Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মৈত্রীদূতকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ উত্তর-পূর্ব

মেলালেন তিনি মেলালেন। কোথায় হারাল মূল ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। কোথায় রইল বহিরাগত খেদাওয়ের স্লোগান। এ পি জে আব্দুল কালামের মৃত্যুতে যেন মিলেমিশে গেল ভারত-অসম-শিলং।

শেষ বিদায়। প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামকে শ্রদ্ধা জানালেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। মঙ্গলবার গুয়াহাটি বিমানবন্দরে। ছবি: উজ্জ্বল দেব।

শেষ বিদায়। প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামকে শ্রদ্ধা জানালেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। মঙ্গলবার গুয়াহাটি বিমানবন্দরে। ছবি: উজ্জ্বল দেব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪০
Share: Save:

মেলালেন তিনি মেলালেন। কোথায় হারাল মূল ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। কোথায় রইল বহিরাগত খেদাওয়ের স্লোগান। এ পি জে আব্দুল কালামের মৃত্যুতে যেন মিলেমিশে গেল ভারত-অসম-শিলং।

তা-ই শিলংয়ে কালামের দেহ সেনাবাহিনীর গাড়িতে তোলার সময় স্লোগান ওঠে— ‘কালাম জিন্দাবাদ। ভারত মাতা কী জয়।’

শিলংয়ে ইনারলাইন পারমিট চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে তীব্র আন্দোলন। সেই সঙ্গে ভারতের মূল ভূখণ্ডে খাসি-গারোরা যে ভাবে অপমান-ব্যঙ্গের মুখোমুখি হন, তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে রাজ্যে। পাশের রাজ্য অসমের সঙ্গে তো নিত্যদিনের কাজিয়া। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও কালাম যেন হয়ে রইলেন বরাবরের মৈত্রীদূত। তিনি বলেছিলেন— ‘উত্তর-পূর্ব হাসলে তবেই ভারত হাসবে।’ রাষ্ট্রপতি থাকার সময় তো বটেই, পরেও কালাম উত্তর-পূর্বে এসেছেন রাজনীতিকে দূরে সরিয়েই। তাই তিনি এলেই মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দূরত্ব নিজে থেকেই সরে যেত। কালামের সঙ্গে ছবি তুলতে হুড়োহুড়ি পড়ত শিলং আইআইএম-এ। শিলংয়ে কখনও ‘বহিরাগত’ ছিলেন না তিনি। গত বছর আইআইএম চত্বরে সাদা কোটের কালামকে সঙ্গে নিয়ে তোলা গ্রুপ ছবিই এখন আইআইএম ছাত্রছাত্রীদের অমূল্য সম্পদ। ফেসবুক হোক বা টুইটার—সর্বত্র কালাম-বন্দনায় মেতেছেন মেঘালয়ের নবীন-প্রবীণ প্রজন্ম। গত কাল কালামের সংজ্ঞাহীন হওয়ার খবর তড়িৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। রাতের শিলংয়ে সহজে যানবাহন মেলে না। তার মধ্যেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দলে দলে ছাত্রছাত্রী হেঁটে রওনা দেন বেথেনি হাসপাতালের দিকে। রাত ৮টা নাগাদ হাসপাতালের তরফে সরকারি ভাবে মৃত্যুসংবাদ ঘোষণার পরে ছাত্রছাত্রীদের আর বাড়ি ফেরেননি। দল বেঁধে থেকে যান হাসপাতালের আশপাশেই।


শেষ শ্রদ্ধা। মঙ্গলবার গুয়াহাটি বিমানবন্দরে উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি।

গত কাল রাত সাড়ে ১০টায় আইআইএমে শোকসভার আয়োজন করেন অধিকর্তা অমিতাভ দে। আজ সকালে ফের কালাম স্মরণে আইআইএম চত্বরে সমবেত হন আইআইএমের ছাত্র, শিক্ষকরা। কালামের শেষ ভাষণের প্রতিপাদ্য ছিল— ‘বিশ্বকে মানুষের বাসযোগ্য করে তোলার উপায়’। ভারতরত্নের সেই কথাকে সঙ্গী করেই এ দিন আইআইএম চত্বরে চলে তাঁর স্মরণে বৃক্ষরোপণ।

এ দিন কালামের দেহ নিয়ে গুয়াহাটি পৌঁছন মেঘালয়ের রাজ্যপাল ভি সণ্মুগনাথন, স্পিকার আবু তাহের মণ্ডল ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রোশন ওয়ারজিরি। তার আগে ভোর ৫টা নাগাদ যখন শিলংয়ের সেনা হাসপাতাল থেকে কালামের মরদেহ বের করা হয়, তখন পাহাড়ি শহরের রাস্তায় মানুষের ভিড়। কলকাতার মেয়ে মালবিকা বিশারদ বিবাহসূত্রে শিলং নিবাসী। তিনি বলছিলেন, ‘‘২০০৪ সালে চপার দুর্ঘটনায় রাজ্যের এক মন্ত্রী ও দুই বিধায়ক মারা যাওয়ার পরে শেষ এমন শোকের পরিবেশ দেখেছিলাম শহরে।’’ কারও মৃত্যুতে এ ভাবে খাসি, গারো, বাঙালি, অসমীয়া, হিন্দীভাষী নির্বিশেষে শোক শেষ করে দেখেছে শিলং তা মনে করতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।

প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক প্যাট্রিসিয়া মুখিম আকাশে জমা কালো মেঘের ছবি তুলে পোস্ট করে লিখছেন— ‘শিলংয়ের নিজের মানুষ কালামের শোকে শহরের আকাশেরও আজ মুখ ভার।’ আম শিলংবাসীর সিংহভাগ কালামের কোনও আলোচনা সভায় হাজির হননি, তাঁর ভাষণও শোনেননি। তবু, আজ পুরো শিলং শোকস্তব্ধ। ঘরে ঘরে একই আলোচনা। রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ মালবিকাদেবী জানান, রাষ্ট্রপতি থাকার সময় বিধানসভায় এসেছিলেন কালাম। তখন তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। পরে, সেন্ট অ্যান্টনিজ কলেজের এক সম্মেলনেও অংশ নেন। তখনও তাঁর সঙ্গে কথা হয়। ছাত্রদের সেই দিন কালাম বলেছিলেন— ‘কখনও মাথা নীচু করে দাঁড়াবে না। অলওয়েজ লুক আপ। নিজেকে আগে ভারতীয় ভাববে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোশন বলেন, ‘‘মানুষের এমন স্বতঃস্ফূর্ত জনসমুদ্র প্রমাণ করে দেয়, আম জনতার কত প্রিয় ছিলেন কালাম।’’

এ দিন ভোর থেকে বিমানবন্দরের সামনে অপেক্ষারত ছাত্র স্যামুয়েল লিংডো, ডেভিড খারক্রাংরা বলছিলেন, ‘‘কালাম যেন আমাদের সকলকে এক সুতোয় বেঁধে রেখে গেলেন। আজ নিজেদের ভারতীয় ভেবে গর্ব হচ্ছে।’’

সেলাম পিপল্স প্রেসিডেন্ট!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE