কোপে ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’।
কালো উর্দি, হাতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। পোশাকি নাম এনএসজি। ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড। বিশেষ এই বাহিনী গড়াই হয়েছে সন্ত্রাসবাদী হামলা মোকাবিলার জন্য। অথচ, তাদেরই একটা বড় অংশকে রাজনীতিকদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে ঘুরতে হচ্ছে। কার্যত নেতাদের মর্যাদা বা গুরুত্বের মাপকাঠি যেন! বিশেষ করে গো-বলয়ের রাজনীতিতে। এই ব্যবস্থা পাল্টাতে ইউপিএ সরকার কিছুটা তৎপর হয়েছিল। এ বার নরেন্দ্র মোদীর সরকারও এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিয়েছে। রাজনীতিকদের নিরাপত্তায় এনএসজি রাখা দরকার কি না, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে এক প্রস্ত বৈঠক করেছেন এনএসজি বাহিনীর ডিজি জয়ন্তনারায়ণ চৌধুরী।
বর্তমানে গোটা দেশে ১৫ জন রাজনীতিককে জেড প্লাস নিরাপত্তা দিয়ে থাকে এনএসজি। এক-এক জনের নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকে ২০-২২ জন কম্যান্ডো। ওই নেতাদের উপর হামলার আশঙ্কা আছে কি না, নতুন করে তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি জয়ন্তনারায়ণ চৌধুরী জানিয়ে দিয়েছেন, “এখন আমরা রাজনীতিকদের নিরাপত্তা দিচ্ছি বটে, কিন্তু আমাদের যা শক্তি তাতে ভবিষ্যতে আর কোনও নেতার সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে আমরা অসমর্থ।” তাঁর মতে, এনএসজি-র যেটা মূল শক্তি, সেই সন্ত্রাস মোকাবিলার কাজে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর উপর বরং জোর দেওয়া উচিত। নিরাপত্তা ছাঁটাইয়ের এই তৎপরতায় এখন অশনি সঙ্কেত দেখছেন রাজনীতিকরা।
সন্ত্রাসবাদী হামলা বা বিমান অপহরণের মতো ঘটনা রুখতে ১৯৮৪ সালে এনএসজি বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ওই বাহিনীর একটি বড় অংশ মোতায়েন করা হয় রাজনীতিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কাজে। ২০০৮ সালে মুম্বই হামলার মোকাবিলায় এনসিজি কম্যান্ডোদের ভূমিকা দেখার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মধ্যে থেকেই দাবি ওঠে নেতাদের সুরক্ষায় মোতায়েন রেখে কার্যত কর্মদক্ষতা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে ওই বাহিনীর। তাই অবিলম্বে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে কম্যান্ডোদের সরিয়ে আনা হোক। পরিবর্তে তাদের আরও বেশি করে অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার ও সন্ত্রাস মোকাবিলার মতো কাজে ব্যবহার করা হোক। সেই উদ্দেশ্যেই বছর দু’য়েক আগে প্রায় ৯০০ কম্যান্ডোকে নেতাদের সুরক্ষা থেকে সরিয়ে দেয় কেন্দ্র। এ বার ফের এক বার গোটা বিষয়টি পর্যালোচনা শুরু করেছে মন্ত্রক।
বর্তমানে এনএসজি গোটা দেশে যে সব নেতাকে জেড প্লাস নিরাপত্তা দিয়ে থাকে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, অসম, ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। আছেন বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী বা মুলায়ম সিংহ যাদবের মতো বর্ষীয়ান নেতারাও। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, দল নির্বিশেষে নেতাদের পক্ষ থেকে প্রায় নিয়মিত ভাবে অনুরোধ আসতে থাকে যে তাঁদের উপর হামলার আশঙ্কা রয়েছে। তাই তাঁদের নিরাপত্তার জন্য এনএসজি কম্যান্ডো মোতায়েন করা হোক। এই প্রবণতা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু সমস্যা হল দেশে এত কম্যান্ডো নেই। আর এনসিজি-র যদি শক্তি বাড়াতে হয়, সে ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির ছাড়পত্র লাগবে। কিন্তু হাত উপুড় করতে রাজি নন তিনি। তা ছাড়া কোনও নেতাকে নিরাপত্তা দেওয়াটা ওই বাহিনীর কাজও নয়।
তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরেই ওই প্রথা ভাঙতে তৎপর রয়েছে। ওই অংশের বক্তব্য, নেতাদের যদি নিরাপত্তা লাগে, তা হলে কম্যান্ডোর বদলে সিআরপিএফ, আইটিবিপি বা সিআইএসএফের মতো অন্য আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ানদের মোতায়েন করা হোক। সম্প্রতি এ বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রকের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজনাথ। তার পরেই ঠিক হয়েছে, নতুন কোনও নেতাকে এই মুহূর্তে এনএসজি সুরক্ষা দেওয়া হবে না। বরং যাঁদের দেওয়া হয়েছে তাঁদেরও কম্যান্ডোর প্রয়োজন রয়েছে কি না তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে। জয়ন্তনারায়ণের কথায়, “ভিআইপি-দের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের কাজ নয়। আমরা এই কাজটি করছি, কারণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আমাদের তা করতে বলেছে। আমরা একটি বিশেষ বাহিনী। আর সেটাই আমাদের শক্তি।”
কিন্তু চাইলেই যে নেতাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে কম্যান্ডোদের সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে, এমনটাও মনে করছে না কেন্দ্র। লালকৃষ্ণ আডবাণী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর কাছে চিঠি লিখে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া তাঁর নিরাপত্তার জন্য দেওয়া কম্যান্ডো প্রত্যাহার করে নেওয়ার আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদন মঞ্জুরও করেন আডবাণী। কিন্তু সরকার যে আবেদন মেনে নেবেন সেটা সম্ভবত বুঝতে পারেননি দেবগৌড়া। ফলে দিন কয়েক পরেই আবার নিরাপত্তা চেয়ে দরবার করেন আডবাণীর কাছে। মঞ্জুর হয় সেই আবেদনও। ফলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এ বিষয়ে কোনও কড়া অবস্থান নিলেও রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় বাস্তবে সেই সিদ্ধান্ত আদৌও রূপায়ণ করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে মন্ত্রকেই। তবে আশাবাদী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “একটা কোনও পর্যায়ে তো শুরু করতে হবে। নয়তো এই প্রবণতা বাড়তেই থাকবে। কোনও দিনও কমবে না। আর সেটা যত দ্রুত শুরু হয় ততই মঙ্গল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy