Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নাগপুরের তরুণকে ঠেকাতে চাপ গডকড়ীর

শিবসেনার সঙ্গে দর কষাকষি যখন সবে শুরু হয়েছে, সেই সময় মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে নতুন মোড় এনে দিল নিতিন গডকড়ী বনাম দেবেন্দ্র ফডণবীসের লড়াই। সঙ্ঘের সঙ্গে কথা বলে মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য দেবেন্দ্রর নাম চূড়ান্তই করে ফেলেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু গত কাল থেকে মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়ে মহারাষ্ট্রে নিজের শক্তি প্রদর্শনে আসরে নেমেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি নিতিন গডকড়ী।

নিতিন গডকড়ী ও দেবেন্দ্র ফডণবীস

নিতিন গডকড়ী ও দেবেন্দ্র ফডণবীস

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪২
Share: Save:

শিবসেনার সঙ্গে দর কষাকষি যখন সবে শুরু হয়েছে, সেই সময় মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে নতুন মোড় এনে দিল নিতিন গডকড়ী বনাম দেবেন্দ্র ফডণবীসের লড়াই।

সঙ্ঘের সঙ্গে কথা বলে মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য দেবেন্দ্রর নাম চূড়ান্তই করে ফেলেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু গত কাল থেকে মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়ে মহারাষ্ট্রে নিজের শক্তি প্রদর্শনে আসরে নেমেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি নিতিন গডকড়ী। দেবেন্দ্র-গডকড়ী, দু’জনেরই রাজনীতির ভিত নাগপুর। সেই নাগপুরেরই জনা চল্লিশ বিধায়কের সমর্থন হাসিল করে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহকে কাল স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন গডকড়ী। আজ আরও এক ধাপ এগিয়ে নাগপুরেরই এক বিধায়ক কৃষ্ণ খোপড়ে নিজের আসনও ছেড়ে দিতে চেয়েছেন গডকড়ীর জন্য। যাতে লোকসভা ছেড়ে গডকড়ী মুখ্যমন্ত্রী হলে ওই বিধানসভা আসন থেকে জিতে আসতে পারেন। যাঁরা এত দিন দেবেন্দ্রকে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য সমর্থন করছিলেন, তাঁদের অনেকে এখন গডকড়ীর পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন। আর গডকড়ী নিজেও ইশারায় জানাচ্ছেন, দল তাঁকে যে দায়িত্ব দেবে, তা মাথা পেতে নেবেন।

ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকে মহারাষ্ট্রে কাদের নিয়ে বিজেপি সরকার গড়বে, যাবতীয় কৌতূহল ছিল তা নিয়েই। দিল্লিতে বিজেপির এক শীর্ষনেতা আজ জানান, দীপাবলির পর আগামী সপ্তাহের গোড়াতেই মহারাষ্ট্রে শপথ নেবে নতুন সরকার। শিবসেনার সঙ্গে আলোচনা চলছে। উদ্ধব ঠাকরে তাঁর দলের যে দুই নেতাকে দিল্লিতে পাঠিয়েছিলেন, তাঁরা কাল রাতে বিজেপির ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে একপ্রস্ত আলোচনা করেছেন। এ সপ্তাহের মধ্যে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে উদ্ধব ঠাকরের। রবিবার এনডিএ শরিকদের আমন্ত্রণও জানাবেন মোদী। কিন্তু আগামী কয়েক দিনে শিবসেনার সঙ্গে বোঝাপড়া চূড়ান্ত না হলে একার জোরে বিজেপি সরকার গড়ে ফেলবে। বিজেপির এক নেতা মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের সঙ্গে দেখাও করে এসেছেন। কিন্তু শিবসেনার সঙ্গে বোঝাপড়ার থেকেও বড় বিতর্ক দানা বেঁধেছে বিজেপির অন্দরেই। মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন?

বিজেপির এক নেতা আজ বলেন, দেবেন্দ্রর নাম যে-হেতু ইতিমধ্যেই স্থির হয়ে আছে, তাই শেষ মুহূর্তে নাম বদলের সম্ভাবনা কম। এর স্পষ্ট চারটি কারণও উল্লেখ করেন ওই নেতা। • গডকড়ী-দেবেন্দ্র, নাগপুরের এই দুই নেতাই সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ। এটাও ঠিক যে, গডকড়ী সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের স্নেহধন্য। ভাগবতই তাঁকে মহারাষ্ট্র থেকে বের করে এনে বিজেপির সভাপতি করেছিলেন। কিন্তু সঙ্ঘের সম্মতি রয়েছে দেবেন্দ্রর পিছনেই। এবং ভাগবত এখনও পর্যন্ত গডকড়ীর নাম বিবেচনার কোনও প্রস্তাব রাখেননি বলে বিজেপির দাবি। • নরেন্দ্র মোদী রাজ্যে-রাজ্যে তরুণদেরই বেশি সুযোগ দিতে চাইছেন। হরিয়ানাতেও যে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ মনোহরলাল খাট্টারকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে, তাঁর সঙ্গে মোদীর সম্পর্ক ভাল। প্রথম বার বিধায়ক হয়েই মুখ্যমন্ত্রী হবেন তিনি। দেবেন্দ্রর ভাগ্যেও শিকে ছেঁড়ার সম্ভাবনা বেশি সে কারণে। • মোদী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিতিন গডকড়ীর মতো প্রভাবশালী ও ওজনদার কোনও নেতাকে চাইবেন না। তাতে মহারাষ্ট্রে তাঁকে ঘিরে আর একটি ক্ষমতাকেন্দ্র গড়ে ওঠার সুযোগ থাকবে। বরং এমন কোনও ব্যক্তিকেই মোদী মুখ্যমন্ত্রী করতে চাইবেন, যাঁর উপরে তাঁর নিয়ন্ত্রণ থাকবে। নিয়ন্ত্রণে থাকবে বাণিজ্যনগরী মুম্বই ও গোটা মহারাষ্ট্র। সেই অঙ্কে পিছিয়ে থাকছেন গডকড়ী। • দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে বিজেপি সভাপতির পদ থেকে সরে যেতে হয়েছিল গডকড়ীকে। তার চেয়ে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত নতুন কোনও মুখই পছন্দ করছেন মোদী। দেবেন্দ্র তাঁর পছন্দ সে কারণেও।

কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে মোদীর অধীনে কাজ করার থেকে মহারাষ্ট্রের বিশাল সাম্রাজ্যের মালিক হওয়ার সুযোগ ঢের বেশি লোভনীয় গডকড়ীর কাছে। আপাতত দ্বিমুখী কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন তিনি। • ঘনিষ্ঠ নেতাদের দিয়ে নিজের নাম ভাসিয়ে দিচ্ছেন তিনি। ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, দল দায়িত্ব দিলে তিনি তা নিতে প্রস্তুত। • একান্তই সঙ্ঘ ও দল যদি তাঁকে সেই সুযোগ না দেয়, সে ক্ষেত্রে গডকড়ীর দ্বিতীয় লক্ষ্য, দেবেন্দ্রকে ঠেকানো। গডকড়ী-ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানাচ্ছেন, নিজে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ষোলো আনা বাসনা রয়েছে গডকড়ীর। সেই সঙ্গে তাঁর এই আশঙ্কাও রয়েছে যে, নাগপুরেরই দেবেন্দ্র মুখ্যমন্ত্রী হলে নিজের রাজনীতি শেষ হয়ে যেতে পারে। যে কারণে দু’দিন আগে অমিত শাহ তাঁর বাড়িতে প্রাতরাশ বৈঠক করতে এলে গডকড়ী রাজ্যের প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি সুধীর মুঙ্গেতিওয়ারকে মুখ্যমন্ত্রী করার প্রস্তাব দেন। গত কাল এই সুধীরই সবার আগে গডকড়ীকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি তোলেন। সঙ্ঘের নেতাদের গডকড়ী বোঝাচ্ছেন, মাত্র ৪৪ বছর বয়সি দেবেন্দ্রর সরকার চালানোর কোনও অভিজ্ঞতা নেই। সুধীর বয়স ও অভিজ্ঞতায় প্রবীণ। অতীতে মহারাষ্ট্রে মন্ত্রীও ছিলেন।

জাতপাতের সমীকরণটিও মাথায় রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রত্যাশী নেতারা। গডকড়ী ও দেবেন্দ্র উভয়েই ব্রাহ্মণ নেতা। অ-ব্রাহ্মণ অনেক নেতা দেবেন্দ্রর নামে আপত্তি জানাচ্ছেন। মহারাষ্ট্রে বিজেপির প্রবীণ নেতা ও প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা একনাথ খাড়সেও সুধীরের পাশে রয়েছেন। আর এক বিজেপি নেতা বিনোদ তাওড়েও বলেন, “গোপীনাথ মুন্ডের অকালপ্রয়াণের পর নিতিন গডকড়ীই সব থেকে বড় নেতা। ফলে তাঁকে ঘিরে তো উন্মাদনা থাকবেই।”

বিজেপির এক নেতার কথায়, আসলে একনাথ খাড়সে ও বিনোদ তাওড়েরাও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। নিতিনের দেবেন্দ্র-বিরোধী অভিযানে তাই তাঁরাও শরিক হয়েছেন, যাতে দেবেন্দ্র ছিটকে গেলে নিজে প্রথম হতে পারেন দৌড়ে। গোটা বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন খোদ দেবেন্দ্র। সকলেই নিজের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার অপেক্ষায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nitin gadkari devendra fadnavis maharashtra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE