Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
বিয়ে হয়নি! অবাক পড়শিরা

মিখাইলের বন্ধুদের নজরে বন্দি উপেন্দ্র

বরা পরিবারের ‘পরী’ মেয়েটা যে চলনে-বলনে সময়ের চেয়ে একটু বাড়াবাড়ি রকম এগিয়ে, প্রতিবেশীরা তা বুঝতেন। ঠিক এক সপ্তাহ আগে খুনের দায়ে পরীর গ্রেফতার হওয়া, তার জীবন ঘিরে উঠে আসা একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য— এ সবে তাঁরা অল্পবিস্তর চমকেও গিয়েছিলেন। শুধু আজকের ধাক্কাটা নেওয়া যাচ্ছে না! লিভ ইন!!! সিদ্ধার্থ দাসকে পরী তথা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের বাপের বাড়ির পাড়া চিনত তাঁর প্রথম স্বামী হিসেবে।

উপেন্দ্রর বাড়ির বাইরে সোমবার রাতে পোড়ানো জামাকাপড়, কাগজপত্রের ছাই। রয়েছে মদের বোতলও। — নিজস্ব চিত্র

উপেন্দ্রর বাড়ির বাইরে সোমবার রাতে পোড়ানো জামাকাপড়, কাগজপত্রের ছাই। রয়েছে মদের বোতলও। — নিজস্ব চিত্র

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৪
Share: Save:

বরা পরিবারের ‘পরী’ মেয়েটা যে চলনে-বলনে সময়ের চেয়ে একটু বাড়াবাড়ি রকম এগিয়ে, প্রতিবেশীরা তা বুঝতেন। ঠিক এক সপ্তাহ আগে খুনের দায়ে পরীর গ্রেফতার হওয়া, তার জীবন ঘিরে উঠে আসা একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য— এ সবে তাঁরা অল্পবিস্তর চমকেও গিয়েছিলেন। শুধু আজকের ধাক্কাটা নেওয়া যাচ্ছে না!
লিভ ইন!!! সিদ্ধার্থ দাসকে পরী তথা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের বাপের বাড়ির পাড়া চিনত তাঁর প্রথম স্বামী হিসেবে। কিন্তু গত কাল সিদ্ধার্থই আনন্দবাজারকে জানিয়ে দেন, ইন্দ্রাণীর ও তিনি একসঙ্গে থাকতেন। তাঁদের বিয়ে হয়নি। শিনা ও মিখাইল বরা তাঁদেরই সন্তান।
এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই চমকে চমকে উঠছেন প্রতিবেশী নেওগ কি বরদলৈ পরিবার। এক প্রবীণ তো সরাসরি বললেন, ‘‘আশির দশকের রক্ষণশীল গুয়াহাটিতে দু’টো ছেলেমেয়ে ‘এমনিই এমনিই’ একসঙ্গে থাকত! তা-ও মেয়েটার বাপের বাড়তে! ওদের দু’টো বাচ্চাও হয়ে গেল। পরীর বাবা উপেন্দ্রবাবু কী করে এত কিছু মেনে নিলেন?’’
উত্তরটা যিনি দিতে পারতেন, সেই উপেন্দ্রবাবু কার্যত গৃহবন্দি। গত ক’দিনে মাত্র এক বার তাঁর দেখা মেলে। আজ বাড়ির একটা জানলাও খোলেনি। মিখাইলের জিমের ‘বাহুবলী’ বন্ধুরা পালা করে বাড়ি পাহারা দিচ্ছে। সাংবাদিকেরা গত কাল উপেন্দ্রবাবুর সঙ্গে কথা বলার জন্য জোরাজুরি করায় এই বন্ধুরা থানায় খবর দিয়েছিল। তার পর রাতেই বাড়ির বিভিন্ন ঘর সাফ করে বহু জামাকাপড়, কাগজপত্র বাড়ির নীচে জড়ো করে পুড়িয়ে ফেলে তারা। বাইরে বের করে দেওয়া হয় প্রচুর মদের বোতল। মিখাইলের নির্দেশেই কি? উত্তর নেই। তার পর সিদ্ধার্থ মুখ খোলায় যেন এই ‘বাহুবলীদের’ তৎপরতা বেড়েছে। আজও উপেন্দ্রবাবুর সঙ্গে কথা বলতে চাওয়া হলে তারা জানিয়ে দেয়, দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কারও সঙ্গে কথা বলার অবস্থায় নেই। সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলায় ধমক খেয়েছেন উপেন্দ্র-দুর্গারানিদেবীর সেবিকাও।

আত্মীয়-প্রতিবেশীরা অবশ্য দিনভর অনেক কথাই বলেছেন। প্রায় উল্টোদিকে থাকা প্রতিবেশীটি যেমন বললেন, ‘‘বরাদের বাড়ি ‘চাণক্য নীড়’-এর নাম আগে ছিল ‘চাণক্য ইন’। অতিথিশালা হিসেবেই নীচের তিনটি ঘর ভাড়া দেওয়া হতো। সেখানে এক বার অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগ ওঠায় প্রতিবেশীদের চাপেই অতিথিশালা বন্ধ হয়ে যায়। জানা গেল, মোটামুটি ২০১২-র মাঝামাঝি থেকেই উপেন্দ্রবাবু ও দুর্গারানিদেবী বাইরে বেরোনো কার্যত বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সম্ভবত দুর্গারানিদেবীর স্ট্রোক হয়েছিল। তা-ও উপেন্দ্রবাবু মাঝেমধ্যে বের হতেন। পরে বাড়ির পরিচারক, গাড়িচালক ও মিখাইল তাঁকে বেরোতে দেখলেই টেনে ভিতরে নিয়ে যেত। মিখাইল জানিয়েছিল, দিদিমার অ্যালঝাইমার্স হয়েছে। দাদুও স্মৃতিভ্রংশের শিকার। বাইরে বের হলে তাঁরা পথ হারিয়ে কোথাও চলে যেতে পারেন।

এই যুক্তিও একরকম মেনে নিয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু ধাক্কা খাচ্ছেন সিদ্ধার্থের স্বীকারোক্তিতে।

এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘সিদ্ধার্থ কাইনেটিক হন্ডা চালিয়ে পরী আর ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে ঘুরত। পাড়ার সকলকে, এমনকী, তেজপুরে থাকা ভাইকেও উপেন্দ্রবাবু জানিয়েছিলেন, মেয়ে শিলংয়ে বিয়ে করে এসেছে। তাই বিয়ের কোনও উৎসব গুয়াহাটিতে হয়নি।’’ দুর্গারানিদেবীর এক নিকটাত্মীয় দাবি করেন, ‘‘পরী শিলংয়ে সিদ্ধার্থের সঙ্গে প্রেমপর্বের সময়ই গর্ভবতী হয়। সে বাবাকে বলেছিল, তাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সম্ভবত কামাখ্যায় বিয়ে হয়েছিল বলে জানিয়েছিল পরী। সেই কথাকেই সত্যি বলে মেনে নিয়েছিলেন উপেন্দ্রবাবু। না হলে মেয়ে ও সিদ্ধার্থকে তিন বছর ধরে বাড়িতে ‘লিভ ইন’ করতে দিতেন না তিনি।’’ এই আত্মীয়ের দাবি, সিদ্ধার্থ এখন অস্বীকার করলেও উপেন্দ্রবাবু তাঁকে যথেষ্ট স্নেহ করতেন। তাঁকে ব্যবসা করার টাকাও দিয়েছিলেন। কিন্তু ইন্দ্রাণী চলে যাওয়ার পরে সিদ্ধার্থই নাকি বলেছিলেন, তিনি সন্তানদের ভার নিতে পারবেন না। কারণ, তাঁর তেমন রোজগার নেই (পরিবারের একটি সূত্রের আজ দাবি, সিদ্ধার্থের কাছ থেকে পালিয়ে জামশেদপুরে গিয়ে চাকরি নিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। তবে তাঁর ‘সাহায্যকারী’ কে ছিলেন, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন)।

সিদ্ধার্থ অবশ্য আনন্দবাজারকে বলেছেন, ইন্দ্রাণী চলে যাওয়ার পর গুয়াহাটির বাড়িতে গিয়ে একাধিক বার অপমানিত হয়েছেন তিনি। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, সিদ্ধার্থের বোন ব্রততী গুপ্ত কেন উপেন্দ্র-দুর্গারানিকে ‘ভাল মানুষ’ বললেন? কেন বললেন, ‘বৌদি’কে তাঁদের ভাল লাগত? আজ আর মুখ খুলতেই রাজি হলেন না ব্রততীদেবী। তবে তাঁর স্বামী প্রণয়জ্যোতি গুপ্ত জানালেন, ইন্দ্রাণী চলে যাওয়ার পর প্রথম দিকে কয়েক বার সিদ্ধার্থের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছিল, তিনি শ্বশুরবাড়িতেই রয়েছেন। ছেলেমেয়ে দু’টিও সেখানে। স্বাভাবিক ভাবে তাঁদের মনে হয়েছিল, মেয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরেও উপেন্দ্রবাবু যেহেতু জামাইকে রেখেছেন, নিশ্চয়ই তাঁরা খুব ভাল মানুষ। তা ছাড়া ইন্দ্রাণী ব্রততীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহারই করতেন। সম্পর্কের কোনও টানাপড়েনও তাঁদের নজরে পড়েনি। যা দেখেছেন-শুনেছেন, তা-ই তাঁরা বলেছেন। তবে আজ প্রণয়বাবু অনুরোধ, ‘‘দয়া করে এর মধ্যে আমাদের আর টানবেন না, প্লিজ।’’

(তথ্য সহায়তা: উত্তম সাহা)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE