Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দলে ভাঙন, পার্বত্য পরিষদ হারানোর আশঙ্কায় কংগ্রেস

আজই তিওয়া স্বশাসিত পরিষদে বোর্ড গড়ল কংগ্রেস। আর এ দিনই ডিমা হাসাওয়ে তাদের ক্ষমতা হারানোর ঘণ্টা বাজল! পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের ৯ জন সদস্য বিজেপিতে যোগ দিলেন। তাঁদের মধ্যে ৫ জন কার্যবাহী সদস্য, ৩ জন পরিষদীয় সচিব। তাঁরা সবাই কংগ্রেসে ছিলেন। অন্য জন হলেন নির্দল মিহির গারলোসা ওরফে জুয়েল। ভেঙে দেওয়া জঙ্গি সংগঠন ডিএইচডি-র (জে) তিনিই ছিলেন প্রধান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাফলং শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:১৩
Share: Save:

আজই তিওয়া স্বশাসিত পরিষদে বোর্ড গড়ল কংগ্রেস। আর এ দিনই ডিমা হাসাওয়ে তাদের ক্ষমতা হারানোর ঘণ্টা বাজল!

পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের ৯ জন সদস্য বিজেপিতে যোগ দিলেন। তাঁদের মধ্যে ৫ জন কার্যবাহী সদস্য, ৩ জন পরিষদীয় সচিব। তাঁরা সবাই কংগ্রেসে ছিলেন। অন্য জন হলেন নির্দল মিহির গারলোসা ওরফে জুয়েল। ভেঙে দেওয়া জঙ্গি সংগঠন ডিএইচডি-র (জে) তিনিই ছিলেন প্রধান।

এক সঙ্গে ৯ জন বিজেপিতে নাম লেখানোয় দেবজিৎ থাওসেনের নেতৃত্বাধীন পরিষদ সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, দু-এক দিনের মধ্যে তাঁরা নতুন পরিষদ গঠন করবেন। কংগ্রেসের পরিষদ ভেঙে দিয়ে তাঁদের শপথ করানোর জন্য রাজ্যপালের কাছে আর্জি জানাবেন।

কে হবেন নতুন সিইএম— তা নিয়ে অবশ্য গেরুয়া দলটিতে দ্বন্দ্ব রয়েছে। একাংশের দাবি, প্রকান্ত ওয়ারিসাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হোক। কারণ তিনি এর আগেও এই দায়িত্ব সামলেছেন। ছিলেন রাজ্যসভার সদস্যও। দেবজিৎ থাওসেনের পরিষদে কার্যবাহী সদস্য পদেও ছিলেন। কিন্তু দলের সাত পুরনো সদস্যের তাতে আপত্তি রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, প্রকান্ত আজই দলত্যাগ করলেন। এখনই তাঁকে এমন গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া সমীচিন নয়। এ ছাড়া, প্রকান্ত ওয়ারিসার দলত্যাগ কার্যত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তিনি এএসডিসি-র শীর্ষ নেতৃত্বের এক জন ছিলেন। মুখ্য কার্যবাহী সদস্য, সাংসদও করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এএসডিসি-বিজেপি জোটেও প্রধান কারিগরের ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেই লোকটি না রইলেন এএসডিসিতে, না গেলেন বিজেপিতে। ক্ষমতার লোভে কংগ্রেসে যোগ দেন।

নাম উল্লেখে রাজি না হলেও পুরনো সদস্যদের দাবি, তাঁদের মধ্যে যে কোনও এক জনকে সিইএম করা হলে বাকিদের আপত্তি থাকবে না। ওই ৭ জনও ২০১২ সালের নির্বাচনে বিজেপি টিকিটে জেতেননি। সে বার গেরুয়া বাহিনীর ঝুলি ছিল শূন্য। ২৮ সদস্যের পরিষদে কংগ্রেস ১০টি আসনে জেতে। নির্দল ১৮। পরে জুয়েল গারলোসা-সহ সবাই কংগ্রেসে যাওয়ার আবেদন করেন। ১৪ জনের আবেদন মঞ্জুর করে কংগ্রেস। কিন্তু নামঞ্জুর হয় মিহির গারলোসা (জুয়েল), ডেপোলাল গারলোসা, সুব্রত থাওসেন ও নিরঞ্জন হোজাইয়ের আর্জি। তারা সবাই জুয়েলের দলের প্রাক্তন জঙ্গি।

কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন দিলীপ নুনিসার দলের তিন প্রাক্তন জঙ্গিও। কিন্তু দেবজিৎবাবু কার্যবাহী সদস্য করতে রাজি না হওয়ায় বিশ্বজিৎ দাওলাগুপো, আমেন্দু হোজাই ও থাইসডাও থাওসেন বিজেপিতে যোগ দেন। একই কারণে কংগ্রেস ছাড়েন আরেক নির্দল আতং লিয়েংথাং। তিনিও বিজেপিতে নাম লেখান। পরে জুয়েলের দলের তিন সদস্যও একই পথে হাঁটেন। একমাত্র জুয়েল থেকে যান নির্দল হিসেবে।

আজকের যোগ-বিয়োগের আগে উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের চিত্রটি ছিল—কংগ্রেস ২০, বিজেপি ৭ ও নির্দল ১। এ দিন তা বিজেপি ১৬, কংগ্রেস ১২-তে পরিবর্তিত হয়। ম্যাজিক সংখ্যা থেকে অমিত শাহ- নরেন্দ্র মোদীর দলে এখন ১ জন বেশি রয়েছেন। ফলে পরিষদে পালাবদল নিশ্চিত।

নতুন দলত্যাগীদের সকলেরই এক বক্তব্য— দেবজিৎ থাওসেনের সঙ্গে থাকা যাচ্ছিল না। তিনি একনায়কত্ব চালিয়েছেন। কতদিন তা মেনে নেওয়া সম্ভব! এ ব্যাপারে দেবজিৎবাবু বা জেলা কংগ্রেস সভাপতি মহেন্দ্র কেম্পাইয়ের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করেও তাঁদের পাওয়া যায়নি। বাড়িঘর বা পারিষদদের কেউ তাঁদের অবস্থান বলতে পারলেন না। দু’জনেরই মোবাইল ফোন সকাল থেকে ‘সুইচড অব’। জেলা কংগ্রেসের সদর দফতর রাজীব ভবনও আজ একেবারে ফাঁকা। বিপরীত দৃশ্য বিজেপির জেলা কার্যালয়ে। ঘনঘন বাজি-পটকা পুড়ছে। হই-হল্লা, উচ্ছাস প্রকাশ।

জেলা বিজেপি সভাপতি বিবি হাগজের অবশ্য আজ অফিসে যাননি। তাঁর ঘনিষ্ট মহল জানিয়েছে, তিনি এ ভাবে দলে লোক টানা বা পরিষদ গঠনের বিরোধী। কিন্তু প্রদেশ নেতাদের একাংশ তাঁর সে কথায় গুরুত্ব দেননি। সে জন্য পরিষদ গঠনের তোড়জোড়ের সময়েও তিনি সামিল নেই। তবে বিজেপির আরেক নেতা, প্রাক্তন সিইএম সমরজিৎ হাফলংবার নতুন সভ্যদের দলে স্বাগত জানান। তিনি আশা করছেন, সবাই দলীয় অনুশাসন মেনে চলবেন। সমরজিৎবাবু নিজেও অবশ্য এএসডিসি থেকে কংগ্রেস হয়ে এখন বেশ কয়েক দিন ধরে গেরুয়া দলে থিতু হয়েছেন।

এ দিন যাঁরা দলত্যাগ করলেন, তাঁদের মধ্যে প্রকান্ত ওয়ারিসা ছাড়াও রানু লাংথাসা, লালথানসাঙ্গা মার, এসটি জেম রাংখল ও ফ্লেমিং রূপসী দেবজিতের পরিষদে কার্যবাহী সদস্যের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। এল লিমা কেবং, খবলথাং মার ও ইউহিঙ পামে ছিলেন পরিষদীয় সচিব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE