কলকাতায় ধরা পড়া মহম্মদ জাহিদ হোসেন জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম)-এর প্রধান ইকবাল ভটকলের ঘনিষ্ঠ অনুচর। বাংলাদেশে আইএম সংগঠনের এক নম্বর লোক সে। বিস্ফোরক ও জাল নোট পাচারে তার বড় ভূমিকা রয়েছে। জাহিদের সম্পর্কে খোঁজখবর করে এই তথ্যই পেয়েছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। বৃহস্পতিবার জাহিদকে ব্যাঙ্কশাল আদালতের চিফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী দীপনারায়ণ পাকড়াশি তার পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানান। বিচারক ১৬ জুলাই পর্যন্ত জাহিদকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, রাষ্ট্রদ্রোহ, নোট জাল করা ও বেআইনি অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এনআইএ-ও তাকে জেরা করতে পারে।
বুধবার রাতে কলকাতা রেল স্টেশন থেকে জাহিদকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। তার কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকার জাল নোট, একে-৪৭ রাইফেলের ৪০টি গুলি, ডিটোনেটরের তার, ব্যাটারি, কিছু সিমকার্ড, মোবাইল এবং বিস্ফোরক মিলেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। আইএম এবং সিমি-র বেশ কিছু সদস্যের ফোন নম্বরও জাহিদের মোবাইলগুলি থেকে মিলেছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। এসটিএফের বক্তব্য, বাংলাদেশে ইকবাল ভটকলের প্রধান ‘লিঙ্কম্যান’ ছিল এই জাহিদ। ইকবালের নির্দেশ মতো ঢাকার মীরপুরে ঘাঁটি গেড়ে অন্তত দশ বছর ধরে সে আইএম-এর কাজকর্ম চালাত। পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ভারতের নানা জায়গায় বিস্ফোরক ও জাল নোট সরবরাহের সে-ই অন্যতম মাথা।
জাহিদ কোন দেশের নাগরিক তা নিয়ে অবশ্য পুলিশের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। গোয়েন্দাদের অনেকের মতে, ৫৭ বছরের জাহিদ আদতে বাংলাদেশি, নদিয়া সীমান্তে চুয়াডাঙ্গায় তার আসল বাড়ি। বাংলার পাশাপাশি উর্দুতেও সমান চোস্ত। আর সেই কারণে জাহিদ সত্যিই কোন দেশের নাগরিক, সে ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত নন গোয়েন্দারা। এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, জাহিদ পাকিস্তানিও হতে পারে, আবার বাংলাদেশের নাগরিকও হতে পারে। তবে সে যে ঘন ঘন বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে গিয়ে ইকবাল ভটকলের সঙ্গে দেখা করত, সে ব্যাপারে নিঃসংশয় হয়েছে এসটিএফ। গোয়েন্দারা বলছেন, ধরা পড়ার কিছু ক্ষণ আগেও সে ফোনে আইএম-প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছে। পাকিস্তানে ভারতীয় জাল নোটের সব চেয়ে বড় কারবারির সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
পুলিশ জেনেছে, নদিয়ার আনোয়ার হোসেন মল্লিকের মাধ্যমে বিস্ফোরক পাঠাত জাহিদ। আনোয়ার কলকাতায় এসে সেই বিস্ফোরক তুলে দিত আইএম-এর তদানীন্তন ‘অপারেশনাল চিফ’ ইয়াসিন ভটকলের হাতে। গোয়েন্দাদের একাংশের ধারণা, এই বিস্ফোরক দিয়েই ২০১০-এর ফেব্রুয়ারিতে পুণের জার্মান বেকারিতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। জাহিদকে জেরা করে বিস্ফোরক পাচারের বিষয়ে নতুন একটি তথ্য জেনেছে পুলিশ, ধরা পড়ার পরে আনোয়ার বা ইয়াসিনও জেরায় যা দিব্যি গোপন করে গিয়েছিল। এর আগে ২০০৯-এ বাংলাদেশ থেকে দু’বার ১৫ কেজি করে বিস্ফোরক আসার খবর স্বীকার করেছিল ওই দুই জন। কিন্তু জাহিদ পুলিশকে জানিয়েছে দু’বার নয়, ২০০৯ সালেই সে আরও এক বার ১৫ কেজি বিস্ফোরক পাঠিয়েছিল আইএম-কে। অর্থাৎ শুধু ২০০৯ সালেই তিন দফায় বাংলাদেশ থেকে বিস্ফোরক এসেছিল ভারতের আইএম-এর কাছে। আর তা পাচার হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ হয়েই।
২০১৩ সালের জুলাইয়ে আনোয়ার হোসেন ও অগস্টে ইয়াসিন ভটকল ধরা পড়ে। জেরায় ইয়াসিন দাবি করে, জাহিদের পাঠানো ওই বিস্ফোরক তারা নষ্ট করে ফেলতে বাধ্য হয়েছিল। সেই সময়ে পুলিশের নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় ওই বিস্ফোরক নদীতে ফেলে দিতে হয়। আনোয়ারও একই কথাই পুলিশকে জানিয়েছে। কিন্তু তৃতীয় বারের বিস্ফোরক চালানের ঘটনাটি কেন তারা পুলিশকে লুকিয়েছিল, সে বিষয়ে এখন খোঁজখবর শুরু করেছে পুলিশ। তা হলে কি তৃতীয় বারের চালানই জার্মান বেকারি বিস্ফোরণে ব্যবহার করা হয়েছে? এই প্রশ্নেরই এখন উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy