Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাকিস্তানে জামিন লকভি-র, ক্ষুব্ধ দিল্লি

পাকিস্তান আছে পাকিস্তানেই। পেশোয়ারের স্কুলে তালিবানি হামলার পর গত কালই জঙ্গি দমনে জাতীয় নীতি প্রণয়নের কথা ঘোষণা করেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। চব্বিশ ঘণ্টা না পেরোতেই মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত ধৃত জাকিউর রহমান লকভিকে জামিন দিয়ে দিল সে দেশের আদালত। সুতরাং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই চালানোর যে ডাক নওয়াজ দিয়েছেন, সেটা আদৌ কতটা আন্তরিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক মহলে।

জাকিউর রহমান লকভি

জাকিউর রহমান লকভি

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১২
Share: Save:

পাকিস্তান আছে পাকিস্তানেই।

পেশোয়ারের স্কুলে তালিবানি হামলার পর গত কালই জঙ্গি দমনে জাতীয় নীতি প্রণয়নের কথা ঘোষণা করেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। চব্বিশ ঘণ্টা না পেরোতেই মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত ধৃত জাকিউর রহমান লকভিকে জামিন দিয়ে দিল সে দেশের আদালত। সুতরাং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই চালানোর যে ডাক নওয়াজ দিয়েছেন, সেটা আদৌ কতটা আন্তরিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক মহলে। আর ক্ষুব্ধ নয়াদিল্লি মনে করছে, এই ঘটনায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতির সম্ভাবনা ফের বিশ বাঁও জলে চলে গেল।

পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজফ্ফররাবাদ থেকে ধৃত লকভি ২০০৯ সাল থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দি ছিল। মুম্বই হামলায় অভিযুক্ত আরও ছয় জঙ্গি ওই একই জেলে আছে। লকভির আইনজীবী রাজা রিজওয়ান আব্বাসি আজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই বলেই বিচারক জামিন দিয়েছেন। সরকারি কৌঁসুলি চৌধুরি আজহার অবশ্য দাবি করছেন, “এই সিদ্ধান্ত একেবারেই আশা করিনি। আরও বেশি সাক্ষী পেশ করা দরকার ছিল। আমরা এ বিষয়ে আদালতের বিস্তারিত নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলাম।” তবে লকভি জামিন পাওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলের কাছে যে আবার একটা নেতিবাচক বার্তা যাবে, সেটা বুঝতে পারছে পাক সরকার। সে কারণে তারা আজ দাবি করছে, ‘টেকনিকাল ভুল’-এর জন্যই জামিন পেয়েছে লকভি। সরকার ওই জামিনের বিরোধিতা করবে।

ভারত অবশ্য পাকিস্তানের আশ্বাসে ভরসা করতে পারছে না। জামিনের বিরোধিতা করে কবে আবেদন করা হবে, সেই আবেদন গ্রাহ্য হবে কি না কোনও কিছুই নিশ্চিত নয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এ দিন বলেন, “ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে সমস্ত ধরনের প্রমাণ দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও যে ভাবে লকভিকে জামিন দেওয়া হল, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। অবিলম্বে লকভি ও হাফিজ সইদের মতো জঙ্গিদের ভারতের হাতে তুলে দিক পাকিস্তান।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, পাক সরকারের একটি অংশ বহু দিন ধরেই লকভির জামিনের জন্য তদ্বির করে আসছিল। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “দীর্ঘ সময় ধরে শুনানি বন্ধ ছিল। আইনজীবীদের নিরাপত্তার অজুহাতে মামলা ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছিল। সবটাই পরিকল্পনামাফিক হয়েছে।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, লকভির বিরুদ্ধে প্রমাণ না থাকার দাবি ভিত্তিহীন। কারণ পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি লকভির বিরুদ্ধে যে চার্জশিট দেয়, তাতে মুম্বই হামলায় তাকেই অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ২৬/১১ নিয়ে ভারত যে ডসিয়ার পাকিস্তানকে দিয়েছে, তাতে আজমল কাসভ জানিয়েছে, তাকে নিয়োগ করেছিল লকভি। এমনকী মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী ডেভিড হেডলির সঙ্গে লকভির কথাবার্তার একাধিক প্রমাণও দেওয়া হয়েছে ওই নথিতে।

মুম্বই হামলার পরে লকভিকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। তা সত্ত্বেও কী ভাবে তার জামিন হল, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিদেশ মন্ত্রকও। মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন বলেন, “এটা মেনে নেওয়া যায় না। এর ফলে জঙ্গি তৎপরতা নতুন করে বৃদ্ধি পাবে।” গত ছ’বছর ধরে সাউথ ব্লক বলে আসছে, মুম্বই হামলার অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করুক ইসলামাবাদ। কিন্তু পূর্বতন পাক সরকার সে ব্যাপারে সদর্থক পদক্ষেপ করেনি বলেই অভিযোগ। নওয়াজ ক্ষমতায় আসার পরে পরেও ভারত তার দাবি বজায় রেখেছিল। কিন্তু আজকের ঘটনাটি পাকিস্তান যতই ‘টেকনিকাল ভুল’ বলে চালাতে চাক, নয়াদিল্লি তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না।

আগামী এক মাসের মধ্যে পাক জঙ্গিরা এ দেশে ফের হামলা চালাতে পারে বলে কালই ভারতকে সতর্ক করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। এ রকম সময়ে লকভির মুক্তি ভারত-বিরোধী জঙ্গি কার্যকলাপে নতুন করে গতি আনবে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, বন্দি অবস্থাতেও জঙ্গি কার্যকলাপে তৎপর ছিল লকভি। জেল থেকেই মোবাইল ফোনে লস্কর-ই-তইবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত সে। মার্কিন গোয়েন্দাদের মতে, জেল থেকেই লস্করের জন্য প্রায় ২৫ হাজার ডলার অনুদান হাওয়ালার মাধ্যমে তুলেছিল লকভি। মার্কিন গোয়েন্দারা ২০১২ সালে তৎকালীন পাক সেনাপ্রধান আশফাক কিয়ানিকে অনুরোধ করেছিলেন, যাতে লকভিকে মোবাইল ব্যবহার করতে না দেওয়া হয়। কিন্তু আইএসআইয়ের চাপে পড়ে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন কিয়ানি। লকভির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন জামাত-উদ-দুয়ার প্রধান, ২৬/১১-র আর এক মাথা হাফিজ সইদও। এই হাফিজই আগের দিন দাবি করেছে, পেশোয়ারের স্কুলে হামলার পিছনে ভারতের হাত আছে।

সুতরাং পাক প্রশাসন যাই বলুক, বাস্তবে লকভিকে আদৌ আর ধরা যাবে কিনা তা নিয়েই সংশয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “জামিন পেলেই জঙ্গিরা লুকিয়ে পড়ে। তাদের নতুন করে ধরা কার্যত দুঃসাধ্য। আর বিশেষ করে যেখানে ওই জঙ্গির পিছনে পাক প্রশাসন, আইএসআই ও মোল্লাতন্ত্রের সমর্থন রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE