Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাজেশ-নূপুর নির্দোষ, দাবি আরুষির দাদুর

আরুষি খুন বা তদন্ত চলাকালীন গত সাত বছরে কোনও দিনই মুখ খুলতে দেখা যায়নি তাঁকে। এই প্রথম এক খোলা চিঠিতে নিজের কথা উজাড় করে দিয়েছেন আরুষির দাদু এবং নূপুর তলোয়ারের বাবা বি জি চিটনিস।

সংবাদ সংস্থা
নয়ডা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৫৭
Share: Save:

আরুষি খুন বা তদন্ত চলাকালীন গত সাত বছরে কোনও দিনই মুখ খুলতে দেখা যায়নি তাঁকে। এই প্রথম এক খোলা চিঠিতে নিজের কথা উজাড় করে দিয়েছেন আরুষির দাদু এবং নূপুর তলোয়ারের বাবা বি জি চিটনিস। বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত ওই ক্যাপ্টেন পাশে দাঁড়িয়েছেন মেয়ে নূপুর এবং জামাই রাজেশের। ফেসবুকে ‘ফ্রি দ্য তলোয়ারস’ নামে একটি পেজে প্রকাশিত হয়েছে সেই লেখা।

তিনি লিখেছেন: ‘‘আমার কাছে একটা দেবশিশু ছিল- আরুষি। ১৯৯৪-এর মে মাসে জন্মানোর পর থেকে আমাদের বাড়িতেই একটু একটু করে বড় হয়ে উঠছিল ও। ফুটফুটে সুন্দর মেয়েটা আমাদের জীবনে খুশির বন্যা এনে দিয়েছিল।’’

‘‘কিন্তু ওর ১৪ বছর হতেই ভাগ্য নিষ্ঠুর ভাবে ওর কাছ থেকে আমাদের আলাদা করে দিল। নিজের বাড়িতে নিজের বিছানায় খুন হতে হল ওকে।’’

‘‘একটা নিথর পুতুলের মতো ও শুয়েছিল বিছানায়। দৃশ্যটা দেখে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। চার পাশে তখন অনেকে দাঁড়িয়ে। কেউ আমায় দেখছে। কারও চোখে কৌতূহল, কারও শূন্য দৃষ্টি। এমন একটা ঘটনা ঘটেছে কেউ বিশ্বাস করতে পারছিল না। দেখছিলাম আমার মেয়ে নূপুর হাউহাউ করে কাঁদছে। জামাই রাজেশ পাগলের মতো ছোটাছুটি করছে।’’

‘‘এর পর দিন কাটতে থাকল। স্থানীয় পুলিশ অনিচ্ছার সঙ্গে উল্টোপাল্টা তদন্ত করে রাজেশকে গ্রেফতার করল। তার পরে মেরঠের আইজি-র সেই কুখ্যাত সাংবাদিক বৈঠকের পরে গোটা বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু সংবাদমাধ্যমে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ বারবার আমাদের বলেছিল কোথাও কোনও কথা না বলতে। কারণ সেটা তদন্তে প্রভাব ফেলবে। কিন্তু ওদের উদ্দেশ্য অন্য কিছু ছিল। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ওরা আমাদের চুপ করিয়ে দিয়েছিল।’’

‘‘এর পরে সংবাদমাধ্যমে ভয়ঙ্কর ভাবে আরুষি আর তার বাবা-মায়ের চরিত্রহননের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিচারের নামে প্রহসনের ফলে নূপুর-রাজেশ দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে। যে দিন এই রায় শুনেছিলাম, সে দিন লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে গিয়েছিল। চোখ ভরে গিয়েছিল জলে। ভাগ্য এত বড় ধাক্কা দেবে কোনও দিন ভাবিনি। এই ৮৩ বছর বয়সে আর মনে হয় না ওদের কোনও দিন জেলের বাইরে দেখব। কিন্তু মানুষ এই ভয়ানক অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে— এটা দেখে মরতে চাই আমি। পুলিশ, সংবাদমাধ্যম, সিবিআই বা বিচারব্যবস্থা— প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান আমায় ঠকিয়েছে।’’

এর পরে বি জি বলেছেন, ‘‘আমি বায়ুসেনায় থাকাকালীন দেশের সম্মান রক্ষা করেছি। আমার ছেলেমেয়েদের কি স্বচ্ছ বিচার পাওয়ার অধিকার নেই? দেশের জন্য দু’টো যুদ্ধ লড়েছি। সততা, একাগ্রতার সঙ্গে দেশের সেবা করেছি। এই বৃদ্ধ বয়সে দেশের প্রতিটি বড় প্রতিষ্ঠান থেকে এটাই কি আমার প্রাপ্য?’’

‘‘নূপুর আর রাজেশের সঙ্গে যা হয়েছে, তা ভাবলেই ভয়ঙ্কর লাগে। সমাজের যে কারও সঙ্গে এমনটা হতে পারে? মাঝে মাঝে অবাক লাগে এই দেশের স্বপ্ন কি দেখেছিলাম? এই দেশের জন্যই লড়াই করেছিলাম?’’— এই প্রশ্ন রেখেই চিঠি শেষ করেছেন প্রাক্তন বায়ুসেনা কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE