Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মোবাইল ফোনে নিশির ডাক, পকেট কাটছে প্রতারণা চক্র

ঠিক যেন নিশির ডাক! তবে এই নিশির ডাকে মৃত্যু হয় না। শুধু মোবাইলের বিল লাফিয়ে বেড়ে যায়। নিশির ডাক আসছে গভীর রাতে বা ভোররাতে, মোবাইলে মিস্ড কল হয়ে। এক বার, খুব বেশি হলে দু’বার রিং হয়েই কেটে যাবে। কয়েক দিন লাগাতার প্রায়ই ফোন আসবে। উৎসাহিত হয়ে সেই নম্বরে ফোন করলেই বিপদ।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০২:৪০
Share: Save:

ঠিক যেন নিশির ডাক!

তবে এই নিশির ডাকে মৃত্যু হয় না। শুধু মোবাইলের বিল লাফিয়ে বেড়ে যায়।

নিশির ডাক আসছে গভীর রাতে বা ভোররাতে, মোবাইলে মিস্ড কল হয়ে। এক বার, খুব বেশি হলে দু’বার রিং হয়েই কেটে যাবে। কয়েক দিন লাগাতার প্রায়ই ফোন আসবে। উৎসাহিত হয়ে সেই নম্বরে ফোন করলেই বিপদ। লোক ঠকানোর কারবার বুঝতে পেরে ফোন রেখে দিলেও দেখা যাবে, প্রিপেড মোবাইলের ব্যালান্স এক ধাক্কায় অনেকখানি কমে গিয়েছে। পোস্টপেড গ্রাহক হলে জ্বালা টের পাওয়া যাবে বিল হাতে পাওয়ার পর।

মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, ইদানীং যে সব নম্বর থেকে এই ধরনের ফোন আসছে, সেই সব আইএসডি কল-এর উদ্ভব হচ্ছে পাকিস্তান, পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে। কোনও নম্বর দুবাইয়ের তো কোনওটা গিনি-র। আবার সেই দেশ থেকেই যে ফোন করা হচ্ছে, এমন না-ও হতে পারে। এক দেশে বসে ঘুরপথে এমন ভাবে ওই সব ফোন করা হচ্ছে, যাতে মনে হয় অন্য আর একটি দেশ থেকে ফোন আসছে। সবটাই আসলে আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রের কারসাজি।

কী ভাবে কাজ করে এই প্রতারণা চক্র?

বিশ্ব জুড়ে এর নাম ‘ওয়াংগিরি প্রতারণা’। যার উৎপত্তি জাপানে। জাপানি ভাষায় ওয়াংগিরি-র অর্থ ‘একবার রিং, তার পরেই কেটে দেওয়া’। যে সব নম্বর থেকে মিস্ড কল দেওয়া হয়, সেগুলি ‘প্রিমিয়াম-রেট নম্বর’। তা দেখে পরে ওই নম্বরগুলিতে যে কেউ ফোন করলে তার জন্য খরচ বেশি। মিনিটে ৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিল হয়। সাধারণ ভাবেই মোবাইল পরিষেবা সংস্থা থেকে শুরু করে প্রিমিয়াম-রেট নম্বরের মালিকরা ওই সব কলের জন্য ওঠা টাকার ভাগ পেয়ে থাকেন। টেলিভিশন দেখে ফোন করে সহজ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে টাকা জিতে নেওয়ার মতো প্রতিযোগিতাতেও এই ধরনের ফোন নম্বর ব্যবহার হয়। এই ক্ষেত্রে, প্রতারকরা প্রথমে চড়া দাম দিয়ে মোবাইল পরিষেবা সংস্থা থেকে ‘প্রিমিয়াম-রেট নম্বর’ কেনেন। তার পর হাজার হাজার মোবাইল নম্বরে মিস্ড কল দেওয়া হয়। কেউ উৎসুক হয়ে ওই সব নম্বরে ফোন করলেই খেলা শুরু। সাধারণত মহিলারাই ফোন ধরেন। বিপুল অর্থের লটারি জেতার মতো নানা রকমের লোভ দেখানো হয়। যত বেশি সময় সম্ভব এ কথা, সে কথা বলে ফোনে আটকে রাখার চেষ্টা হয়। যাতে ফোনের খরচ বাড়ে। তাতে প্রতারকদের আয়ও বাড়ে।

টেলি যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বা ট্রাই-এর কর্তারা এই প্রতারণার কথা সবই জানেন। দু’বছর আগে এই প্রতারকদের রমরমায় নড়েচড়ে বসেছিল ট্রাই। গ্রাহকদের নিয়মিত ভাবে সচেতন করতে মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ট্রাই-এর এক কর্তা বলেন,“বিদেশ থেকে ফোন আসছে কি না, তা নম্বর দেখে সকলের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তাই অনেকে মিস্ড কল দেখে ফোন করে বসেন।” ফলে, মোবাইল সংস্থাগুলি গ্রাহকদের এসএমএস- করে সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে, বিদেশের অচেনা নম্বর থেকে মিস্ড কল এলে সাড়া না দিতে। ভারতের আইএসডি কোড +৯১ ছাড়া অন্য কোনও সংখ্যা দিয়ে শুরু ফোন নম্বর থেকে মিস্ড কল এলে সাবধান থাকতে বলা হচ্ছে। যে কোনও নম্বর থেকেই ফোন বা এসএমএস করে লটারি জেতার লোভ দেখানো হলে, সেই ফাঁদেও পা না দিতে বলা হচ্ছে। ভোডাফোন সংস্থার মুখপাত্র বলেন, “এসএমএস ও বিলের মাধ্যমে গ্রাহকদের সতর্ক করার পাশাপাশি এই ধরনের নম্বরে ফোন করার সময়েও ঘোষণা করে সাবধান করে দেওয়া হয়।”

সতর্ক করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই? মোবাইল পরিষেবা সংস্থার কর্তাদের বক্তব্য, কোনও অভিযোগ পেলে ওই সব নম্বর থেকে যাতে কোনও গ্রাহকের কাছেই ফোন না যায়, তার ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু এত বিভিন্ন রকমের নম্বর থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে ফোন আসে যে তাতে বিশেষ কিছু লাভ হয় না।

ট্রাই-এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখে মোবাইল পরিষেবা সংস্থা গুলি। কিন্তু নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেও আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রের কারও নাগাল পাওয়া এ দেশের কোনও পুলিশ বাহিনীর পক্ষেই সম্ভব হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

premangshu chowdhury isd calls fake calls
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE