Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মেমনের ফাঁসি হল, মালেগাঁওয়ে কী, প্রশ্ন কংগ্রেসের

দোরগোড়ায় বিহার ভোট। তার আগে ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির ঘটনাকে সামনে রেখে বিজেপি যখন জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে রাজনৈতিক সুবিধার সন্ধান করছে, তখন মালেগাঁও বিস্ফোরণের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাইল কংগ্রেস! রাজনীতির একই পথে হেঁটে বামেরা আবার টেবিলে রাখতে চাইলেন শ্রীকৃষ্ণ কমিশনের রিপোর্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ২১:২৬
Share: Save:

দোরগোড়ায় বিহার ভোট। তার আগে ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির ঘটনাকে সামনে রেখে বিজেপি যখন জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে রাজনৈতিক সুবিধার সন্ধান করছে, তখন মালেগাঁও বিস্ফোরণের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাইল কংগ্রেস! রাজনীতির একই পথে হেঁটে বামেরা আবার টেবিলে রাখতে চাইলেন শ্রীকৃষ্ণ কমিশনের রিপোর্ট।

স্পষ্ট কথায় না বললেও পরোক্ষে উভয়ের মোদ্দা বার্তা একটাই যে, বেছে বেছে মুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের ফাঁসি হচ্ছে। কিন্তু হিন্দু সন্ত্রাসবাদী বা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় অভিষুক্তদের এখনও শাস্তি হচ্ছে না কেন? এবং এ কথা বলে সংখ্যালঘু ও বিশেষ করে সমাজের ধর্মনিরপেক্ষ অংশকে বার্তা দিতে চাইছেন কংগ্রেস ও বাম নেতারা।

মুম্বই বিস্ফোরণের অন্যতম চক্রী ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি হয়েছে আজ সকালে। তবে এ ব্যাপারে রাজনীতির তাওয়া গরম হতে শুরু করেছে আগে থেকেই। আজ মেমনের ফাঁসি হওয়ার পর পরই কংগ্রেসের শীর্ষ সারির নেতা দিগ্বিজয় সিংহ বলেন, ‘‘সন্ত্রাসের ঘটনায় অভিযুক্তকে ফাঁসি কাঠে চড়াতে সরকার বেনজির ক্ষিপ্রতা ও দায়বদ্ধতার প্রমাণ দিল ঠিকই। কিন্তু মালেগাঁও ও সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্তদের সাজা দিতে মোদী সরকার এতটাই সক্রিয় হবে কি!’’ প্রসঙ্গত, ওই দুই বিস্ফোরণে স্বাধী প্রজ্ঞা ও কর্নেল পুরোহিতের মতো হিন্দু চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। বিরোধীদের এ-ও অভিযোগ, এঁরা সঙ্ঘ পরিবার ও বিশ্ব হিন্দু পরিবারের অনুগামী হিন্দু সংগঠনের প্রতিনিধি। তাঁদের প্রসঙ্গ কৌশলে খুঁচিয়ে তুলে দিগ্বিজয় আরও বলেন, ‘‘আশা করি, অন্য সন্ত্রাসের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতপাত, ধর্ম বিবেচনা করা হবে না। যদিও এ ব্যাপারে তদন্ত ও বিচারের গতি দেখে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কিন্তু সরকার এবং বিচারব্যবস্থা উভয়কেই এ বার বিশ্বাসযোগত্যার প্রমাণ দিতে হবে।’’

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, মৃতুদণ্ডের ব্যবস্থা নিয়ে দলের মৌলিক আপত্তি রয়েছে। তা ছাড়া শ্রীকৃষ্ণ কমিশনের রিপোর্টই বলছে যে, বাবরি ধ্বংসের কারণেই সংখ্যালঘুদের মধ্যে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়। সে ক্ষেত্রে মেমনকে ফাঁসি দেওয়া কতটা সঙ্গত হল? তা ছাড়া, বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও গোষ্ঠী দাঙ্গা বাঁধানোর চক্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন! কেনই বা মালেগাঁও বিস্ফোরণের বিচারের গতি শ্লথ? কেন ওই মামলায় সরকারি কৌঁসুলিকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে? অভিযুক্তদের প্রাণদণ্ডও চাওয়া হচ্ছে না। দাঙ্গার ঘটনায় অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও বিজেপি নেত্রী মায়া কোদনানি দীর্ঘ দিন গুজরাত সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর কথাও আজ টেনে আনেন সীতারাম।

কিন্তু কেন কংগ্রেস ও বামেরা এই অবস্থান নিচ্ছে? রাজনৈতিক সূত্রের মতে, উভয়ের আশঙ্কা, মেমনের ফাঁসির ঘটনা সামনে রেখে ফের মেরুকরণের রাজনীতি উস্কে দিতে পারে বিজেপি। জাতীয়তাবাদের ধ্বজা তুলে বিহার ভোটে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করতে পারেন নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি-র সেই রাজনীতিকে ভোঁতা করে দিতে মুখর হয়েছেন দিগ্বিজয় ও সীতরামরা। দিগ্বিজয়ের মতকে আজ দলীয় তরফে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও সমর্থন করে। সেই সঙ্গে এ-ও দাবি করে, এ বার দাউদ ইব্রাহিম ও টাইগার মেমনকেও দেশে নিয়ে এসে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করুক মোদী সরকার। পরে কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ভাগ্য ভাল যে ইউপিএ জমানাতেই আফজল গুরু ও আজমল কাসভের ফাঁসি হয়েছিল। ওই দুইয়ের ফাঁসি নিয়েও যদি কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত ধন্ধে থাকত, তা হলে খেসারত দিতে হত দলকে। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতায় এসেই আফজল, আজমল ও মেমনকে ফাঁসি দিয়ে জাতীয়তাবাদের হাওয়া সবটা শুষে নেওয়ার চেষ্টা করত বিজেপি। কিন্তু এখন অন্তত এ ব্যাপারে কংগ্রেসের সমালোচনা করা ওদের পক্ষে সম্ভব নয়।

কংগ্রেস ও বামেদের এই সমালোচনার মুখে পড়ে বিজেপি-র এক শীর্ষ সারির মন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসের কোনও রং বিচার সরকার করছে না। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, এ ব্যাপারে কমিশন গঠন হয়েছে। আদালতেও মামলা চলেছে, কিন্তু আডবাণীর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ মেলেনি। গুজরাত দাঙ্গার ঘটনায় ইউপিএ সরকার চেষ্টা করেও নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেনি। মেমনের ফাঁসির সঙ্গে এই বিষয়গুলি জোড়ার চেষ্টা করা একেবারেই ঠিক নয়। কেন্দ্রের ওই মন্ত্রী উল্টে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তাঁর কথায়, মালেগাঁও বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে ইউপিএ জোর করে সঙ্ঘ পরিবারের নাম টানতে চেয়েছিল। কিন্তু স্বাধ্বী প্রজ্ঞা ও কর্নেল পুরোহিতের বিরুদ্ধে যে ভাবে মামলা সাজানো হয়েছে তাতে অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে।

মজার ব্যাপার হল, হিন্দু সন্ত্রাসবাদীদের সাজা চাইলেও আজ সতর্ক ছিলেন দিগ্বিজয় তথা কংগ্রেস নেতারা। যাতে সংখ্যাগুরু ভাবাবেগে তা আঘাত না করে। তাই দিগ্বিজয় এ-ও বলেন, কাকতালীয় যে একই দিনে দুই মুসলিমের শেষকৃত্য সম্পন্ন হচ্ছে। এক জন তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে দেশের গৌরব বাড়িয়েছেন, অন্য জন তাঁর কুকর্মের জন্য গোটা সম্প্রদায়কে লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE