গুয়াহাটির বুথে সস্ত্রীক প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার। ছবি: উজ্জ্বল দেব।
‘ডিএল৩সিভিবি ৩০০০’ নম্বরের কালো রঙের বুলেটপ্রুফ বিএমডব্লিউ গাড়িটা দিসপুর সরকারি হাইস্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সাকুল্যে মিনিট পাঁচেক।
ওই সময়ের মধ্যেই সস্ত্রীক ভোট দিয়ে বেরিয়ে, সাংবাদিকদের সামনে ‘মোদী ঢেউ’ প্রসঙ্গে চাপা বিরক্তি প্রকাশ করে দিল্লি ফিরলেন অসমের সাংসদ তথা ‘দিসপুর নিবাসী’ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বলে গেলেন, “মোদী ঢেউ সংবাদমাধ্যমের তৈরি। বাস্তবে তেমন কিছু নেই। কংগ্রেস মোটেই জমি হারায়নি। ১৬ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করলেই ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
দেশের সব চেয়ে হাই প্রোফাইল দম্পতির ভোট ঘিরে দিসপুরের ওই স্কুলে তিন দিন ধরে কার্যত মহাযজ্ঞ চলেছে। শেষ পর্যন্ত মনমোহন এবং তাঁর স্ত্রী গুরশরণ কউর নির্বিঘ্নে এবং সম্ভবত শেষ বারের মতো গুয়াহাটিতে ভোট দিয়ে গেলেন। আজ নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় আধ ঘণ্টা দেরিতে দিল্লি থেকে গুয়াহাটির লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈ বিমানবন্দরে নামে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিমান। সেখান থেকে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে বিমান বাহিনীর কপ্টারে খানাপাড়ার মাঠে পৌঁছন মনমোহন। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূবনেশ্বর কলিতা। সাড়ে ১২টায় প্রধানমন্ত্রীর বিএমডব্লু গাড়ি ঢুকে যায় দিসপুর হাইস্কুল চত্বরের ১৮৮ নম্বর ভোট কেন্দ্রে।
ভোটার-তালিকায় দিসপুরে তাঁর ভাড়া বাড়ির কর্ত্রী হেমপ্রভা শইকিয়ার পরিবারের লোকেদের পরেই প্রধানমন্ত্রীর নাম ছিল। নিরাপত্তার কড়াকড়িতে বুথটি খালিই ছিল। গাড়ি থেকে নেমে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বুথে ঢুকে যান মনমোহন। বাইরের তাপমাত্রা তখন ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। মনমোহনের পরনে পরিচিত হাতকাটা জহর-কোট। গুরশরণের চন্দনরঙা সিল্ক। প্রিসাইডিং অফিসার তপন কছারি তাঁদের নাম মিলিয়ে নেন। পোলিং অফিসার দীপজ্যোতি কলিতা প্রধানমন্ত্রী তর্জনিতে কালির ফোঁটা লাগিয়ে দেন। পিচবোর্ডে ঘেরা ইভিএমের বোতাম টিপেই বুথ থেকে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গাড়ির দিকে এগোন সিংহ দম্পতি।
পুলিশ, এসপিজি আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন না। কিন্তু সকাল থেকে মনমোহনের ভোট ‘কভার’ করতে দাঁড়িয়ে থাকা অধৈর্য্য সাংবাদিকদের গলা ফাটানো ‘কোট’ আর ‘বাইট’-এর মরিয়া আব্দারে কাজ হল। গতিপথ বদলে, সাংবাদিকদের ব্যারিকেডের সামনে আসতেই প্রশ্নবাণ ছুটল প্রধানমন্ত্রীর দিকে।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আস্থা রাখার বার্তা ও সকলকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানোর পরই আক্রমণাত্মক মনমোহন। কয়েক দিন আগেই অসমে নির্বাচনী প্রচারসভায় তাঁকে ‘মৌন-মোহন’ বলে বিঁধেছিলেন মোদী। তারই পাল্টা হিসেবে মনমোহন দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, “কে বলছে কংগ্রেস দেশজুড়ে জমি হারিয়েছে? আমি আত্মবিশ্বাসী ফের কংগ্রেসই জিতবে। অপেক্ষা করুন। ১৬ মে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।” দেশজোড়া ‘মোদী ঢেউ’ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই তাঁর জবাব, “কীসের মোদী ঢেউ? ওই সব সংবাদমাধ্যমের তৈরি করা। দেশের মানুষ তাতে গা-ভাসাননি।” কেমন ফল হবে ভারতে? অসমে ক’টি আসন জিতবেন? সংক্ষিপ্ত ও শেষ জবাব, “আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাব।”
এর পর ক্যামেরার সামনে স্বামী-স্ত্রী তর্জনী উঁচিয়ে ‘পোজ’ দিয়েই উঠে পড়লেন বিএমডব্লুতে। বেলা ১টা নাগাদ বিমানবন্দর থেকে দিল্লি রওনা দিল প্রধানমন্ত্রী বিমান।
নিরাপত্তার সাঁজোয়া-বাহিনী বুথ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে কার্যত হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন প্রিসাইডিং অফিসার, উদালগুড়ির বাসিন্দা তপনবাবু। তিনি বলেন, “গতকালই জানতে পারি, প্রধানমন্ত্রী যে বুথে ভোট দেবেন, আমি তার প্রিসাইডিং অফিসার। খবর ছড়াতেই পরিবার, বন্ধুদের কাছে আমিও ভিআইপি! প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে গিয়েছেন। বেশ ভালই লাগছে।”
প্রধানমন্ত্রী বুথ থেকে বের হওয়ার পরেই সেখানে ভোট দিতে যান অজিতকুমার মহন্ত ও তাঁর স্ত্রী রিনা মহন্ত। বিমাকর্মী অজিতবাবু বলেন, “এ বারই হয়তো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভোট দেওয়ার শেষ সুযোগ পেলাম। গত কাল থেকেই খবর রাখছিলাম তিনি কখন আসবেন। আমরাও ওই সময়েই এসেছি। একেবারে এক লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়া হল না। তবু প্রধানমন্ত্রীর পরের ভোটদাতা হওয়া কি কম কথা?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy