Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দৌত্য সফল, আরও চাপ বাড়াবে দিল্লি

নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে সেনা অভিযানের পর গোটা বিশ্বকে পাশে পেতে কূটনৈতিক দৌত্য শুরু করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। ফলও মিলেছে দ্রুত। পাকিস্তান ছাড়া আর কোনও দেশ থেকেই এই অভিযানের বিরোধিতা বা সমালোচনাসূচক কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি।

সর্বদল বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন অমিত শাহ এবং রাজনাথ সিংহ। বৃহস্পতিবার  নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

সর্বদল বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন অমিত শাহ এবং রাজনাথ সিংহ। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৪
Share: Save:

নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে সেনা অভিযানের পর গোটা বিশ্বকে পাশে পেতে কূটনৈতিক দৌত্য শুরু করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। ফলও মিলেছে দ্রুত। পাকিস্তান ছাড়া আর কোনও দেশ থেকেই এই অভিযানের বিরোধিতা বা সমালোচনাসূচক কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি।

উরির হামলার পর থেকেই পাকিস্তানকে একঘরে করার প্রয়াস চালাচ্ছে সাউথ ব্লক। পাক সন্ত্রাস বিরোধিতায় সার্ক-ভুক্ত দেশগুলির প্রকাশ্য সমর্থনও আদায় করা গিয়েছে। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, এক দিকে বিশ্ব জুড়ে অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলার পরেই সেনা অভিযান চালানো হয়েছে। অন্য দিকে, অভিযানের পরে যাতে কোনও ভুল বার্তা না যায়, সেই দিকটিও এখন নিশ্চিত করা হচ্ছে। বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর আজ ২২টি রাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের গত রাতের অভিযান এবং তার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন। এর

মধ্যে রয়েছে পি-৫ গোষ্ঠীভুক্ত (রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য) দেশগুলিও।

অভিযানের পর ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুজান এলিজাবেথ রাইস। উরির হামলার নিন্দা করেছেন তিনি। পাশাপাশি, হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গোটা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদীদের শাস্তি দেওয়ার প্রয়াসকে দ্বিগুণ করতে হবে। প্রেসিডেন্ট ওবামার সেটাই প্রতিশ্রুতি।’ এই অঞ্চলে সীমান্তপারের সন্ত্রাসের কথা বিশেষ ভাবে

উল্লেখ করেছেন রাইস। তাঁর আশা, রাষ্ট্রপুঞ্জ-চিহ্নিত সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পাকিস্তান। লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদের এর মতো সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবে তারা। আঞ্চলিক সুস্থিরতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাস বিরোধিতায় নয়াদিল্লির সঙ্গে সহযোগিতা দৃঢ় করার বার্তাও দিয়েছে ওয়াশিংটন।

পাশে দাঁড়িয়েছে ঢাকাও।

শেখ হাসিনা সরকারের বক্তব্য, ‘‘নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার অধিকার রয়েছে ভারতের।’’ বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, কোনও দেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া না আসার নেপথ্যে দিল্লির সুপরিকল্পিত দৌত্য অবশ্যই একটি কারণ। কিন্তু এটাও ঠিক, জঙ্গি-বিরোধী অভিযানের বিরোধিতা করা যে কোনও দেশের পক্ষেই দুষ্কর।

এ ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ হল, গোড়া থেকেই ইসলামাবাদের পাশে থাকা বেজিংয়ের সংযত প্রতিক্রিয়া। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেঙ্গ সুয়াঙ্গ বলেছেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন চ্যানেলে ভারত এবং পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি,

এই দুই দেশ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াবে। মতবিরোধ কমাতে এবং গোটা অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে যৌথ পদক্ষেপ করবে তারা।’’

আগামী মাসে দু’টি বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন রয়েছে গোয়ায়— ‘ব্রিকস’ এবং ‘বিমস্টেক’। দু’টি গোষ্ঠীর কোনওটিতেই পাকিস্তান নেই। কিন্তু রয়েছে বাংলাদেশ, রাশিয়া, মায়ানমার, ভুটান, চিনের মতো দেশ। সূত্রের খবর, সেই সম্মেলনে (বিশেষ করে ‘ব্রিকস’) আঞ্চলিক নিরাপত্তার গুরুত্ব এবং সমন্বয়ের উপরে জোর দেবে ভারত। চিনা নেতৃত্বের উপস্থিতিতেই সুর চড়ানো হবে পাকিস্তানের ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ নিয়ে। ঠিক হয়েছে, চিনের সঙ্গে পার্শ্ব বৈঠকে পাকিস্তান-চিন অর্থনৈতিক করিডর প্রকল্প রূপায়ণ

না করার জন্যই চাপ বাড়াবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বেজিংকে নথি-সহ নয়াদিল্লি বোঝাবে— পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক ভাবে পোক্ত করার মানে হল, সন্ত্রাসবাদকেই পুষ্ট করা। কারণ, পাকিস্তান তার পাওয়া অনুদানের একটা বড় অংশই ভারত-বিরোধী জঙ্গি সংগঠনগুলিকে মজবুত করতে, তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে কাজে লাগায়। অক্টোবরে আরব সাগরের তীর থেকে এই বার্তাই আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরতে চায় নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

diplomatic mission Delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE