Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভোট হারিয়েও আয় বেড়েছে সিপিএমের

ভোট বাড়েনি। কিন্তু আয় বাড়ছে সিপিএমের! বাড়ছে লাভের অঙ্কও! পশ্চিমবঙ্গ, কেরলের মতো বাম ঘাঁটিতে শক্তি ক্ষয়ের পরে সংসদে সিপিএমের অবস্থা যতই করুণ হোক না কেন, আয়-ব্যয়ের হিসাবের খাতায় তার ছাপ পড়েনি। আয়কর দফতরের খতিয়ান তুলে ধরে তেমনই দাবি করছে একটি বেসরকারি সংস্থা।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৪ ০২:২৫
Share: Save:

ভোট বাড়েনি। কিন্তু আয় বাড়ছে সিপিএমের! বাড়ছে লাভের অঙ্কও! পশ্চিমবঙ্গ, কেরলের মতো বাম ঘাঁটিতে শক্তি ক্ষয়ের পরে সংসদে সিপিএমের অবস্থা যতই করুণ হোক না কেন, আয়-ব্যয়ের হিসাবের খাতায় তার ছাপ পড়েনি। আয়কর দফতরের খতিয়ান তুলে ধরে তেমনই দাবি করছে একটি বেসরকারি সংস্থা।

পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে ক্ষমতা হারানোর পরে লোকসভা ভোটে সিপিএমের শক্তি আরও কমেছে। কিন্তু তাতে তাদের আয় কমছে না। আয়কর দফতরে জমা করা শেষ হিসেব বলছে, ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে সিপিএমের মোট আয়ের পরিমাণ ১২৬ কোটি টাকারও বেশি। পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ঠিক পরেই, ২০১১-১২’য় আয় ছিল ১০৩ কোটি টাকার কিছু বেশি। অর্থাৎ ভোটবাক্সে রক্তক্ষরণ অব্যাহত থাকলেও ওই এক বছরে সিপিএমের আয় ২৩ কোটি টাকা বেড়েছে!

আয়ের ঘরে যা জমা পড়ছে সিপিএমের, সবটাই খরচ হয়ে যাচ্ছে ঘটনা এমনও নয়। বরং, সিন্দুকেই জমা হচ্ছে আয়ের একটা বড় অংশ। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে সিপিএমের আয়ের পরিমাণ যেখানে ১২৬ কোটি টাকা, সেখানে খরচ ৭৩ কোটি টাকার কিছু বেশি। অর্থাৎ লাভের ঘরে জমা প্রায় ৫৩ কোটি টাকা। এক বছরে লাভের হিসাবে বহু কর্পোরেট সংস্থাকেও পিছনে ফেলে দিচ্ছে মেহনতী মানুষের অধিকারের কথা-বলা প্রকাশ কারাটের দল!

তথ্যের অধিকার আইনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের তথ্য বার করে রিপোর্ট তৈরি করেছে বেসরকারি সংস্থা এডিআর (অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্র্যাটিক রিফমর্স)। আয়ের হিসেবে কংগ্রেস ও বিজেপি-র পরেই রয়েছে সিপিএম। দেশের ৬টি জাতীয় রাজনৈতিক দলের (এই লোকসভা ভোটের ফলের আগেকার স্বীকৃতি অনুযায়ী) মধ্যে আয়ের নিরিখে আর এক বাম দল সিপিআই তো বটেই, শরদ পওয়ারের এনসিপি, মায়াবতীর বহুজন সমাজবাদী পার্টিকেও পিছনে ফেলেছে তারা।

কোথা থেকে এই আয় হচ্ছে সিপিএমের? জনগণের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করেই সিপিএমের আয় হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ১২৬ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ৭৩ কোটি টাকাই এসেছে ওই খাত থেকে। লেভি বাবদ আয় হয়েছে ৩৯ কোটি টাকা। ব্যাঙ্কে সঞ্চয়ের থেকে সুদ, আমানত ও লগ্নি থেকে আয় প্রায় ১২ কোটি। স্বাভাবিক ভাবেই কর্মীদের বেতন ও ভাতা দিতে পার্টির সব চেয়ে বেশি খরচ হয়েছে ১৮ কোটি টাকারও বেশি। হিসাবের খাতা বলছে, যে কোনও বিষয়ে বৈঠক ডাকতে চোস্ত সিপিএমের এক বছরে বৈঠক ও সম্মেলন আয়োজনে ৭ কোটির বেশি খরচ হয়েছে!

গোল বেঁধেছে অন্যত্র। সিপিএমের ঘোষিত নীতি হল, কর্পোরেট ও ব্যবসায়িক সংস্থার কাছ থেকে দল কোনও চাঁদা নেবে না। দু’বছর আগে এডিআর রিপোর্টে বলা হয়েছিল, সিপিএম কর্পোরেট সংস্থাগুলির চাঁদাও নিয়েছে। কিন্তু পলিটব্যুরো সেই দাবি খারিজ করেছিল। গত বছরও এই অভিযোগ ওঠার পরে সিপিএম জানায়, অন্ধ্রে দু’টি সংস্থার কাছ থেকে অনুদানের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু পলিটব্যুরো তা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ বছর এডিআর-এর রিপোর্ট বলছে, ২৯টি কর্পোরেট সংস্থার চাঁদা বাবদ ২০১২-১৩ সালে সিপিএমের ১ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে। কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নীলোৎপল বসু অবশ্য এ বারও বলেছেন, “আমরা কর্পোরেট সংস্থার কাছ থেকে কোনও চাঁদা নিই না।”

আয়কর আইন বলছে, রাজনৈতিক দলগুলিতে কেউ ২০ হাজার টাকার বেশি চাঁদা দিলে তার প্যান নম্বর জমা দিতে হবে। রাজনৈতিক দলকেও সেই তথ্য আয়কর দফতরে জমা দিতে হবে। কিন্তু এডিআরের রিপোর্ট অনুসারে, ১৯টি কর্পোরেট সংস্থার প্যান কার্ড সংক্রান্ত তথ্য সিপিএম আয়কর দফতরে জমা দেয়নি। এই সংস্থাগুলির মোট চাঁদার পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা। আবার ৯টি ক্ষেত্রে চাঁদার টাকা নগদে এসেছে, না চেকে, সেই তথ্য দেওয়া হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

premanshu choudhuri new delhi cpm
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE