Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

রক্তপিপাসুর শাস্তির আবেদন ঘরছাড়াদের গানেও

“সংবিজিৎ-সংবিজিৎ তয়ে কিও তেজ খাইছো, তয়ে কিও তেজ খাইছো? তুক ফাঁসি দিম, তুক ফাঁসি দিম।” (সংবিজিৎ তুই কেন রক্ত খেলি? তোকে ফাঁসি দেব) না, কোনও প্রতিবাদী পোস্টার বা স্লোগান নয়। শোণিতপুর জেলার তিনিখুঁটির ত্রাণশিবিরে দাঁড়ানো আনমনা আদিবাসী কিশোর লাইনগুলি প্রচলিত লোকগীতির সুরে গেয়ে চলেছে। কে লিখে দিল কথা, কে দিল সুর, কে শেখালো গাওয়া? না কি, এ ভাবেই কেবল ধ্বংসের মধ্যেও সুর সৃষ্টি হয় জীবনের বহমান স্বতঃস্ফূর্ততায়?

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৮
Share: Save:

“সংবিজিৎ-সংবিজিৎ তয়ে কিও তেজ খাইছো, তয়ে কিও তেজ খাইছো?

তুক ফাঁসি দিম, তুক ফাঁসি দিম।” (সংবিজিৎ তুই কেন রক্ত খেলি? তোকে ফাঁসি দেব)

না, কোনও প্রতিবাদী পোস্টার বা স্লোগান নয়। শোণিতপুর জেলার তিনিখুঁটির ত্রাণশিবিরে দাঁড়ানো আনমনা আদিবাসী কিশোর লাইনগুলি প্রচলিত লোকগীতির সুরে গেয়ে চলেছে।

কে লিখে দিল কথা, কে দিল সুর, কে শেখালো গাওয়া? না কি, এ ভাবেই কেবল ধ্বংসের মধ্যেও সুর সৃষ্টি হয় জীবনের বহমান স্বতঃস্ফূর্ততায়?

এই শিবিরেই দু’দিন আগে বিধায়ককে সপাটে থাপ্পড় মেরেছিলেন এক মহিলা। ডেপুটি স্পিকারকে মাটিতে বসিয়ে খাওয়ানো হয়েছিল ত্রাণ শিবিরের ‘অখাদ্য’। ক্রোধ এখন খানিকটা সংহত। স্বজনহারানোর রাগের জায়গা নিয়েছে বেঁচে থাকার আর্তি। তাই হাত থেকে তির-ধনুক-দা-কুড়ুল নেমেছে। বরং, আরও একটা কম্বল, দুটো তরকারি, বাচ্চার জন্য ছেঁড়া সোয়েটারের প্রত্যাশায় সেই সব হাত প্রসারিত। আধপেটা শরীরে, শীতের কামড় ভুলতে হত্যাকারী সংবিজিৎকে নিয়ে গান বাঁধা হচ্ছে। কবে ফেরা যাবে ঘরে তার ঠিক নেই। প্রাণ ভয়ে পালানোর সময় ঘর থেকে কিছুই আনা যায়নি। তাই, রেখা মুর্মু, বাবলু ওঁরাও, লক্ষ্মী সরেনদের দাবি, সরকার যে চাল-ডাল দিচ্ছে, তার সঙ্গে বাসন দেওয়া হোক, নইলে রান্না হবে কোথায়? আধপোড়া শাড়ি পরে দাঁড়ানো বৃদ্ধা অন্তত একটা চাদরের জন্য কাঁদছেন। মায়েদের দাবি, নিজেরা তিন দিন ধরে এক কাপড়ে রয়েছেন। বাচ্চার জন্য শীতের একটা পোশাক অন্তত পাওয়া না গেলেই নয়।

প্রশাসন জানাচ্ছে, পরিবার পিছু দুটির বেশি কম্বল দেওয়া যায়নি। অনেক পরিবারেই সদস্য ৬ জন বা তার বেশি হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও মেনে নেন, সামর্থ্যের চেয়ে বেশি মানুষ ত্রাণ শিবিরে জড়ো হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। তবে, শোণিতপুর ও কোকরাঝাড়ের ত্রাণ শিবিরে আশপাশের গ্রামবাসীরা, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সংবাদ সংস্থাগুলিও ত্রাণ জোগাড় করে শিবিরে পৌঁছে দিচ্ছে।

তিন দিন ধরে কার্ফু-বন্ধঅবরোধে থমকে থাকা ঢেকিয়াজুলিতে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। আজ সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টো অবধি বিশ্বনাথ চারিয়ালি, ঢেকিয়াজুলি, রঙাপাড়া, চতিয়া, ঠেলামারায় কার্ফু শিথিল করা হয়। ওদালগুড়িতে সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৪টে অবধি কার্ফু শিথিল হয়। তবে, তার মধ্যেই অবড়ো সুরক্ষা সমিতি বাক্সার ভুতপোয়াবড়িতে, ভারত-ভুটান সীমান্তে, ১৫১ নম্বর জাতীয় সড়কে অর্থনৈতিক অবরোধ চালায়। রঙাপড়ার ময়নাজুলিতে আজ ফের ৫টি বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে।

বিভিন্ন জনজাতির মধ্যে বিভেদ তৈরির জন্যই এনডিএফবি জঙ্গিরা আদিবাসীদের উপরে হামলা করেছে বলে ধারণা প্রশাসনের। কিন্তু সেই বিভেদ ভুলিয়ে দিচ্ছে তিনিখুঁটির একটি বড়ো গ্রাম। সেখানে গ্রামবাসীরা প্রায় সব বাড়িতে, ঘরহারা আদিবাসীদের ঠাঁই দিয়েছেন। জঙ্গি হামলার জেরে জেলায় যখন আদিবাসী বনাম বড়োদের কাজিয়া তুঙ্গে, তখনই তিনিখুঁটির এই গ্রাম আশ্চর্য ব্যতিক্রম। সরকারি সাহায্যের পরোয়া না করে গ্রামবাসীরা নিজেদের ভাগের খাবার তুলে দিচ্ছেন আশ্রিত আদিবাসীদের মুখে।

কোকরাঝাড়ের সালাকাটিতে ১৩টি সংগঠন ও বিরসা কম্যান্ডো ফোর্সের নেতারা আজ সন্ধ্যায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এক মোমবাতি মিছিল বের করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

songbijit assam militants attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE