Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নবকলেবর হবে পার্শ্বদেবতা, সারথিরও

নবকলেবর কেবল জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও জগন্নাথ তথা কৃষ্ণের অস্ত্রের প্রতীক সুদর্শনেরই হচ্ছে না। রথে তাঁদের পার্শ্বদেবতাগুলিরও এ বার নবকলেবর। নবকলেবর হবে অশ্ব ও সারথিদেরও।

পুরীতে চলছে কাঠ কেটে রথের সারথি বানানোর কাজ। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

পুরীতে চলছে কাঠ কেটে রথের সারথি বানানোর কাজ। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

অলখ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৯
Share: Save:

নবকলেবর কেবল জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও জগন্নাথ তথা কৃষ্ণের অস্ত্রের প্রতীক সুদর্শনেরই হচ্ছে না। রথে তাঁদের পার্শ্বদেবতাগুলিরও এ বার নবকলেবর। নবকলেবর হবে অশ্ব ও সারথিদেরও।

প্রতি বছর নতুন করে রথ বানানো হয় পুরীতে। পার্শ্বদেবতাদের সেই রথে বসিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু উনিশ বছর পরে এ বার নতুন দেহ পাচ্ছে সেই বিগ্রহগুলিও। প্রতিটি রথে থাকে ৯ জন পার্শ্বদেবতা। চারটি করে ঘোড়া এবং সারথি। কলসও নতুন করে তৈরি হচ্ছে এ বার। এই বিগ্রহগুলিও কাঠের হলেও তাদের অবশ্য ব্রহ্মবস্তু নেই।

উৎকল ইউনিভার্সিটি অব কালচারের হেরিটেজ বিভাগের প্রধান অরুণ নায়েক বলেন, ‘‘নবকলেবরের সময় জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও সুদর্শনের মতো প্রধান বিগ্রহগুলির পুরনো মূর্তিগুলি সমাধি দেওয়ার সময় তাঁদের রথের পার্শ্বদেবতা, অশ্ব ও সারথিদেরও সমাধি দেওয়া হয়। আবার তা নতুন করে বানানো হয়। নবকলেবরের পরে জগন্নাথের রথযাত্রার সময়ে এই নতুন বিগ্রহগুলিকে দেখা যায়।’’

জগন্নাথের রথের নাম নন্দিঘোষ। ‘দ্য কাল্ট অব শ্রীজগন্নাথ’ গ্রন্থে কাহ্নুচরণ মিশ্র লিখেছেন, এই রথের সারথি মাতলি। কিন্তু মতান্তরে দারুক নামটিও প্রচলিত। মহাভারতে কৃষ্ণের সারথির নাম অবশ্য দারুকই। মুষল পর্বে অর্জুনের কাছে দারুককেই দূত হিসেবে পাঠিয়েছিলেন কৃষ্ণ। তবে মাতলিও রামায়ণ ও মহাভারতের খুবই বিখ্যাত সারথি। তিনি ইন্দ্রের রথের চালক। বিষ্ণুর সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক রয়েছে। রাবণের সঙ্গে চূড়ান্ত যুদ্ধের সময় রামের রথের সারথি ছিলেন এই মাতলিই।

জগন্নাথের রথের ঘোড়াগুলির নাম নিয়েও মতপার্থক্য রয়েছে। কাহ্নুচরণের মতে, ঘোড়াগুলির নাম শঙ্খিনী, রোষিকা, মোতিকা ও জ্বালিনী। অন্য মতটি হল শঙ্খ, বহ্লক, শ্বেত, হরিদাশ্ব। এর মধ্যে বহ্লক কৃষ্ণের রথেরও অশ্ব। খাণ্ডবদহনের পরে অগ্নি যে রথ কৃষ্ণার্জুনকে উপহার দিয়েছিলেন, তার বিখ্যাত ঘোড়াগুলির নাম শৈব্যা, সুগ্রীব, মেঘপুষ্প ও বহ্লক। মহাভারতের যুদ্ধের সময় এই রথটিরই সারথি ছিলেন কৃষ্ণ। বহ্লকের গায়ের রং সাদা। জগন্নাথের ঘোড়াগুলির সবক’টিই সাদা। পার্থসারথির সেই রথের মতো জগন্নাথের রথও কপিধ্বজ। থাকেন বিষ্ণুভক্ত গড়ুরও।

বলরামের রথের নাম তালধ্বজ। কাহ্নুচরণের মতে বলভদ্রের সারথির নামও তালধ্বজ। কিন্তু প্রচলিত মতটি হল, তাঁরই সারথি মাতলি। কাহ্নুচরণের মতে বলরামের চারটি ঘোড়ার নাম ঋক, সাম, যজু, অথর্ব।

সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন। সারথি দেবদত্ত। প্রচলিত মতে অবশ্য, তাঁর সারথি অর্জুন। জগন্নাথের রথের চাকা ১৬টি। সুভদ্রার রথের ১২টি। বলরামের রথের ১৪টি। নন্দিঘোষ চাকা থেকে ২৩ হাত উঁচু। তালধ্বজ ২২ হাত ও দর্পদলন ২১ হাত লম্বা। সব ক’টি রথেরই দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সমান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE