আকাশপথে অসমের গোয়ালপাড়া, ধুবুরি, কামরূপ এবং মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের বন্যা পরিস্থিতি দেখলেন উত্তর-পূর্ব ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। সেই সঙ্গে বন্যা-দুর্গতদের জন্য সব রকম কেন্দ্রীয় সাহায্যের আশ্বাসও দিলেন তিনি। রিজিজু জানিয়েছেন, অসম-মেঘালয়ের বন্যা পরিস্থিতি দেখতে আগামী ১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আসছেন। গত কালই বন্যায় মৃতদের নিকটাত্মীয়কে ২ লক্ষ টাকা করে কেন্দ্রীয় সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ দিন রিজিজু আশ্বাস দেন, বন্যা নিয়ে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করবে কেন্দ্র ও রাজ্য। দুই রাজ্যের চাহিদা মতো অর্থ ও অন্য সাহায্যের ব্যবস্থাও করা হবে।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ইতিমধ্যেই ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্রের কাছে হাজার কোটি টাকা চেয়েছেন। কিন্তু গত কাল বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পরে, কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল অভিযোগ করেন, “রাজ্যের হাতে থাকা বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলের ৩৪৬ কোটি টাকা অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে। রাজ্য কেন্দ্রের কাছে নিয়ম মতো আবেদন জানালে হাজার কোটি কেন, তারও বেশি দেওয়া হবে।” আজ এই অভিযোগের জবাব দিয়েছেন গগৈও। তাঁর বক্তব্য, “কেন্দ্র সত্যি হাজার কোটি দিলে আমি সোনোয়ালকে সংবর্ধনা দেব।” অসমের বন্যাকে কাশ্মীরের মতো ‘জাতীয় বিপর্যয়’-এর তকমা না দেওয়া ও নরেন্দ্র মোদীর অসমে না আসা নিয়েও বিস্তর জলঘোলা হয়েছে।
বন্যা নিয়ে এই ধরনের রাজনৈতিক চাপান-উতোরের নিন্দা করে কিরেণ আজ বলেন, “এখন দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর সময়। অসম-মেঘালয়ের বন্যাকে কখনও কাশ্মীরের তুলনায় খাটো করে দেখা হচ্ছে না। ‘জাতীয়’ তকমা লাগালেই কোনও ঘটনার গুরুত্ব বাড়ে না। দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন। বিহার ও ওড়িশা থেকে অতিরিক্ত এনডিআরএফ বাহিনী অসম ও মেঘালয়ে পাঠানো হয়েছে। মোদীজির আমেরিকা সফর পূর্ব নির্ধারিত। তাই তাঁকে যেতে হয়েছে। ১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে এখানে আসবেন। দুই রাজ্যের কত ক্ষতি হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন দেওয়ার জন্য কী লাগবে সে সম্পর্কে বিশদ খবর নিয়ে রাজ্য সরকার ও প্রশাসনকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কেন্দ্র সাধ্যমতো সাহায্য করবে।” রিজিজু আরও জানান, অসমে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য গড়া ব্রহ্মপুত্র বোর্ড কতটা কার্যকর হয়েছে, তা নিয়ে দিল্লিতে জল সম্পদমন্ত্রী উমা ভারতী বৈঠক করেছেন।
মেঘালয় সরকারের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বন্যায় অন্তত ১১৭০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মৃতের সংখ্যা নিয়ে প্রশাসন এখনও নিশ্চিত নয়। তবে প্রাথমিক ভাবে অসমে ৩৯টি ও গারো পাহাড় থেকে ৪৬টি দেহ উদ্ধারের খবর এসেছে। গারো পাহাড়ের বহু এলাকা এখনও হয় কাদার তলায়, নয়তো ধসে বিচ্ছিন্ন। মেঘালয়ের বিপর্যয় মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা উপমুখ্যমন্ত্রী আর সি লালু জানান, ২১-২২ সেপ্টেম্বরের বৃষ্টি ও ধসে রাজ্যের ১১টি জেলাই ক্ষতিগ্রস্ত। তবে গারো পাহাড়ের পরিস্থিতি সব চেয়ে শোচনীয়। সেখানে টেলি যোগাযোগ, বিদ্যুৎ সংযোগ, পানীয় জলের লাইন, সড়ক যোগাযোগ সব কিছু তছনছ হয়ে গিয়েছে। নষ্ট হয়েছে ১৩,৬৬৭ হেক্টর কৃষি জমি। এনডিআরএফের বক্তব্য, গারো পাহাড়ে সবুজ ধ্বংসের জেরেই হড়পা বান এই আকার নিয়েছে।
ধেমাজি ও নামনি অসমের বন্যা কবলিত গ্রামে না গিয়ে, ধেমাজি জেলার এক উৎসবে নৃত্যরত জল সম্পদমন্ত্রী রাজীবলোচন পেগু ও পরিষদীয় সচিব সুমিত্রা পাতিরের ছবি প্রকাশ হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। সমালোচনার মুখে তিনি পেগুকে বন্যা কবলিত গ্রামে গিয়ে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy