প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন মিডিয়া উপদেষ্টা সঞ্জয় বারুর বইয়ের তথ্যকে খারিজ করতে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন মনমোহন-কন্যা উপেন্দ্র সিংহ। বারুর বইয়ের সমালোচনা করছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। বইটিতে সনিয়া গাঁধীর বিরুদ্ধে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার অভিযোগ খণ্ডনে মুখ খুলেছেন প্রিয়াঙ্কা বঢরাও। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব চাইছেন, ভোট বাজারে বারুর বই যে অস্বস্তি তৈরি করেছে, তা কাটাতে প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ বার মুখ খুলুন।
কৌশলগত কারণে যে কংগ্রেস নেতারা এ যাত্রায় মনমোহনকে ভোট প্রচারে বিশেষ একটা ব্যবহারের পক্ষে ছিলেন না, তাঁরাই এখন চাইছেন প্রচারে বেরোন মনমোহন। ভোট-পর্বে এ পর্যন্ত মাত্র দু’দিন প্রচারে বেরিয়েছেন তিনি। কংগ্রেস সূত্রের খবর, ভোট প্রচারে প্রধানমন্ত্রীকে এ বার কোথায় কোথায় যেতে হবে তার একটি তালিকা তাঁকে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় নরেন্দ্র মোদীর খাস তালুক গুজরাতও রয়েছে। এ ছাড়া মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব ও তামিলনাড়ুতে প্রচারে যেতে বলা হয়েছে তাঁকে।
কংগ্রেস নেতারা মনে করছিলেন, এমনিতেই রাজনৈতিক প্রচারে মনমোহনের গ্রহণযোগ্যতা তুলনায় কম। তার উপরে তাঁর আমলে মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে মানুষের অসন্তোষ রয়েছে। ইউপিএ জমানায় অধিকাংশ বিষয়ে ও বিতর্কে মনমোহন মৌনী থাকায় সাধারণ মানুষও তাঁকে এখন কটাক্ষ করছেন। এই অবস্থায় ভোট-প্রচারে তাঁকে ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাহুল গাঁধীকে নতুন মুখ হিসেবে তুলে ধরে প্রচারে যাওয়াই বিচক্ষণতা হবে বলে মনে করছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু তাঁরাই এখন বুঝতে পারছেন, ভোটের মাঝে সঞ্জয় বারুর বই কংগ্রেসকে যে অস্বস্তিতে ফেলেছে, তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীরই মুখ খোলা দরকার। কারণ, কংগ্রেস বা অন্য কেউ বারুর বইয়ের বক্তব্য খণ্ডন করলেও তাতে কাজ দিচ্ছে না। বারু অভিযোগ করেছেন, মনোমহন নামেই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, ইউপিএ সরকারে সনিয়াই ছিলেন কার্যত ‘সুপার প্রাইম মিনিস্টার’। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বকলমে নিতেন সনিয়াই। তা ছাড়া একটি সাক্ষাৎকারে বারু এ-ও দাবি করেছেন, বইটি প্রকাশের দু’মাস আগেই তিনি মনমোহনকে পাণ্ডুলিপি দেখিয়েছিলেন।
ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা বলছেন, এই অবস্থায় এমন ধারনা তৈরি হয়েছে যে মনমোহনই বারুকে দিয়ে এমন বই লিখিয়েছেন। নিজের মিডিয়া উপদেষ্টা হিসাবে বারুকে বেছেছিলেন মনমোহনই। তাই বারুর দাবি খণ্ডন করার দায় বর্তায় প্রধানমন্ত্রীর ওপরেই।
তবে দলের চাপে প্রধানমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত প্রচারে বেরোলেও বারুর বই নিয়ে কতটা মুখ খুলবেন কিংবা সনিয়ার অস্বস্তি কাটাতে কতটা ব্যাখ্যা দেবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যেই। মনমোহন মন্ত্রিসভার এক সদস্য তথা রাহুল শিবিরের নেতা আজ বলেন, “বইয়ের বিষয় প্রধানমন্ত্রী যাতে মুখ খোলেন সে ব্যাপারে দলের প্রত্যাশা রয়েছে। তা নিয়ে উনি কতটা বলবেন সেটা ওঁর ব্যাপার। কিন্তু দলের তরফে তাঁকে জানানো হয়েছে যে উনি যেন নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে সরাসরি সমালোচনা করেন।” কংগ্রেসের ওই নেতা স্মরণ করিয়ে দেন, মনমোহন অতীতে যত বার আডবাণী বা মোদীর বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ খুলেছেন তত বার সাড়া পড়েছে। এ বারও তাঁকে সেই ভূমিকায় দেখতে চায় দল। সে জন্য তাঁকে গুজরাতেও প্রচারে যেতে অনুরোধ করা হয়েছে।
লোকসভা ভোটের আগে সনিয়া ও রাহুল মিলে ইতিমধ্যে যখন গোটা ষাটেক জনসভা করে ফেলেছেন, তখন হাতে গুণে মাত্র দু’দিন প্রচারে বেরিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এক দিন অসমের জোরহাটে। পরে কোচিতে তিনি এক দিন প্রচারে যান। তা-ও নিজের মন্ত্রিসভার দুই সদস্যের আর্জিতে। আর কোনও রাজ্য থেকে মনমোহনকে প্রচারে পাঠানোর দাবিও জানানো হয়নি। বারুর বই-বোমার ধাক্কায় এ বার দিল্লি থেকে তৈরি করা হচ্ছে মনমোহনের প্রচারের রুট।
এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফে বারুর বক্তব্য খণ্ডন করার প্রক্রিয়াও অব্যাহত রয়েছে। আগামী পরশু সাংবাদিক বৈঠক করে বারুর বক্তব্য খারিজ করার প্রস্তুতি শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান মিডিয়া উপদেষ্টা পঙ্কজ পচৌরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy