সিভিল সার্ভিস দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
দলের সাংসদদের পাশাপাশি এ বার আমলাদেরও চাঙ্গা করার চেষ্টায় নামলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জানিয়ে দিলেন, দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে তাঁদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকারের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করতেই পারেন। প্রশাসনের উপরে এই রাজনৈতিক প্রভাবটা উন্নয়নের বাধা নয়, বরং গণতন্ত্রের পক্ষে ভালই। সরকারি কাজে রাজনৈতিক বাগড়ার সঙ্গে এটাকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। আবার কথায় কথায় সব কাজে রাজনীতিকদের নাক গলানোও যে তাঁর নাপসন্দ সে কথাও উল্লেখ করেছেন মোদী। তাঁর বক্তব্য, আমলাদের কাজ করতে হবে দায়বদ্ধতার সঙ্গে, দায়িত্ব নিয়ে ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে। এই সূত্রে দেশের আমলাতন্ত্রে সংস্কারের পক্ষেও সওয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজ্ঞান ভবনে সিভিল সার্ভিস দিবসের অনুষ্ঠানে আমলাদের দায়দায়িত্বের কথাই শুধু বলেননি মোদী। সভার মেজাজ পাল্টে জানতে চেয়েছেন, উপস্থিত শীর্ষ আমলাদের এত গ্রাম্ভারি চাল কেন? একটু হাসির রোল। তার পরেই মোদীর পরামর্শ, ‘‘অত চাপের মধ্যে জীবন কাটিয়ে লাভ কী? ফুরফরে মেজাজে থাকুন টেনশন ভুলে।’’ মনে করিয়ে দিলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে ‘কোয়ালিটি টাইম’ কাটানোও কম জরুরি নয়।
এ কোন মোদী! সরকারে এসেই যিনি আমলা ও সারকারি বাবুদের উপরে প্রায় খড়্গহস্ত ছিলেন, সময়ে আসা, সময়ের কাজ সময়ে করা, দফতর সাফসুতরো রাখা নিয়ে। তাঁর মুখে আজ কেন এই উল্টো সুর! প্রশ্ন তুলেছেন রাজনীতিক ও আমলাদের অনেকে। তাঁদেরই একটি অংশ বলছেন, মনমোহন সিংহের জমানার শেষ দিক সরকারি কর্তারা সিদ্ধান্তহীনতা ও প্রবল নীতিপঙ্গুত্বে ভুগতেন। এমনও অভিযোগ, দেশের আমলাতন্ত্রের উপরে কার্যত কোনও কর্তৃত্বই ছিল না দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের। বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকারে এসে মোদী প্রথমেই এই অবস্থার বদল ঘটাতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। যাতে বিদেশি লগ্নিকারীদের চোখে এ দেশের লাইসেন্সরাজ, কর্মসংস্কৃতি ও লাল ফিতের ফাঁস নিয়ে ধারণাটা বদলায়। যে কারণে বারবার তিনি আমলাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি তাঁর ভাবনাগুলিকে নিয়ে কতটা সক্রিয় ভাবে এগোতে চান। এমনকী, নিজের হাতে রাশ ধরতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীকে বাদ দিয়েও সচিবদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এখন যখন বছর ঘুরতে চলেছে, মোদীর কাছে এটা স্পষ্ট, এ বার প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করে দেখাতে হবে। ভারত উদয় স্লোগান ব্যুমেরাং হয়েছিল অটলবিহারী বাজপেয়ীর। এখন ‘অচ্ছে দিন’ স্লোগান নিয়েও মস্করা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। অসন্তোষ বাড়ছে সরকারের বিরুদ্ধে। অথচ একা তিনিই সুরাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা বলে যাচ্ছেন বারবার। এই পরিস্থিতিতেই বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরুর মুখে দলের সাংসদদের তিনি বুঝিয়েছেন, সরকারটা তাঁর একার নয়। সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে সরকারের লক্ষ্যপূরণে। সরকারের ভাল কাজগুলির কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে দলের প্রত্যেক সাংসদ-মন্ত্রী-নেতাকে। আজ কার্যত সেই একই বার্তা দিলেন দেশের শীর্ষ আমলাদের। কাজটা করবেনতো এঁরাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy