু’টি ঘর। চার মহিলা-সহ পাঁচ জন ভেসে যান ঘুমন্ত অবস্থাতেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pune landslide Toll reaches 41
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE