Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
উদ্ধার বিস্ফোরক, ধৃত ৪

শিলচরে সেতু ওড়ানোর ছক ফাঁস

সদরঘাট সেতু উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে দিল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে চারজনকে। উদ্ধার করা হয়েছে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইজ তথা আইইডি বোমা, ইলেকট্রনিক ডিটোনেটর ও ৫২টি জিলেটিন স্টিক। সঙ্গে একটি স্কেচ।

আদালতে তোলা হচ্ছে ধৃতদের। ছবি: স্বপন রায়।

আদালতে তোলা হচ্ছে ধৃতদের। ছবি: স্বপন রায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৪:০১
Share: Save:

সদরঘাট সেতু উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে দিল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে চারজনকে। উদ্ধার করা হয়েছে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইজ তথা আইইডি বোমা, ইলেকট্রনিক ডিটোনেটর ও ৫২টি জিলেটিন স্টিক। সঙ্গে একটি স্কেচ। এর মাথায় সদরঘাট সেতুকে চিহ্নিত করে লেখা হয়েছে ‘মেন টার্গেট’। লক্ষ্মীপুরের বরাক সেতু পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা আঁকা রয়েছে নক্‌শাটিতে। নাগা জঙ্গিরাই এর পিছনে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সুপার রাজবীর সিংহ জানান, পরিকল্পনা করেই সোনাই থানার তুলাগ্রামে ঘাঁটি গেড়েছিল এনএসসিএন-খাপলাং গোষ্ঠীর দুই ক্যাডার। পক্ষ কাল ধরে তারা আসা-যাওয়া করছিল। মাঝেমধ্যেই তুলাগ্রামের মস্তর আলির ঘরে রাত কাটাত। গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে কাল রাতে আসাম রাইফেলসকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। টের পেয়েই অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে জঙ্গিরা পালিয়ে যায়। তল্লাশি চালিয়ে মস্তর আলির ঘর থেকে বিস্ফোরক সামগ্রীগুলি উদ্ধার করা হয়। জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে ৬৫ বছরের মস্তর আলি ও তার দুই ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জেরা করে তুলে আনা হয় একই এলাকার আতাবুর রহমান লস্করকে।

মস্তর আলি রাজমিস্ত্রিদের ঠিকাদার। তার বড় ছেলে আজমল হোসেন লস্করও ঠিকাদারি করে। আরেক ছেলে আফজল হোসেন কাছাড় কলেজে পড়ে। জেরায় তারা পুলিশকে জানিয়েছে, এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য আতাবুর রহমান লস্কর তাদের আত্মীয়। তার মাধ্যমেই নাগা যুবকদের সঙ্গে তাদের পরিচয়। বাড়িতে আসা-যাওয়া। ক’দিন আগে দু’টি ব্যাগ নিয়ে তারা আসে। সরলমনেই তারা অনুমতি দেয়। বোমা বা বিস্ফোরক রাখার কথা জানা ছিল না বলেই দাবি মস্তর ও তার ছেলেদের।

গ্রেফতারের পর থেকে আতাবুর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। মাওবাদীদের পর নাগা জঙ্গি। পুলিশ সুপার অবশ্য সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করেছেন। তাঁর দাবি, নিরাপত্তা রক্ষীরা সতর্ক রয়েছে। জঙ্গি আনাগোনা আগেও ছিল, এখনও আছে। পুলিশ সক্রিয় বলেই ধরা পড়ছে। এতে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। তিনি জানান, রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে সাড়ে ছয় কিলোগ্রাম জিলেটিন ও দুই কিলোগ্রাম আইইডি-র বিস্ফোরণ ঘটালে সদরঘাট সেতু পুরোপুরি উড়ে যেত। এতে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। ভয়াবহ দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচা গিয়েছে বলেই মনে করছেন তিনি।

কেন এমন পরিকল্পনা নাগা জঙ্গিদের, তা-ই এখন খুঁজে দেখছেন পুলিশ কর্তারা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষিণী শঙ্করনকে পাশে বসিয়ে রাজবীর সিংহ বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁদের মনে হচ্ছে, নাগা জঙ্গিরা মণিপুর থেকে এখানে আসা যাওয়া করে। মূল লক্ষ্য, বরাকবাসীকে বিপাকে ফেলা নয়। গুয়াহাটি থেকে শিলচর হয়ে মণিপুরের যে সড়ক যোগাযোগ চালু রয়েছে, তাকে স্তব্ধ করে দিয়ে তারা মণিপুর সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়।

উল্লেখ্য, গত মাসেও খাপলাং গোষ্ঠীর দুই ক্যাডার কাছাড় জেলার জিরিঘাটে ধরা পড়েছিল। আরও কেউ লুকিয়ে রয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পুলিশ বিভিন্ন সূত্রকে কাজে লাগিয়েছে। সেই সঙ্গে কাল রাতে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকে গ্রেফতারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে পুলিশ সুপার জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE