Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সুষমার স্বামীকে সংস্থার কর্তা করার প্রস্তাব দেন ললিত

বসুন্ধরা রাজে বুঝি একটু দম ফেলার সুযোগ পেলেন। কারণ, ললিতকাণ্ডে আজ ফের কেচ্ছার কঙ্কাল বেরোল সুষমা স্বরাজের ঘর থেকে! আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত পলাতক প্রাক্তন আইপিএল কর্তা ললিত মোদীকে গত বছর জুলাই মাসে ব্রিটিশ ভিসা পাইয়ে দিতে সাহায্য করেছিলেন মোদী সরকারের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। নতুন তথ্য ফাঁসে আজ জানা গিয়েছে, তার ঠিক এক মাস পরেই নিজের ব্যবসায়িক সংস্থা ইন্দোফিলের অধিকর্তা পদে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য সুষমার স্বামী স্বরাজ কৌশলকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ললিত মোদী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ১৯:৪৯
Share: Save:

বসুন্ধরা রাজে বুঝি একটু দম ফেলার সুযোগ পেলেন। কারণ, ললিতকাণ্ডে আজ ফের কেচ্ছার কঙ্কাল বেরোল সুষমা স্বরাজের ঘর থেকে!
আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত পলাতক প্রাক্তন আইপিএল কর্তা ললিত মোদীকে গত বছর জুলাই মাসে ব্রিটিশ ভিসা পাইয়ে দিতে সাহায্য করেছিলেন মোদী সরকারের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। নতুন তথ্য ফাঁসে আজ জানা গিয়েছে, তার ঠিক এক মাস পরেই নিজের ব্যবসায়িক সংস্থা ইন্দোফিলের অধিকর্তা পদে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য সুষমার স্বামী স্বরাজ কৌশলকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ললিত মোদী। যাতে তাঁর অনুপস্থিতিতে কৌশল তাঁর হয়ে সংস্থার কাজ সামলান। যদিও স্বরাজ কৌশল সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। তাই প্রস্তাবটি পরে প্রত্যাহারও করে নেওয়া হয়। তবে ললিত মোদীর বাবা তথা ওই সংস্থার কর্ণধার কে কে মোদী আজ স্বীকার করেছেন, তাঁদের নিয়মিত বেতনভোগীর তালিকায় ছিলেন স্বরাজ কৌশল।
সুষমার বিরুদ্ধে এই নতুন তথ্য ফাঁস হতেই তাঁর ইস্তফার দাবিতে আজ আরও চাপ বাড়ালেন বিরোধীরা। তাঁদের মতে, মোদী-সুষমা আর্থিক আঁতাতের ছবিটা এখন জলের মতোই পরিষ্কার। ললিত মোদী যাতে পাসপোর্ট ফিরে পান সে জন্য তাঁর হয়ে উচ্চ আদালতে মামলা লড়েছিলেন সুষমার স্বামী ও মেয়ে। সুষমার দেওরের ছেলেকে ব্রিটেনের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার জন্য এর পর বিলেতে তদ্বির করেন ললিত। তার পর মোদীকে ব্রিটিশ ভিসা পাইয়ে দিতে সাহায্য করেন সুষমা, যাতে বিদেশে তিনি ‘মোচ্ছব-ফূর্তি’ করে বেড়াতে পারেন। সব শেষে ললিত মোদী তাঁর সংস্থায় স্বরাজ কৌশলকে ডিরেক্টর করার প্রস্তাব দেন।

বিরোধীদের এই সব অভিযোগ সামাল দিতে আজ প্রথম বার মুখ খোলেন স্বরাজ কৌশল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গত বিশ বছর ধরে আমি ললিত মোদীর আইনজীবী। তবে ইন্দোফিলের অধিকর্তা পদের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। এতে বিতর্কের কী আছে?’’ অন্য দিকে কে কে মোদী বলেন, ‘‘যেহেতু প্রস্তাবটি পরে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাই এ ব্যাপারে কোম্পানির বোর্ডের বৈঠকে কোনও আলোচনাই হয়নি।’’ বিজেপি-রও বক্তব্য, অহেতুক কাদা ছেটানো হচ্ছে। কেউ রাজনীতিতে রয়েছেন বলে তাঁর পরিবারের সদস্য তাঁদের পেশা ছেড়ে দেবেন! অন্যায় আবদার নয়!

জবাবে কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী কী ভাবছেন? মানুষ ঘাস খায়! শুধু জল খেয়ে থাকে! কিছুই বোঝে না! মোদ্দা ব্যাপার হল, এক জন ফেরার অভিযুক্তকে সরকার যখন খুঁজছে, তখন তাঁকে পালিয়ে বেড়াতে সাহায্য করছেন বিদেশমন্ত্রী। আর সেই সাহায্যের সুবিধা নিচ্ছে তাঁর গোটা পরিবার।’’ বস্তুত সুষমা-বসুন্ধরার কেচ্ছাকে সামনে রেখে কংগ্রেসের মুখ্য নিশানা এখন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’র স্লোগান তুলে মোদী নিজের যে মূর্তি বানিয়েছেন, কংগ্রেস চাইছে হ্যাঁচকা টান মেরে সেটাই খান খান করতে। আর তাই মোদীর মৌন থাকা নিয়ে ফের কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, ‘‘সুষমা-বসুন্ধরা-পঙ্কজাকে অমিত শাহ কী সার্টিফিকেট দিচ্ছেন আমরা কেন দেখতে যাব? প্রধানমন্ত্রী শুধু বিজেপি-র নন, দেশের সবার। তিনি সাংবিধানিক পদে বসে রয়েছেন। তাঁকেই জবাব দিতে হবে।’’

এ প্রসঙ্গে আজ দু’টি অতীত দৃষ্টান্তের কথা তুলে ধরেছে কংগ্রেস। এক) ইউপিএ জমানার বিদেশমন্ত্রী নটবর সিংহ। এবং দুই) দিল্লিতে বর্তমান আপ সরকারের সদ্য প্রাক্তন আইনমন্ত্রী জীতেন্দ্র তোমর। কংগ্রেসের যুক্তি হল, ভোলকার কাণ্ডে নটবর সিংহের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। আদালতে তাঁর কিন্তু সাজা হয়নি। কিন্তু নৈতিক দায় নিয়ে তাঁকে বিদেশমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। আবার হালফিলে ভুয়ো ডিগ্রি কাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে গরাদের পিছনে রয়েছেন আপ সরকারের আইনমন্ত্রী। তা হলে কি বোঝা যাবে, মোদীর মন্ত্রীরা মহামানব? তাঁদের জন্য দেশে পৃথক আইন চলবে! রাজনীতিতে মোদী কি তা হলে নৈতিকতার নতুন মানদণ্ড তৈরি করছেন? মোদী মরালিটি বা নরেন্দ্র নৈতিকতা! এ কথা বলেই আজ ললিত কাণ্ডে পাঁচ দাবি সরকারের টেবিলে ফেলেছে কংগ্রেস। একই দাবি জানিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

ঘটনা হল, এক দিকে যেমন ললিতকাণ্ডে নতুন তথ্য ফাঁসে সরকারের অস্বস্তি বেড়েছে, তেমনই ললিত মোদীও বিলেতে বসে ধারাবাহিক টুইটের মাধ্যমে জলঘোলা করে চলেছেন। তাতে রাজনীতি, ক্রিকেট রাজনীতি, বাণিজ্যিক স্বার্থ নিয়ে নানা কেচ্ছার অভিযোগ তুলেছেন। এমনকী, এ-ও প্রশ্ন তুলেছেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে যদি ইডি তদন্ত হয়, তা হলে অরুণ জেটলি বা রাজীব শুক্ল-র বিরুদ্ধে কেন তদন্ত হবে না। এরই পাশাপাশি আজ বরুণ গাঁধী ও সনিয়া গাঁধী প্রসঙ্গেও টুইট করেছেন ললিত মোদী। তাঁর দাবি, কয়েক বছর আগে লন্ডনে এক বার তাঁর সঙ্গে বরুণের দেখা হয়েছিল। বরুণ তাঁকে বলেছিলেন, ইতালিতে সনিয়া-র এক বোন রয়েছেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। এ-ও জানিয়েছিলেন, আন্টিকে ৬০ মিলিয়ন ডলার দিলে সব মামলা মিটে যাবে।

মোদীর এই টুইট নিয়ে আজ প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় কংগ্রেসকেও। তা হল, ললিত মোদী যখন সুষমা বা বসুন্ধরাকে নিয়ে কোনও টুইট করছে সেটা ধ্রুবসত্য বলে মানছে কংগ্রেস, তা হলে বরুণের ব্যাপারে কেন সত্যতা স্বীকার করবে না?

জবাবে কংগ্রেস মুখপাত্র তথা আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘এ সব বলে আসলে ছোট মোদী বড় মোদীর থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছেন। কিন্তু সুষমা-বসুন্ধরার ক্ষেত্রে ফারাক রয়েছে। ওঁদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও নথি রয়েছে। ওঁরা সেগুলির সত্যতা স্বীকার করছেন। কংগ্রেসের কারও বিরুদ্ধে এমন তথ্য বা নথি আছে কি! থাকলে ললিত মোদী দেখান।’’

মজার ব্যাপার হল, সুষমা-ললিত যোগের ব্যাপারটা সামনে চলে আসায় আজ ঢোলপুরের প্রাসাদ থেকে কিছুটা দৃষ্টি সরেছে। তা ছাড়া সূত্রের খবর, ঢোলপুরের প্রাসাদের মালিকানা নিয়ে বেশি হইচই করায় কংগ্রেসেরও একাংশ ক্ষুব্ধ। তাঁদের মতে, কংগ্রেসে অনেক রাজা-মহারাজা রয়েছেন। দু’দিন বাদে তাঁদের সম্পত্তি নিয়ে কেঁচো খোঁড়া শুরু হলে কী হবে? এই অবস্থায় আজ কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে অভিষেক বলেন, ঢোলপুরের প্রাসাদের মালিকানা কার সেটা বড় ব্যাপার নয়। আসল বিষয় হল ওই হোটেল সংস্থায় ললিত মোদীর বিনিয়োগ। তাতেই বসুন্ধরা-ললিত মোদী অশুভ আর্থিক আঁতাত প্রমাণিত হয়।

কংগ্রেসের পাঁচ দাবি

• ললিত মোদীকে ভিসা পাইয়ে দিতে ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন সুষমা স্বরাজ। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী সরকার প্রকাশ করুক।

• মোদীকে ভিসা পাইয়ে দিতে ব্রিটিশ সাংসদ কিথ ভাজকে যে চিঠি সুষমা লিখেছিলেন তা সরকার প্রকাশ করুক।

• ললিত মোদীর সঙ্গে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ কত বার কোথায় দেখা করেছিলেন তা সরকার জানাক।

• ললিতকে ভারতে ফেরানোর ব্যাপারে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবর্ণের বৈঠকের কার্যবিবরণী জনসমক্ষে আনা হোক।

• অসবর্নকে লেখা চিদম্বরমের চিঠি দু’টি প্রকাশ করুক সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE