যন্তর-মন্তরের ধর্নায় মুলায়ম সিংহের সঙ্গে লালুপ্রসাদ। সোমবার। ছবি: পিটিআই
মোদী সরকারের ‘ধর্ম সঙ্কট’ কাটাতে এ বার আরএসএসের দ্বারস্থ হল বিজেপি।
আগরা-কাণ্ডের পর ধর্মান্তরণের বিভিন্ন ঘটনা থেকে সরকার দূরত্ব রেখে চলার চেষ্টা করছে। সংসদে ধর্মান্তরণ বিলের প্রস্তাব দিলেও প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহিতে অনড় বিরোধীদের বিক্ষোভে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের পুরোটাই প্রায় পণ্ড হয়েছে। ধর্মান্তরণের ঘটনায় একাধিক বার আরএসএসের নাম জড়িয়ে যাওয়া এবং সঙ্ঘ-প্রধান মোহন ভাগবতের ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ নিয়ে মন্তব্য যে প্রতি বারই বিজেপি সরকারকে ব্যাকফুটে ফেলছে তা স্পষ্ট। দল এবং সরকারের এই সঙ্কট কাটাতে তাই নিতিন গডকড়ীর বাড়িতে আজ সন্ধ্যায় সঙ্ঘের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিজেপি নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, নিতিন গডকড়ী এবং ভাইয়াজি জোশী, সুরেশ সোনি, কৃষ্ণগোপালের মতো আরএসএসের শীর্ষ নেতারা।
ওই বৈঠকে স্থির হয়, বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার বিতর্কিত মন্তব্য এড়ানোর চেষ্টা করবে। ধর্মান্তরণ-বিরোধী আইন নিয়ে প্রচার চলবে। সেইসঙ্গে কারা কেন সংসদে বিভিন্ন বিল পাশ হওয়া আটকাচ্ছে, তা নিয়ে প্রচারে নামবে বিজেপি-সঙ্ঘ। সঙ্ঘ পরিবার ‘ধর্মান্তরিত হিন্দুদের’ হিন্দুত্বের পথে ফেরানোর কাজ না থামালেও সরকার যাতে অস্বস্তিতে না পড়ে তা দেখবে। আজ ধর্মান্তরণ-কাণ্ড নিয়ে ফের বিরোধী-তোপের মুখে পড়েছে মোদী সরকার। গত কয়েক দিনের মতোই বিরোধী ঐক্যের ছবিটি ধরা পড়েছে সংসদের ভিতর-বাইরে। গত কয়েক দিন ধরেই বিরোধী দলগুলি কক্ষ সমন্বয় করে কার্যত বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বকে। মূলত বিরোধীদের চাপে বিমা বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারধর্মী বিলটি পাশ করাতে ব্যর্থ হয় সরকার। আজ রাজ্যসভার পাশাপাশি বিরোধীদের একজোট হওয়ার চিত্র দেখা গিয়েছে লোকসভাতেও। ধর্মান্তরণ, হিন্দুরাষ্ট্র, বিরোধী দলগুলিকে সংসদে বলতে না দেওয়ার মতো অভিযোগে লোকসভায় এক যোগে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস, তৃণমূল ও জনতা পরিবারভুক্ত দলগুলির সদস্যেরা। বিক্ষোভের জেরে লোকায়ুক্ত বিলটিকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আলোচনা হয়নি অন্য কোনও বিল নিয়েও। লোকসভা ভোটের প্রচারের সময়ে বার বার নিজের ৫৬ ইঞ্চি ছাতির কথা বলেছেন মোদী। আজ রাজ্যসভায় বিতর্কের সময়ে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “এখানে আসতে ওঁর ৫৬ ইঞ্চি ছাতির প্রয়োজন নেই। চার ইঞ্চির হৃদয় থাকলেই হবে।”
‘প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গিয়েছেন’ বলে স্লোগান দিয়ে লোকসভায় বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা। দিন কয়েক আগেই নিজেকে আরএসএসের জন্য গর্বিত বলে দাবির প্রসঙ্গ টেনে বেঙ্কাইয়াকে এক হাত নেন কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে। বেঙ্কাইয়ার পাল্টা, “গাঁধী পরিবারকে নিয়ে আপনারা গর্বিত হলে আমিও সঙ্ঘ পরিবারকে নিয়ে গর্বিত!” বিরোধীদের ‘প্রধানমন্ত্রী ভাগ গ্যয়া’ স্লোগানে ক্ষুব্ধ বেঙ্কাইয়া বলেন, “আমাদের নেতাকে আপনারা সমানে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। একে অপরের প্রতি সম্মান থাকাটা জরুরি।” এ ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণে নামলে তা লোকসভা নির্বাচনের মতোই বিরোধীদের পক্ষে ব্যুমেরাং হবে বলেও মন্তব্যকরেন বেঙ্কাইয়া।
এ দিকে, আগামী কালই শেষ হচ্ছে শীতকালীন অধিবেশন। ধর্মান্তরণের ঘটনা নিয়ে বিক্ষোভে এই মরসুমে প্রায় কোনও কাজই এগোয়নি সংসদে। আটকে পড়েছে বিলও। এই পরিস্থিতিতে অর্ডিন্যান্স আনলেও সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে ফের বিল পাশের দরকার পড়বে। অগত্যা, সঙ্কটে সরকার। ক্ষমতায় আসার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঠিক করেছিলেন, বিরোধীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে উন্নয়নের ‘আচ্ছে দিন’ দেখাবেন। হইহই করে গড়াবে তাঁর উন্নয়ন-রথ। তবে সে কাজ যে মোটেও সহজ নয়, তা দু’শো দিনের মধ্যেই সংসদের ভিতরে ও বাইরে টের পাচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। আরএসএসের নেতাদের মন্তব্য এবং কার্যকলাপের জবাবদিহি চাওয়া হচ্ছে সরকারের কাছে। আজই যন্তর-মন্তরে সরকার-বিরোধী ধর্নায় বসেছিলেন জনতা পরিবারের সদস্য কিছু নেতা। সম্প্রতি বিজেপিকে রুখতে এক হওয়ার কথা জানিয়েছে সাবেক জনতা পরিবারের অংশ কিছু দল। আজ সেই সংযুক্ত জনতা পরিবারের প্রথম সভা ছিল রাজধানীতে। দিল্লির কুয়াশা ভেজা সকালে যন্তর-মন্তরে ভিড় বাড়ানোর দায়িত্বে ছিল মূলত সমাজবাদী পার্টি নেতৃত্বের উপর। তাই সভা মঞ্চে ছ’টি আঞ্চলিক দলের নেতারা উপস্থিত থাকলেও ভিড় ছিল কেবল সমাজবাদী পার্টির সমর্থকদেরই। সংসদের মতোই এখানে মূলত হিন্দুরাষ্ট্র, ধর্মান্তরণ-সহ একাধিক বিষয়ে বিজেপির নীতির বিরুদ্ধে সরব হন নীতীশ ও লালুপ্রসাদেরা। কেন্দ্রের একশো দিনের কাজের নীতি থেকে বেকারত্ব বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলিতে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হন মুলায়ম। ধর্নায় যোগ দিতে ডাকা হয়েছিল তৃণমূলকেও। দলের প্রতিনিধি হিসেবে ডেরেক ও’ব্রায়েনকে পাঠানো হলেও তিনি যেতে যেতে সভা শেষ হয়ে যায়। তবে পরে ডেরেক জানিয়েছেন, ওই বিষয়গুলি নিয়ে আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তৃণমূলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy