সতেরো বছর পরে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী পা রাখতে চলেছেন কাঠমান্ডুতে। বহুপ্রতীক্ষিত এই নেপালযাত্রাকে নিছকই সৌজন্য সফরের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখতে চাইছেন না নরেন্দ্র মোদী। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, এই সফরকে কাজে লাগিয়ে নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে চান মোদী। আবার বেজিং-এর সঙ্গেও শঠে শাঠ্যং কূটনীতির কৌশল নিচ্ছেন তিনি। নেপালের সঙ্গে রেল যোগাযোগ তৈরি করে ধীরে ধীরে নেপাল-চিন সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে যেতে চায় নয়াদিল্লি। আসন্ন সফরে এই বিষয়ে কিছু ঘোষণা হতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে।
কূটনীতিকদের মতে, মনমোহন সরকারের দীর্ঘ দশ বছরের জমানায় নেপাল নিয়ে যথেষ্ট উদাসীন থেকেছে নয়াদিল্লি। সেই সুযোগে নেপালের সঙ্গে কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে চিন। সম্প্রতি বেজিং ঘোষণা করেছে, ২০২০ সালের মধ্যে অরুণাচলের সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ তৈরি করবে তারা। চিন তার নিজের সীমানার মধ্যে রেল যোগাযোগ তৈরি করলে সরকারি ভাবে কিছু বলার নেই ভারতের। কিন্তু অরুণাচলের সীমান্ত পর্যন্ত চিনের রেলপথ নিঃসন্দেহে সাউথ ব্লকের অস্বস্তির কারণ। তাই পাল্টা চাপের কৌশল নিতে চাইছে মোদী সরকার।
আজ কাঠমান্ডু পৌঁছে গিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আগামী ৩ তারিখ দু’দিনের সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সফরে দু’দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। ভারত এবং নেপালের মধ্যে যোগবানি-বিরাটনগর রেললাইন পাতার কাজ অর্ধেক হয়ে পড়ে রয়েছে। ওই প্রকল্পে নেপালের দিকের কাজ মাত্র ২০ শতাংশ শেষ হয়েছে। তাতে ভারতীয় সহায়তার প্রয়োজন। পাশাপাশি আরও একটি প্রকল্পের কাজও (জয়নগর-বিজালপুরা-বর্দিবাস) অর্ধেক হয়ে পড়ে রয়েছে।
এই প্রকল্পগুলি যাতে অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত শেষ করা হয়, সে জন্য মোদীর সফরে কিছু নির্দিষ্ট ঘোষণা হবে বলেই কূটনৈতিক সূত্রে খবর। নেপালে রেলপথ পাতার মাধ্যমে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে ভারত। প্রথমত, এর ফলে নিঃসন্দেহে ভারত-নেপাল বাণিজ্য বাড়বে। চাঙ্গা হবে পর্যটনও। আবার ধাপে ধাপে চিন সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ তৈরি করলে চাপ দেওয়া যাবে বেজিংকেও। ওই প্রকল্পে ভারতীয় কর্মীদের মধ্যে থাকবে নিরাপত্তাবাহিনীও। তৈরি হবে উড়ালপুল, রাস্তা, স্টেশন-সহ নানা পরিকাঠামো। এই পরিকাঠামোর পুরোটাই থাকবে ভারতের নিয়ন্ত্রণে।
রাজনৈতিক শিবিরে একটি প্রশ্ন গত এক মাস ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটি হল, বিজেপি-র সঙ্গে নেপালের হিন্দু রাজতন্ত্রের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ ছিল। সে দেশের নতুন সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে মোদী সরকার কী অবস্থান নেয় তা নিয়ে সংশয়ে ছিল নেপাল। কিন্তু কূটনৈতিক সূত্রে খবর, নয়াদিল্লির তরফ থেকে নেপালের সাংবিধানিক শর্ত এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে কোনওরকম চাপই থাকবে না। ভারত অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নাক গলাতে যাবে না।
বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা জানান, মোদী ভারত-নেপাল সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উন্নয়নকেই হাতিয়ার করতে চান। অতীতে আটকে থাকা তাঁর উদ্দেশ্য নয়। তাঁর অগ্রাধিকার দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জলবিদ্যুতের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো।
গত দু’দশক ধরে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে দু’দেশের মধ্যে কোনও আস্থাবাচক চুক্তি হয়নি। ১৯৯৬ সালে ভারত এবং নেপাল ‘পঞ্চেশ্বর মাল্টিপারপাস প্রজেক্ট’-এ সই করে। এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করা হয়নি। আসন্ন মোদী সফরে এই বিষয়টিতেও জোর দেওয়া হবে বলেই জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy