Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভরাডুবির দায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের, মত কারাটের

পার্টিকে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়াটাই ছিল লক্ষ্য। তা তো হয়ইনি, উল্টে জনগণের কাছ থেকে আরও সরে গিয়েছে সিপিএম। লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর এ বার নিজেই এ কথা কবুল করলেন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। এ বার আর তিনি শুধু রাজ্যের উপর দোষারোপ করেননি। বরং বলেছেন, গোটা দেশে পার্টিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার প্রতিফলন ভোটের এই ফল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৪ ০২:২৩
Share: Save:

পার্টিকে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়াটাই ছিল লক্ষ্য। তা তো হয়ইনি, উল্টে জনগণের কাছ থেকে আরও সরে গিয়েছে সিপিএম। লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর এ বার নিজেই এ কথা কবুল করলেন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। এ বার আর তিনি শুধু রাজ্যের উপর দোষারোপ করেননি। বরং বলেছেন, গোটা দেশে পার্টিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার প্রতিফলন ভোটের এই ফল।

কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপত্রের সাম্প্রতিক সংখ্যায় লেখা এক নিবন্ধে প্রকাশ এই উপলব্ধির কথা প্রকাশ করেছেন। তাঁর স্বীকারোক্তি, “ভোটের ফলে স্পষ্ট সিপিএম এবং বামেরা মানুষের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। সাধারণ মানুষের থেকে দলের এই বিচ্ছিন্নতা দূর করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ প্রয়োজন।” এ জন্য পার্টির রাজনৈতিক রণকৌশল পরিবর্তনকে অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি। যুক্তফ্রন্টের রণকৌশল পর্যালোচনারও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন কারাট।

কারাটের নিজের মুখে এই ব্যর্থতার স্বীকারোক্তি দলের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে, তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন এ কে গোপালন ভবনের নেতারা। দু’টি সম্ভাবনা রয়েছে। নিজের মুখে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নেওয়ার পরেও কারাট কেন সাধারণ সম্পাদক পদে থাকবেন, সেই প্রশ্ন উঠতে পারে। আর একটি সম্ভাবনা হল, কারাট নিজের ভুল নিজেই স্বীকার করে নিয়ে পার্টি ক্যাডারদের সমর্থন কুড়োতে পারেন। দলের নেতা-কর্মীরা ভাবতে পারেন, সাধারণ সম্পাদক অন্তত সত্যি কথা স্বীকার করার মনোবল রাখেন। পলিটব্যুরোর এক সদস্যের মতে, “সাধারণ সম্পাদক পদের মেয়াদ বেঁধে দেওয়ায় এমনিতেই আগামী বছর পার্টি কংগ্রেসে প্রকাশকে সরে যেতে হবে। ওঁর আর কিছুই হারানোর নেই। ব্যর্থতা স্বীকার করে নিলেই বরং ভাবমূর্তি ভাল হতে পারে।” সকলেই মানছেন, ব্যর্থতা স্বীকারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাহস দেখিয়েছেন প্রকাশ কারাট। নিবন্ধে লিখেছেন, “এই লোকসভা নির্বাচনের ফল গুরুতর আত্মসমীক্ষার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। পার্টির রাজনৈতিক কাজকর্ম এবং সংগঠন ঢেলে সাজা দরকার।” কারাটের যুক্তি, দলের নিজস্ব শক্তি ও জনভিত্তি কমেছে। তবে এ জন্য অন্য কাউকে দোষারোপ না-করে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ঘাড়েই দায় নিয়েছেন। গত পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে পার্টির শক্তি বাড়াতে না পারার ব্যর্থতাও মেনে নিয়েছেন তিনি।

সিপিএমকে ঘুরে দাঁড় করাতে কী কী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ প্রয়োজন, তার জন্য চার দফা দাওয়াইও বাতলেছেন কারাট। এক, দলের রাজনৈতিক রণকৌশল বদলের প্রয়োজন। আগামী বছর এপ্রিলে পার্টি কংগ্রেসে এই পর্যালোচনা হবে। দুই, গত আড়াই দশকে উদার অর্থনীতির সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব খতিয়ে দেখে আন্দোলনের চরিত্র, স্লোগান বদলাতে হবে। তিন, সংগঠন কী ভাবে কাজ করছে, কেন আন্দোলন গড়ে তোলা যাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। চার, দলের গণ সংগঠনগুলির নিজস্ব শক্তিও গড়ে তুলতে হবে।

সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে প্রচারের কায়দাতেও বদল চাই বলে মনে করেন কারাট। দলের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, গত কয়েক বছর ধরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যা বলে আসছেন, কারাটের মুখে এখন সে কথা শোনা গিয়েছে। কারাট লিখেছেন, সব বাম-মনস্ক ব্যক্তি ও সংগঠনকে এক জায়গায় নিয়ে আসার জন্য এখনই আলোচনা শুরু করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

new delhi karat cpim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE