Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

তিব্বত সমস্যা ভারতেরও: দলাই লামা

এক দিকে চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সঙ্গে আজ রাজধানীতে বসে একাধিক চুক্তি সই করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্য দিকে মুম্বইয়ে বসে মুখ খুললেন তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামা। ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যার সঙ্গে তিব্বতিদের সমস্যা জুড়ে দিয়ে বললেন, “তিব্বতের সমস্যা আসলে ভারতেরই সমস্যা।”

দার্জিলিং ম্যালে অনশন কর্মসূচি তিব্বতি যুব কংগ্রেস সদস্যদের। বৃহস্পতিবার রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।

দার্জিলিং ম্যালে অনশন কর্মসূচি তিব্বতি যুব কংগ্রেস সদস্যদের। বৃহস্পতিবার রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৭
Share: Save:

এক দিকে চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সঙ্গে আজ রাজধানীতে বসে একাধিক চুক্তি সই করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্য দিকে মুম্বইয়ে বসে মুখ খুললেন তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামা। ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যার সঙ্গে তিব্বতিদের সমস্যা জুড়ে দিয়ে বললেন, “তিব্বতের সমস্যা আসলে ভারতেরই সমস্যা।”

নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন দলাই লামা। বলেছেন, “১৯৫০ সালের আগে ভারতের উত্তর সীমান্ত ছিল শান্তিপূর্ণ। কোনও সেনার উপস্থিতি সেখানে টের পাওয়া যেত না। অথচ তার পর থেকেই যত ঝামেলার সূত্রপাত। সুতরাং তিব্বতের সমস্যা ভারতেরও সমস্যা।”

নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপকের এই মন্তব্যের পিছনে আসলে রাজনীতিরই গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। স্বাধীন তিব্বতের দাবি নিয়ে চিনের সঙ্গে তাঁর ঝামেলার সূত্রপাতও সেই পঞ্চাশের দশক থেকেই। দলাই লামা নিজে তিব্বতের জন্য ‘কার্যকরী স্বশাসন’ চান বলে দাবি করে এসেছেন। কিন্তু চিন সরকার বরাবর তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যা দিয়ে এসেছে। বেজিংয়ের দাবি ছিল, স্বাধীন তিব্বতের জন্য চিন সরকারের বিরুদ্ধে রীতিমতো বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন দলাই লামা। চিনের চাপে শেষমেশ ১৯৫৯ সালে তিব্বত ছেড়ে ভারতে এসে পাকাপাকি ভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। আজকের এই মন্তব্যের পিছনেও দলাই লামার সেই তিব্বতি রাজনীতিই কাজ করেছে বলে মনে করছেন অনেকে। তাই তিনি পরোক্ষে তিব্বত প্রসঙ্গের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সমস্যাকে জুড়ে দিতে দিয়েছেন। মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন, তিব্বত নিয়ে সমস্যা শুরু হওয়ার পর থেকেই চিনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সমস্যারও সূত্রপাত।

সেই সঙ্গে দলাই লামার সংযোজন, শান্তিপূর্ণ পথে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি বলেছেন, “আজ না হোক কাল, কাউকে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। তবে জোর খাটিয়ে নয়। বোঝাপড়া আর আলোচনার মাধ্যমে। বোঝাপড়া আলোচনার মধ্যে দিয়েই হয়।”

আজ অবশ্য নতুন চিনা প্রেসিডেন্টের প্রশংসাও করেছেন তিব্বতি ধর্মগুরু। বলেছেন, পূর্বসূরি হু জিনতাও-এর তুলনায় এই নতুন প্রেসিডেন্ট অনেক বেশি বাস্তববাদী এবং খোলা মনের। সেই সঙ্গেই ভারতীয় ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির একরাশ প্রশংসা করেছেন দলাই লামা। তাঁর উপদেশ, ভারতের থেকে অনেক কিছু শেখা উচিত চিনফিংয়ের।

তবে দলাই লামা মুখে যতই চিনা প্রেসিডেন্টের প্রশংসা করুন, নয়াদিল্লিতে এক প্রস্ত বিক্ষোভ দেখান তিব্বতি পড়ুয়ারা। হায়দরাবাদ হাউসে আজ যখন চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত মোদী, তখনই গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখান এক দল তিব্বতি ছাত্রছাত্রী। তাঁদের হাতে ছিল তিব্বতি পতাকা। মুখে ছিল, “আমরা বিচার চাই” ধ্বনি। পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধ্বস্তাধ্বস্তিও হয়। শেষে পুলিশই জোর করে তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে একটি বাসে তুলে দেয়। তার আগে চিনা প্রেসিডেন্ট যখন রাজঘাটে, ঠিক সেই সময় দক্ষিণ দিল্লির ধৌলা কুঁয়া এলাকায় পতাকা হাতে একটি টিভি স্টেশনের টাওয়ারে ওঠার চেষ্টা করেন এক তিব্বতি ছাত্র। পরে নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে পরাস্ত করেন।

প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে দার্জিলিঙেও। প্রধানমন্ত্রী চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিব্বতের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন, এই দাবি জানিয়ে আজ দার্জিলিঙের চৌরাস্তায় ৮ ঘণ্টা অনশন করলেন তিব্বতি যুব কংগ্রেসের সদস্যরা। বিকেলে একটি মোমবাতি মিছিলও করেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রীকে ১২ অগস্ট স্মারকলিপিও পাঠানো হয়েছে বলে সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে। সংগঠনের দার্জিলিং শাখার সভাপতি ডিকি ডোলকার বলেন, “গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর দমন-পীড়ন চলছে। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী সরব হোন।”

এ দিন দার্জিলিঙে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে সংগঠনটি। গণস্বাক্ষর সম্বলিত দাবিপত্রও প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে। সিকিম থেকেও সংগঠনের সদস্যেরা দার্জিলিঙের কর্মসূচিতে যোগ দেন। সারা বিশ্বে সংগঠনের ৩৫ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে বলেও দাবি করা হয়। সংগঠনের উত্তর-পূর্ব শাখার সভাপতি দাওয়া গেলপো বলেন, “উত্তর পূর্ব শাখার তরফেই অনশন কর্মসূচি হয়েছে। কিছু সদস্য আজ কালিম্পঙেও অনশন করেছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE