Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বিজেপির ছক

হিসেব কষেই দলে নেওয়া হতে পারে হিমন্ত-ঘনিষ্ঠদের

বিজেপিতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন বরাক উপত্যকার তিন কংগ্রেস বিধায়ক। দলের জেলা কমিটি সে প্রস্তাব খারিজ করে দেয়— বিজেপি সূত্রে এমনই খবর ছড়িয়েছে। দলের একাংশের দাবি, প্রাক্তন ছাত্রনেতা প্রদীপ দত্তরায় কয়েক দিন আগে গেরুয়া বাহিনীতে নাম তোলার আবেদন জানিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৪২
Share: Save:

বিজেপিতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন বরাক উপত্যকার তিন কংগ্রেস বিধায়ক। দলের জেলা কমিটি সে প্রস্তাব খারিজ করে দেয়— বিজেপি সূত্রে এমনই খবর ছড়িয়েছে। দলের একাংশের দাবি, প্রাক্তন ছাত্রনেতা প্রদীপ দত্তরায় কয়েক দিন আগে গেরুয়া বাহিনীতে নাম তোলার আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। রাজ্য কমিটি থেকে সেই আবেদন পৌঁছেছে জেলাস্তরে। দলের সিদ্ধান্ত, সাংসদ-বিধায়ক বা ওই পর্যায়ের কোনও নেতা কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে আসতে চাইলে ‘স্ক্রিনিং কমিটি’ তাঁদের ভাবমূর্তি ও দলের লাভ-লোকসান খতিয়ে দেখবে। অন্যদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি।

বিজেপির এই কঠোর অবস্থানে বরাক উপত্যকার অনেক কংগ্রেস নেতা সঙ্কটে পড়েছেন। হিমন্তবিশ্ব শর্মার দলত্যাগের পর অনেক নেতা-কর্মী কংগ্রেস ভবনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। গেরুয়া শিবিরে চলে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন কেউ কেউ। যুব প্রজন্মের অনেকে ‘হিমন্তদা ঠিক করেছেন’ বলে মন্তব্য করেন। দলত্যাগের পরও তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে গর্ব করছিলেন। কিন্তু বিজেপির ‘কোর কমিটি’র বৈঠকের পর তাঁদের সুর বদলেছে। আশঙ্কা, কংগ্রেস নেতাদের কয়েক জন দু’দলেই ব্রাত্য হতে চলেছেন।

হিমন্তের দলত্যাগে বরাক উপত্যকায় কংগ্রেস শিবিরে আরও কিছু নতুন সমীকরণ সামনে আসছে। দলের সঙ্কটের জেরে গৌতম রায় ও সুস্মিতা দেব শিবির এখন অনেকটাই কাছাকাছি। সিদ্দেক আহমেদের সঙ্গে গৌতমবাবুর বনিবনা নেই। তবু তিন জন মিলে রাজ্য মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের জন্য এআইসিসি-তে সুপারিশ করেছেন। দুই প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায় ও সিদ্দেক আহমেদকে ফের মন্ত্রিসভায় ফেরানোর আর্জি জানানো হয়েছে।

তিন কংগ্রেস বিধায়ক তাঁদের দলে আসার আর্জি জানিয়েছেন বলে বিজেপি দাবি জানালেও, বরাক উপত্যকার ১৩ জন কংগ্রেস বিধায়কের বক্তব্য— ‘যে দলে আছি, সেখানেই থাকব।’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য ওই তিন বিধায়কের নাম প্রকাশের জন্য বিজেপি নেতাদের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। কংগ্রেস নেতাদের দাবি, একমাত্র করিমগঞ্জ জেলার রাতাবাড়ির বিধায়ক কৃপানাথ মালাহ হিমন্তের সঙ্গে দেখা করতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। সে জন্য প্রদেশ কংগ্রেস তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিস ধরায়। তিনি ক্ষমা চেয়েছেন এবং দলেই থাকতে চেয়ে ই-মেল পাঠিয়েছেন বলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত জানিয়েছেন। বিজেপির স্থানীয় কর্মীরা অবশ্য আগেই তাঁকে দলে না টানতে সতর্ক করে দিয়েছেন। ‘অকর্মণ্য বিধায়ক’ বলে এত দিনের অভিযুক্তকে এখন দলে নেওয়া হলে দায় বাড়বে বলেই তাঁরা মত প্রকাশ করেন।

কাছাড়ে হিমন্ত-ঘনিষ্ঠ বলে যাঁরা পরিচিত, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন অভিজিৎ পাল, হীরক দাস, সজল আচার্য, মৃদুল সাহা। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎবাবু অবশ্য ‘এখনই এমন ইচ্ছে নেই’ বলে জানিয়ে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘হিমন্তদা অন্য দলে গিয়েছেন বলে আমাদেরও যেতে হবে, এ কেমন কথা!’’

তবে কংগ্রেসেরই একটি সূত্রের দাবি, অভিজিৎবাবু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পথেই। তাঁকে নিয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের তেমন আপত্তি নেই। প্রাক্তন জেলা সভাপতি হিসেবে যুব কংগ্রেসিদের মধ্যে তাঁর অনুরাগী মহল রয়েছে। তিনি চাইছেন, সবাইকে নিয়ে দল বদলে চমক দিতে।

জেলা কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় নেতৃত্বের উপর রুষ্ট অরুণ দত্ত মজুমদারও। কয়েক মাস ধরে কংগ্রেস ভবনের বদলে সকাল-সন্ধেয় বসছেন মানবাধিকার সংক্রান্ত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অফিসে। তিনি অবশ্য হিমন্তকে অনুসরণ করে দলবদলের সম্ভাবনা খারিজ করে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘দলের নেতা হিসেবেই হিমন্তের প্রচুর অনুগামী দেখা গিয়েছে। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত অনুগামী যে হাতেগোণা, তা স্পষ্ট।’’ অরুণবাবুর দাবি, নির্বাচন এগিয়ে এলে বিজেপি থেকেও অনেকে কংগ্রেসে যোগ দেবেন। যাঁরা বিজেপিতে গিয়েছেন বা যাচ্ছেন, অনেকে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে আসবেন।

দল বদলের চর্চায় নতুন সংযোজন হাইলাকান্দি জেলার আলগাপুরের প্রাক্তন বিধায়ক রাহুল রায়। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা গৌতম রায় ও আলগাপুরের বর্তমান বিধায়ক মন্দিরা রায়ের পুত্র। কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘এটা তাঁর প্রেসার ট্যাকটিকস। কাটিগড়া আসনের টিকিটের জন্য বিজেপির সঙ্গে কথা বলবেন। অন্য দিকে বিজেপি-তে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে দরদাম করবেন।’’

প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র দীপন দেওয়ানজি, জেলা কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হিমন্ত-ঘনিষ্ঠদের নিয়ে এমন চর্চা অর্থহীন।’’ তাঁদের বক্তব্য, দল ও সরকারে ক্ষমতাশালী থাকায় হিমন্তের সঙ্গে ছিলেন না, জেলাস্তরে এমন নেতা কমই রয়েছেন। তাই বলে তাঁরা সবাই বিজেপিতে চলে যাবেন, তা ভাবা ভুল। কিশোরবাবুর কথায়, ‘‘রাজনীতি আমার পেশা নয়। তাই দলবদলের কথা ভাবনাতেও আসে না।’’

শিলচরের বিজেপি বিধায়ক দিলীপকুমার পাল বলেন, ‘‘কারা আসতে চাইছেন, এটা প্রশ্ন নয়। দলে কোন নেতাকে নেওয়া হবে, সেটিই বিচার্য। কারণ এখন বিজেপিতে আসার লোকের অভাব নেই। তাই বলে সবাইকে দলে ভিড়িয়ে লাভ হবে না।’’ প্রদেশ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায় বলেন, ‘‘পত্র-পত্রিকায় অনেক নাম নিয়ে কথা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কাছে কোনও বিধায়ক-সাংসদ এখনও আবেদন জানাননি। করলে তা স্ক্রিনিং কমিটি-তে যাবে। তাঁদের ছাড়পত্র পেলেই সদস্যপদ দেওয়া হবে।’’ বরাকের নেতাদের মধ্যে প্রাক্তন ছাত্রনেতা প্রদীপ দত্তরায় আবেদন জানিয়েছেন বলে রাজদীপবাবু দাবি করেছেন। তিনি জানান, তাঁর আবেদন জেলা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।

তাঁদের অনুমোদন মিললে বিষয়টি যাবে রাজ্য কমিটিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE