ফাঁসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে আটক আন্দোলনকারীরা। পুলিশ ভ্যান থেকেও চলছে স্লোগান। মঙ্গলবার মুম্বইয়ে। ছবি: এএফপি।
ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি ঘিরে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। মতভেদ উচ্চতম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্যেও। আগামী কাল সকালে আবার বসছে সুপ্রিম কোর্টের উচ্চতর বেঞ্চ। কালই ঠিক হবে নির্ধারিত ৩০ জুলাই ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি হবে কিনা। তবে ওই ৩০ জুলাইকে দিন ধরেই প্রস্তুতি চলছে নাগপুর সেন্ট্রাল জেলে। আর সেই প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবেই ফাঁসির দড়ি নাগপুরে নির্ধারিত সময়ে ‘ডেলিভারি’ করে দিয়েছে বিহারের বক্সার জেল।
বিহার পুলিশের আইজি (কারা) হুকুম সিংহ মিনা বলেন, ‘‘ইংরেজ আমল থেকেই বক্সার জেলেই তৈরি হয় ফাঁসির দড়ি। এখন এটা এক রকমের নিয়মই হয়ে গিয়েছে। নাগপুর জেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দড়ির বরাত আসার পর তা তৈরি করে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে।’’
দেশে বক্সার জেলেই একমাত্র মোমের আস্তরণ দেওয়া ফাঁসির দড়ি (ম্যানিলা রোপ) তৈরি হয়। ১৯৩০ সাল থেকে বক্সার জেলের বন্দিরা এই দড়ি তৈরি করছে। এমন সূক্ষ্ম অথচ দৃঢ় ভাবে দড়িটি তৈরি হয় যাতে তা কোনও ভাবেই ছিড়ে না যায়। দড়ির ‘অর্ডার’ দেওয়ার পরে তা তৈরি করতে ১৫ দিন সময় লাগে। জেলের সুপারিনটেনডেন্ট এস কে চৌধুরী স্বীকার করেছেন, ফাঁসির দড়ি তৈরির কথা। তিনি বলেন, ‘‘গোটাটাই তো ওপেন সিক্রেট। তবে বিস্তারিত বলা যাবে না। সরকারের কিছু নিয়ম রয়েছে। আমরা সেই নিয়ম মেনেই রিকুইজিশন পাওয়ার পরে তা নির্দিষ্ট জেলের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।’’ নাগপুরে ‘অর্ডার সাপ্লাই’য়ের ছ’মাস আগে, শেষ বার উত্তর প্রদেশের নৈনি জেল থেকে ‘রিকুইজিশন’ এসেছিল। তাও নিয়ম মতোই পাঠানো হয়েছিল।
দড়ি তৈরিতে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। আসামির উচ্চতার চেয়ে তা ১.৬ গুণ বেশি বড় হবে। আসামির ওজনের কথাও মাথায় রাখা হয়। দড়ি তৈরির সময়ে বাতাসে আর্দ্রতা থাকতে হবে ৬৭ শতাংশের মতো। গঙ্গার পাশে হওয়ায় বাতাসে এই আর্দ্রতা থাকে বক্সারে। জেলে একটি ফাঁসির দড়ি তৈরির মেশিন রয়েছে। আট বন্দি মিলে সেটি ব্যবহার করে দড়িটি তৈরি করে। দড়ি তৈরি করতে ‘জি-৩৪’ মানের তুলোর প্রয়োজন হয়। পঞ্জাবের ভাতিন্দার কটন কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার গুদাম থেকে সেই তুলো বক্সার জেলে নিয়ে আসা হয়। দড়ি তৈরি করার পরে তিন দিন ধরে কলা, মাখন ও মোম দিয়ে পালিশ করা হয়। তাতেই তৈরি হয় তার ‘কিলার চরিত্র’।
২০০৪ সালের পর থেকে দশ বছরে দেশে তিন জনের ফাঁসি হয়েছে। তবে জেলের রেকর্ড অনুযায়ী, দড়ি পাঠানো হয়েছে ২৭টি জায়গায়। কলকাতার আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসি হয়েছিল বক্সার জেলের দড়ি দিয়েই। ২০০৭ সালে দিল্লির তিহাড় জেল থেকে অর্ডার পাওয়ার পরে দড়ি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সে সময়ে আফজল গুরুর ফাঁসির আদেশ পিছিয়ে যায়। ২০১৩ সালে অবশ্য নতুন দড়িতেই তাঁকে ফাঁসিতে চড়ানো হয়। সেই দড়িও যায় বক্সার থেকে। ২০১২ সালে ২৬/১১-র মুম্বই হামলার আসামি আজমল কসাভকেও বক্সারের জেলে তৈরি দড়িতেই ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy