নৃপেন্দ্র মিশ্র
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পদে নৃপেন্দ্র মিশ্রর নিয়োগকে বৈধতা দিতে সরকার এতটাই মরিয়া যে, রীতিমতো দর কষাকষিতে নামল তারা। কংগ্রেস সূত্রের খবর তাদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে, মিশ্রের নিয়োগ নিয়মানুগ করার জন্য ট্রাই আইন সংশোধন বিলটি পাশ করাতে দিলে তারাও বিরোধী দলনেতার পদটি সনিয়া গাঁধীর দলকে দেওয়ার বিষয়ে ভাববে।
লোকসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিলটি পাশ করাতে অসুবিধা হবে না। কিন্তু রাজ্যসভায় বিজেপি সংখ্যালঘু। সেখানে সমস্যায় পড়বে সরকার। তার পরেও বিলটি পাশ করানোর পন্থা রয়েছে সরকারের হাতে। লোকসভা ও রাজ্যসভার যৌথ অধিবেশন ডেকে তারা এ কাজ করতে পারে। পরমাণু চুক্তি পাশ করাতে মনমোহন সরকার এই পথই বেছেছিল। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ প্রথমেই এই ব্রাহ্মাস্ত্রটি প্রয়োগে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, যে কোনও বিষয় আটকে গেলেই যৌথ অধিবেশন ডাকা সম্ভব নয়। তার চেয়ে কংগ্রেসকে বুঝিয়ে ভোটদানে বিরত করতে পারলেই মোদীর নৃপেন্দ্র-লাভ সম্ভব হবে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, বিলটি পাশ করতে দেওয়ার বদলে লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদ কংগ্রেসকে দেওয়ার টোপটি ইতিমধ্যেই দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু তাতে সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে ভিন্নমত রয়েছে কংগ্রেসেই। সনিয়ার দলের একাংশ মনে করেন, বিরোধী দলনেতার পদটি পেতে দলের উচিত বিলটি নিয়ে সরকারকে ছাড় দেওয়া। কারণ বিরোধী দলনেতার মর্যাদার বিষয়টি অনেক বড় ও দীর্ঘমেয়াদি লাভ হবে। কিন্তু আহমেদ পটেল ও জনার্দন পূজারীর মতো প্রভাবশালী নেতারা মাথা নোয়ানোর বিপক্ষে। তাঁদের মতে, দলের ভিক্ষে চাওয়া উচিত হবে না। তবে কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা, যতটা না কৌশলগত কারণে পটেল-পূজারীদের আপত্তি, তার চেয়ে বেশি ব্যক্তিগত। মল্লিকার্জুন খড়গে বিরোধী দলনেতা হয়ে বাড়তি গুরুত্ব পাবেন, এটা মেনে নেওয়া কঠিন তাঁদের পক্ষে।
কংগ্রেস কী সাড়া দেয় দেখে, তার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে মোদী সরকার। দরকারে যৌথ অধিবেশন ডেকে পাশ করানো হবে ট্রাই আইন সংশোধন বিলটি। কিন্তু পছন্দের এক জন ব্যক্তিকে সচিব হিসেবে পেতে মোদীর এই মরিয়া মনোভাবই কৌতূহলের কারণ হয়েছে। লোকসভায় বিরোধী দলনেতা পদের মতো এত বড় একটি পদকে পাল্লার উল্টো দিকে রাখতে তৈরি বিজেপি। পরমাণু চুক্তির মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে এর আগে যৌথ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল। নৃপেন্দ্র মিশ্রকে নিয়োগের মতো একটি আপাত সাধারণ বিষয়েও বিজেপি এখন সেই পদক্ষেপ করার কথা ভাবছে।
টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ট্রাই)-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছিলেন নৃপেন্দ্র মিশ্র। ট্রাই আইন অনুযায়ী, এই প্রতিষ্ঠানের কোনও চেয়ারম্যান অবসর নেওয়ার পর আর সরকারি পদে নিযুক্ত হতে পারেন না। কিন্তু মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়েই নৃপেন্দ্রকে তাঁর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি হিসাবে নিয়োগের জন্য অর্ডিন্যান্স জারি করেন। ট্রাই আইন বদলের প্রস্তাবও দেওয়া হয়। সেই অর্ডিন্যান্স আজ বিল হিসেবে লোকসভায় পেশ হতেই বিরোধিতার মুখে পড়ে সরকার।
কংগ্রেস নেতা শশী তারুর বলেন, “এটা নীতির প্রশ্ন। কংগ্রেস কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু বিজেপি কেন এতটা বেপরোয়া হবে যে এক জন ব্যক্তিকে নিয়োগ করার জন্য তাদের নিজেদের আমলে করা ট্রাই আইনটিকেই বদলে দেবে! সংসদে আলোচনার পথ এড়িয়ে কেন অর্ডিন্যান্স জারি করবে?”
রাজ্যসভায় কংগ্রেস সদস্য অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “বিজেপিই এক সময় ইউপিএ সরকারের আনা অর্ডিন্যান্সগুলির বিরোধিতা করত। বলত, অর্ডিন্যান্স রাজ কায়েম হয়েছে। কিন্তু সরকারে আসার দশ দিনের মধ্যে অর্ডিন্যান্স জারি করেছে তারা। তা-ও এক জন পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগের জন্য! ১২০ কোটি মানুষের দেশে কি যোগ্য আর কেউ নেই?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy