শিলচরে খোদ সন্তোষমোহন দেবের ওয়ার্ডে পুরভোটের প্রার্থী খুঁজতে হিমশিম হল কংগ্রেস। পছন্দের কাউকে পাচ্ছিলেন না সাংসদ সুস্মিতা দেব। চার দশক ধরে ‘দেব-বাড়ি’র দখলে থাকা ওই আসনে শেষে মনোনয়ন দেওয়া হলো আনকোড়া এক মুখকে।
শ্রাবণী দাস। বাংলায় স্নাতক, বিএড-ও পড়েছেন। সম্প্রতি উত্তীর্ণ হন শিক্ষক টেট পরীক্ষা। সর্বশিক্ষা অভিযানে অস্থায়ী কর্মী। পাড়ার ছেলেমেয়েদের টিউশনও পড়ান। আচমকা ভোট-রাজনীতির ময়দানে নিয়ে আসায় নিজেই হতবাক তিনি।
১৯৭২ সালে শিলচর পুরসভার ভোটে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড জিতেছিলেন সন্তোষবাবু। তার পর থেকে এখন পর্যন্ত তা ছিল তাঁর পরিবারের হাতে। সেখানে তা হলে এমন পরিস্থিতি হল কেন? কংগ্রেস সূত্রে খবর, দীর্ঘকাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকা সন্তোষবাবু এখন অসুস্থ। প্রাক্তন বিধায়ক বীথিকা দেব পুরসভার ভোটে দাঁড়াতে নারাজ। সুস্মিতাদেবী সাংসদ। অবশ্য প্রার্থী খুঁজতে সমস্যা শুধু এটাই ছিল না। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডটি সম্প্রতি তফসিলি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়। তাতেই পরিস্থিতি কিছুটা জটিল হয়ে পড়ে। ওই ওয়ার্ডের অন্তর্গত মালিনিবিলের একাংশ ও তারাপুর। ভোটার সংখ্যা ৫ হাজার ৪৯০। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ১৫০ জন তফসিলি জাতির হলেও, রাজনীতিতে আগ্রহী ছিলেন না কোনও মহিলার। এতেই আরও চাপে পড়েছিল কংগ্রেস।
প্রার্থী খুঁজতে মাসচারেক ধরে ওই এলাকার লোকেদের সঙ্গে কথা বলেন সাংসদ সুস্মিতাদেবী। অলিগলি ঘুরতে থাকেন দলের নেতা, অনুগামীরা। আচমকা মান্না চক্রবর্তী, উত্তম পালের মতো স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের নজরে পড়েন শ্রাবণী।
শ্রাবণীর কথায়, “পুরসভার ভোটে কংগ্রেসের টিকিটে লড়াইয়ের প্রস্তাব পেয়ে বিশ্বাস হচ্ছিল না। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তবে প্রথমে জানিয়ে দিয়েছিলাম, এ সব আমার কাজ নয়। বাবা নেই, ৭ ভাইবোনের কারও তেমন আর্থিক সঙ্গতি নেই। চাকরি তাই খুব জরুরি।”
শ্রাবণীদেবী ফিরিয়ে দেওয়ায় কংগ্রেস শিবিরে ফের প্রার্থীর খোঁজ শুরু হয়। কাউকেই পছন্দ হচ্ছিল না সুস্মিতাদেবীর। শেষে ফের শ্রাবণীর কাছে যান কংগ্রেস নেতারা। অনেক বুঝিয়ে তাঁকে রাজি করানো হয়। সর্বশিক্ষা অভিযানের চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে হয় তাঁকে।
পুরভোটের মনোনয়ন দাখিলের পর অবশ্য পুরোপুরি রাজনীতির ভাষা বললেন শ্রাবণীদেবী। তাঁর মন্তব্য, “কষ্ট করে বড় হয়েছি। সুযোগ পেলে অন্যের কষ্ট কমানোর চেষ্টা করব।”
স্থানীয় কংগ্রেস সাংসদের বক্তব্য, “প্রার্থী খুঁজতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে মনোনীত প্রার্থী এলাকার খবর রাখেন। উনিই জিতবেন।”
শিলচরে প্রার্থী খুঁজতে গেরুয়া শিবিরকে অবশ্য কংগ্রেসের মতো বিপাকে পড়তে হয়নি। সেখানে বিজেপি-র টিকিটে লড়বেন সুরুচি দাস। দলের জেলা সম্পাদক প্রসেনজিত ভট্টাচার্য বলেন, “সুরুচিদেবী এলাকায় পরিচিত মুখ। এ বার তা-ই আমরাই এগিয়ে।” আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি ২৮ আসনের শিলচর পুরসভার ভোটগ্রহণ। গণনা হবে ১২ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচন দফতরের নথি অনুযায়ী, চার মাস আগে শিলচর বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ পাল সেখানে ৩৫ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছিলেন।
শিলচরে চেয়ারম্যান প্রার্থী
আইনজীবী নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুরকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী করে শিলচর পুরভোটে লড়তে নামছে বিজেপি। এ কথা জানিয়েছেন রাজ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায়। তিনি বলেন, “এক মাত্র শিলচরেই পুর-নির্বাচনের আগে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ঠিক করা হয়েছে।” শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পাল আশা করেছেন, নীহারবাবুর নেতৃত্বে তাঁরা পুরসভার দুই-তৃতীয়াংশ আসন জিতবেন। বিজেপি জেলা সভাপতি কৌশিক রাই জানান, নীহারবাবুর বয়স সত্তরের কোঠায়। অন্য প্রার্থীদের গড় বয়স ৪০-৪২। তাঁদের দু’জন স্নাতকোত্তর, ন’জন স্নাতক, দু’জন আইনের ডিগ্রিধারী। ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের নিয়মে মহিলাদের জন্য ১৪টি আসন ঠিক থাকলেও, শিলচরে বিজেপি ১৬ জন মহিলাকে প্রার্থী করেছে।
দলীয় নেতৃত্ব জানিয়েছেন, শিলচরে সব আসনে লড়বে বিজেপি। গত লোকসভা ভোটের হিসেব দেখিয়ে দলীয় নেতারা যুক্তি দিয়েছেন, ২০১৪-র এপ্রিলের ওই নির্বাচনে শিলচরের ২৮ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টিতে বিজেপি বেশি ভোট পেয়েছিল। গত সেপ্টেম্বরে বিধানসভা উপ-নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৬টিতেই প্রথম জায়গায় ছিল বিজেপি।
বিজেপি সূত্রে খবর, ভোটের আগে আগামী কাল দলীয় ইস্তেহার প্রকাশ করা হবে। পুরসভার ক্ষমতা পেলে কী কী সুবিধা নাগরিকরা পাবেন, সে কথা তাতে জানানো হবে। ভোটে জিতলে দুর্নীতিমুক্ত পুরসভা, জঞ্জালমুক্ত পরিবেশ, জমে থাকা জল, পার্কিং সমস্যা মেটানোর দিকে বিশেষ নজর দেবে বিজেপি-র পুর-বোর্ড।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy