Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মোদীর বার্তার মাঝেই জোড়া বিতর্ক

মঙ্গলবার বিদায়বেলায় বারাক ওবামা সুকৌশলে যে ভাবে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় তার দায়ভারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে গিয়েছেন, তাতে বেশ অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব। মুখে তাঁরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গির কোনও ফারাক নেই। কিন্তু দল থেকে শুরু করে সঙ্ঘ পরিবারের একাধিক ছোট-মাঝারি নেতার আচার-আচরণ যে মাঝেমধ্যেই সরকারকে বিব্রত করছে, সেটাও কবুল করছেন একান্তে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০৪:০৬
Share: Save:

মঙ্গলবার বিদায়বেলায় বারাক ওবামা সুকৌশলে যে ভাবে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় তার দায়ভারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে গিয়েছেন, তাতে বেশ অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব। মুখে তাঁরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গির কোনও ফারাক নেই। কিন্তু দল থেকে শুরু করে সঙ্ঘ পরিবারের একাধিক ছোট-মাঝারি নেতার আচার-আচরণ যে মাঝেমধ্যেই সরকারকে বিব্রত করছে, সেটাও কবুল করছেন একান্তে।

আজই সকালে দিল্লির এক অনুষ্ঠানে ভারতের বিবিধের মাঝে ঐক্যের ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করেছেন নরেন্দ্র মোদী। বলেছেন, “বিবিধতায় ভরা এই দেশ। বিবিধের মধ্যে ঐক্যই আমাদের সৌন্দর্য, শক্তি। সেটাই সব সময় আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।”

আর ঘটনাচক্রে আজই ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রশ্নে দুই বিতর্কে বিদ্ধ হয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল। প্রথম বিতর্ক প্রজাতন্ত্র দিবসে বিভিন্ন সংবাদপত্রে সরকারের দেওয়া বিজ্ঞাপনে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ দু’টি না-থাকাকে ঘিরে। দ্বিতীয় বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গের রামপুরহাটে ফের ধর্মান্তরণের অভিযোগ ঘিরে।

কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞাপনে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ দু’টি না-থাকায় বিতর্ক শুরু হয়েছিল আগেই। যার ব্যাখ্যা দিয়ে সরকারি সূত্রে বলা হয়, বিজ্ঞাপনে ১৯৫০ সালে গৃহীত সংবিধানের ছবি ছাপা হয়েছে। তখন ওই শব্দ দু’টি প্রস্তাবনার অংশ ছিল না। ১৯৭৬ সালে ৪২তম সংশোধনের মাধ্যমে তা প্রস্তাবনার অংশ হয়। কিন্তু এই ব্যাখ্যায় বিতর্কে দাঁড়ি পড়ার সুযোগ না-দিয়ে তাকে আরও উস্কে দিয়েছে বিজেপির শরিক দল শিবসেনা।

শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত বলেন, “ভুল করেও যদি বিজ্ঞাপনে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ দু’টি বাদ গিয়ে থাকে, এ বার সংবিধান থেকে পাকাপাকি ভাবে ওগুলি বাদ দেওয়া উচিত!” স্বাভাবিক ভাবেই এই মন্তব্য লুফে নিয়েছে বিরোধীরা। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, “আশা করি প্রধানমন্ত্রী বিদেশি অতিথির কথা শুনেছেন। এবং এ বার তিনি বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের দুর্বৃত্তদের ওপর রাশ টানবেন। (যদিও) মোদী কাজে কতটা করবেন, সংশয় রয়েছে তা নিয়েই।” প্রজাতন্ত্র দিবসের বিজ্ঞাপনের পিছনে সমাজে বিভাজন তৈরি করার জন্য বিজেপির পরিচিত নকশাই চোখে পড়ছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

এই বিতর্কের মাঝেই আবার সামনে এসে গিয়েছে রামপুরহাটের ঘটনা। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ধর্মান্তরণ প্রসঙ্গ রীতিমতো অস্বস্তিতে রেখেছে নরেন্দ্র মোদীকে। তিনি যতই উন্নয়ন আর সুশাসনের দিকে সরকারের অভিমুখ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন না কেন, সঙ্ঘ পরিবারের কট্টরপন্থীদের কাজকর্মে তা চাপা পড়ে যাচ্ছে বারেবারে। এর আগে আগরা এবং কোচিতে ধর্মান্তরণ অনুষ্ঠান নিয়ে বতর্ক হয়েছে। যা সামলাতে সংসদে দাঁড়িয়ে বিবৃতি দিতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। তার পরেও গত কাল হজম করতে হয়েছে বারাক ওবামার পরোক্ষ কটাক্ষ। সিরি ফোর্টের বিদায়-বক্তৃতায় ভারতের সহিষ্ণুতার ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওবামা বলেছেন, “ভারত তত দিন পর্যন্তই সাফল্যের পথে হাঁটবে, যত দিন না সে ধর্মের ভিত্তিতে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।” সরাসরি কারও নাম না-করলেও বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের বাড়তি তৎপরতাই যে তাঁর উদ্বেগের কারণ, তা গোপন থাকেনি।

কিন্তু ওবামার সতর্কবাণীর রেশ মেলানোর আগেই আজ বীরভূমের রামপুরহাট শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বনহাট পঞ্চায়েতের খড়মাডাঙা গ্রামে বুধবার বেশ কিছু আদিবাসী খ্রিস্টান ও মুসলিম মানুষকে ধর্মান্তরণের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিআইচপি) বিরুদ্ধে।

ধর্মান্তরণের অনুষ্ঠান নিয়ে গুঞ্জনটা শোনা যাচ্ছিল মঙ্গলবার থেকেই। যদিও ভিএইচপি-র কেউ এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। বুধবার সকালে খড়মাডাঙা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলার শিকারিপাড়া অঞ্চল থেকে শতাধিক আদিবাসী খ্রিস্টান ও মুসলিমকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁরা বাংলায় লেখা একটি ফর্মে সই বা টিপসই দিয়ে ঘোষণা করেছেন, কোনও রকম প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে বা চাপে পড়ে নয়, স্বেচ্ছায় হিন্দুধর্ম গ্রহণ করছেন। এ জন্য তাঁরা ভিএইচপি-র কাছে আবেদনও করেছিলেন। সইসাবুদের পরে হয় পুজোপাঠ এবং যজ্ঞ। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ভিএইচপি-র কেন্দ্রীয় ধর্ম প্রচারক যুগল কিশোর। এ দিনই রামপুরহাট শহরে ভিএইচপি-র শীর্ষ নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়ার সভা ছিল। খড়মাডাঙা গ্রামের অনুষ্ঠানে হাজির হওয়া অনেককে তোগাড়িয়ার সভাতেও নিয়ে আসা হয়েছিল।

প্রত্যাশিত ভাবেই তৃণমূল এই ঘটনার কড়া নিন্দা করেছে। তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন এক বিবৃতিতে বলেছেন, রাজ্য সরকার বিশদ তথ্য সংগ্রহ করছে। তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে জানাযাচ্ছে, ধর্মান্তরিতদের লোভ দেখানো হয়েছিল। ডেরেকের মন্তব্য, “অত্যন্ত কড়া হাতে এর মোকাবিলাকরা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

conversion advertisement rampurhat modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE