Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নিরাপত্তা পেয়ে নিজের ভোট নিজেই দিলেন মানুষ

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে ভোটের ছবিটা কেমন শান্তিপূর্ণ হতে পারে, বিহারে প্রথম দফার ভোট তা প্রমাণ করে দিল। ক’দিন আগেই পশ্চিমবঙ্গে পুরনিগমের ভোটে ব্যাপক হাঙ্গামা, অশান্তি দেখেছে মানুষএকটা সময় পর্যন্ত বিহার বা উত্তরপ্রদেশের ভোটেও হাঙ্গামায় হতাহত কত, সেটাই শিরোনামে উঠে আসত।

মেয়ে কোলেই ভোটের লাইনে। সোমবার বিহারের সমস্তিপুরের বনবিরা গ্রামে। ছবি: এএফপি

মেয়ে কোলেই ভোটের লাইনে। সোমবার বিহারের সমস্তিপুরের বনবিরা গ্রামে। ছবি: এএফপি

দিবাকর রায়
পটনা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:০১
Share: Save:

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে ভোটের ছবিটা কেমন শান্তিপূর্ণ হতে পারে, বিহারে প্রথম দফার ভোট তা প্রমাণ করে দিল।

ক’দিন আগেই পশ্চিমবঙ্গে পুরনিগমের ভোটে ব্যাপক হাঙ্গামা, অশান্তি দেখেছে মানুষএকটা সময় পর্যন্ত বিহার বা উত্তরপ্রদেশের ভোটেও হাঙ্গামায় হতাহত কত, সেটাই শিরোনামে উঠে আসত। কিন্তু বিহারে প্রতিটি বুথের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে নির্বাচন কমিশন আজ দেখিয়ে দিল, নিরাপত্তার ভরসা পেলে মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতেই পছন্দ করেন। নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে আজ বিহারের দশ জেলার ৪৯টি বিধানসভা আসনে ভোট হল। কমিশনের এক সূত্রের বক্তব্য, প্রথম দফার ভোটে মাত্র ৪৯টি কেন্দ্রের জন্য ১,৫০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। তার সুফল মিলল হাতে হাতে। বড় কোনও অশান্তির খবর নেই। গত নির্বাচনের তুলনায় ভোটদানের হারও বেড়ে গিয়েছে ৬.২%। অথচ বিহারের যে এলাকায় আজ ভোট হল, তার ১৩টি কেন্দ্রই মাওবাদী প্রভাবিত। তবু বিহার-ভোটের আগের সব রেকর্ড ভেঙে ভোটদানের গড় হার প্রায় ৬০ শতাংশ ছুঁইছুঁই। ৫৯.২ শতাংশ। জাতীয় ভোটদান হারের থেকে এই হিসেব কম হলেও বিহারের নিরিখে তা বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ।


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

মাওবাদী-প্রভাবিত এলাকায় ভোটদানের হার তুলনায় কিছুটা কম হলেও অন্যত্র তা ৭০% পার হয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও এই হার ৮০%-ও ছুঁয়েছে। সামান্য দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া সামগ্রিক ভোটপর্ব অবাধ ও শান্তিপূর্ণ। শাসক ও বিরোধী পক্ষ, উভয়েই খুশি। সবটাই সম্ভব হয়েছে নির্বাচনের দু’সপ্তাহ আগে থেকে এলাকায় এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারির ফলে। সুতরাং আজকের ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ নিঃসন্দেহে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী ও তাঁর নিরাপত্তা বাহিনী। ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ভোটারের জন্য কমিশনের বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ৫৫ হাজার কেন্দ্রীয় জওয়ান।

বুথের ভিতরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব একশো শতাংশ কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে এর আগে কোথাও তারা ভোট করেনি বলে কমিশন সূত্রে দাবি করা হয়েছে। শুধু বুথের ভিতরে নয়, বাইরেও ভোটারদের নিরাপত্তা এবং ভোটের আগে থেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে তত্পর ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। ক’দিন আগেই পশ্চিমবঙ্গের তিন পুরনিগমের ভোটে নিষ্ক্রিয় পুলিশের সামনে ব্যাপক হাঙ্গামা হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ভোটার ও সাংবাদিকরা। কিন্তু পুনর্নিবাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বুথের বাইরের সেই হিংসাকে গণ্যই করেননি রাজ্যের অস্থায়ী নির্বাচন কমিশনার আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে বিতর্ক কম হচ্ছে না। আলাপনবাবুর ওই ব্যাখ্যা যে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান নয়, বিহারে প্রথম দফার ভোটেই তা বুঝিয়ে দিলেন নসীম জৈদী। কমিশন স্পষ্ট করে দিয়েছে, শুধু বুথ বা বুথ চত্বরই নয়, ভোটদানের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করার দায়িত্বও নির্বাচন কমিশনেরই।

ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই জৈদী বিহারের ভোটকে ‘মাদার অব অল ইলেকশনস’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, কোনও বুথেই রাজ্য পুলিশ থাকবে না। গোটা নির্বাচনটাই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে করানো হবে। বুথের ভিতরে কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটারদের নিয়ন্ত্রণ করবে। রাজ্য পুলিশ বাইরে থাকবে। প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে। বাইরেও থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী।

আজ সকাল থেকেই ১০টি জেলার দখল কার্যত কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে চলে যায়। ব্যবস্থা ছিল আকাশপথে নজরদারিরও। ৫টি হেলিকপ্টার ছাড়াও ৩টি ‘আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল্স্’ অর্থাত্ ড্রোন। নির্বাচনী নিরাপত্তায় কমিশন এই প্রথম ড্রোনের ব্যবহার করল। হেলিকপ্টার এবং ড্রোন ব্যবহার করে জেলার নির্দিষ্ট বুথের ছবি পটনা থেকেই পর্যালোচনা করা হচ্ছিল। সেখানে নির্বাচন কমিশনের কর্তারা হাজির ছিলেন। বুথের ভিতরের ছবিও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা নিয়মিত দেখছিলেন। এরই মধ্যে কন্ট্রোল রুমে খবর আসে, জামুইয়ের চকাই কেন্দ্রের লোক জনশক্তি পার্টির প্রার্থী বিজয় সিংহকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। দ্রুত বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভাগলপুরের নাথনগরের দু’টি বুথে ছাপ্পা দেওয়ার অভিযোগ ওঠা মাত্রই ফ্লাইং স্কোয়াড পৌঁছে যায়। জিপিএস লাগানো গাড়িতে করে বাহিনী দিনভর চক্কর কেটেছে। কোথাও সমস্যা হলেই বাহিনী পৌঁছেছে।

কমিশনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ভাগলপুরের নাথনগরের অজমেরি গ্রামে পুরুষরা ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনী গ্রামে যেতেই মহিলারা ভোট দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তাঁরা ভোট দেওয়ার পরে ভোট দিতে আসেন গ্রামের পুরুষরাও। দুপুর দু’টো পর্যন্ত ওই গ্রামে ৮০% ভোট পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমাদের সাফল্যের মূল কারণ দু’টি। এক, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঠিকঠাক ব্যবহার। দুই, প্রযুক্তির ব্যবহার। বিহারের মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় রক্তহীন ভোট করানো সাফল্য তো বটেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE