Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

১৪ বছর পরে দেশে ফিরবে ভারতের মুন্নি

পর্দায় পাকিস্তানের মুন্নিকে দেশে ফেরানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন ‘বজরঙ্গি সলমন ভাইজান’। আর এ যেন বাস্তবেরই এক ভারতীয় মুন্নির কাহিনি, যে ১৪ বছর পাকিস্তানে কাটানোর পরে দেশে ফিরতে চলেছে।

সংবাদ সংস্থা
করাচি শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১৫
Share: Save:

পর্দায় পাকিস্তানের মুন্নিকে দেশে ফেরানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন ‘বজরঙ্গি সলমন ভাইজান’। আর এ যেন বাস্তবেরই এক ভারতীয় মুন্নির কাহিনি, যে ১৪ বছর পাকিস্তানে কাটানোর পরে দেশে ফিরতে চলেছে। আর এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।

ভারতে এসে হারিয়ে যাওয়া মুন্নিকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে দেওয়ার গল্প বলেছে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘বজরঙ্গি ভাইজান।’ তার পরে পরেই সামনে এল গীতার গল্প। গল্প নয়, সত্যি! গল্পের মুন্নির মতোই কথা বলতে পারে না গীতাও। শুনতেও পায় না সে। অভিব্যক্তির প্রকাশ বলতে শুধু দু’চোখের কান্না আর সামান্য কিছু আঁকাবাঁকা লেখা। এই সত্যি গল্পের শেষটা অবশ্য সিনেমার মতো নিখুঁত হল না। কারণ দেশে ফেরার সুযোগ মিললেও, এখনও মিলল না সাকিন-ঠিকানার খোঁজ।

সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রাক্তন মন্ত্রী ও মানবাধিকার কর্মী আনসার বারনি গীতার বিষয়ে একটি টুইট করার পরেই তার উত্তর দেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। লেখেন, ‘‘পাকিস্তানের হাইকমিশনার টিসিএ রাঘবনকে করাচি গিয়ে গীতার সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দিয়েছি আমি।’’ আনসার জানিয়েছেন, এর পর নিশ্চয় দেশে ফিরতে পারবে গীতা।

চোদ্দো বছর আগে ন’বছরের ছোট্ট মেয়েটা যে কী ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে চলে এসেছিল, তার উত্তর অজানা। পঞ্জাব রেঞ্জার দফতরের এক কর্তার চোখে পড়ায় তাকে নিয়ে গিয়ে তুলে দেন লাহৌরের একটি সমাজকল্যাণমূলক সংস্থার হাতে।

সংস্থার প্রধান ফয়জল এধি জানালেন, এত বছর ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে তাঁদের সংস্থা। বললেন, ‘‘আমিই ওকে লাহৌর থেকে করাচির একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখি। ও কথা বলতে পারত না। নামটাও আমিই দিয়েছিলাম, গীতা।’’ জানালেন, বিভিন্ন মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন ফয়জল। সেই সূত্রেই আনসার বারনি বছর দুয়েক আগে গীতার বিষয়টি নিয়ে সরব হন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও গীতার সন্ধান চেয়ে আবেদন করেছেন বারবার। সেই সূত্রেই আনসারের টুইট চোখে পড়ে সুষমা স্বরাজের।

ফয়জল বলছিলেন এই চোদ্দোটা বছরের কথা। প্রতিনিয়ত গীতার কাছ থেকে তার বাড়ির কথা জানতে চাওয়ার চেষ্টার কথা। প্রথম প্রথম শুধু নিঃশব্দে কাঁদত সে। কোনও ভাবেই প্রকাশ করতে পারত না নিজের কথা। হঠাৎই এক দিন ফয়জলের মোবাইলে ভারতের একটি মানচিত্র দেখে চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল গীতার। বার বার করে আঙুল ছোঁয়াত ঝাড়খণ্ড ও তেলঙ্গানার উপর। হাতের ইঙ্গিতে দেখাত তার সাত ভাই চার বোনও আছে। আর সেই সঙ্গে একটা বাড়ির ছবি এঁকে তার পাশে বারবার লিখত একটাই সংখ্যা। ১৯৩।

‘‘হয়তো গীতার বাবার বাড়ি ঝাড়খণ্ডে আর মায়ের বাড়ি তেলঙ্গানায়, অথবা উল্টোটা। গীতার বাড়ির নম্বর ১৯৩ বলেই আমাদের আন্দাজ। এই সমস্ত তথ্যই পাকিস্তানের ভারতীয় কনস্যুলেটে জানিয়েছিলাম আমরা।’’ — বললেন ফয়জল। তাঁর দাবি, গত বছর কনস্যুলেটের লোকেরা এসে দেখা করেন গীতার সঙ্গে। ছবিও তোলেন। এমনকী এক জন ভারতীয় সাংবাদিক এসে গীতার সাক্ষাৎকারও নেন। কিন্তু এর পরে আর কিছুই এগোয়নি।

ফয়জল জানালেন, গীতা বড় হওয়ার পর এক হিন্দু ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। কিন্তু গীতা তাতে রাজি হয়নি। ইঙ্গিতে জানিয়ে দেয়, নিজের বাড়ি না ফিরে কিছুতেই বিয়ে করবে না সে।

এত দিনে এসেছে সেই সম্ভাবনা। কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো স্বদেশের মাটিতে পা রাখতে পারবে গীতা। সৌজন্যে পাকিস্তানের মানবাধিকার সংগঠন এবং ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগ। সুষমার টুইটের পরে আনসার বারনি সুষমার উদ্দেশে ফের টুইট করেছেন ‘‘সুষমাজিকে ধন্যবাদ। হারিয়ে যাওয়া পরিবারে ওকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আপনার সাহায্যের প্রয়োজন ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE