স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আরএসএস নেতাদের কাছে গিয়ে সরকারি কাজের সাফাই দিচ্ছেন। নিজে স্বয়ংসেবক হওয়ার গর্ববোধ করছেন। তাঁর এক ডজন মন্ত্রীও মন্ত্রকের কাজের বিবরণ দিচ্ছেন।
স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেসের মত বিরোধী দল প্রশ্ন তুলেছে, বিজেপি এ বারে দ্বিচারিতা বন্ধ করুক। আরএসএসই যে তাদের ‘বস’, সে মুখোশ এ বারে খুলে গেল। প্রধানমন্ত্রী থেকে চাপরাশি সকলেই আরএসএসের কাছে মাথা নোয়াচ্ছেন।
দিল্লিতে আজ তিনদিনের বিজেপি ও সঙ্ঘের সমন্বয় বৈঠক শেষে কংগ্রেসের এই অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়ে আরএসএস নেতা দত্তাত্রেয় হোসাবোলে বলেন, যে কংগ্রেস এত দিন রিমোর্ট কন্ট্রোলে চালিয়েছে, তাদের বলবার কোনও নৈতিক অধিকার নেই। সঙ্ঘ কোনও অনৈতিক সংস্থা নয়। আরএসএসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই আজ সরকারে। ফলে একজন নাগরিক হিসেবে তাঁদের প্রশ্ন করার অধিকার আমাদের আছে।
কিন্তু এই রাজনৈতিক চাপান-উতোরের বাইরেও তিনদিনের এই বৈঠকের মূল লক্ষই ছিল, মোদী সরকারের ১৪ মাসের মূল্যায়ণ করা। যতই প্রকাশ্যে তা অস্বীকার করুন সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতারা। প্রশ্ন হল, বৈঠক শেষে কী বেরোলো মোদীর রিপোর্ট কার্ড?
সঙ্ঘ সূত্রের মতে, মোদী সরকার ভাল লক্ষ নিয়ে কাজ করলেও ১৪ মাসে দেখা যাচ্ছে অসন্তোষের পাল্লাই ভারী। কী ভাবে?
এক, যে আশা-প্রত্যাশা নিয়ে মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, এখন তাতে ভাটা এসেছে। দুই, দেশের আর্থিক হাল খারাপ হয়েছে। তিন, পশ্চিমের মডেল অনুকরণ করতে গিয়ে দেশের অর্থনীতি বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে। পশ্চিমের অনেক মডেলই এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। চার, গ্রামকে আরও জোর দেওয়া উচিত। গ্রাম থেকে শহরে মানুষের আসা বন্ধ করা উচিত। রুটি-কাপড়া-বাড়ির মত মৌলিক অধিকার থেকে এখনও বঞ্চিত গ্রামের মানুষ। পাঁচ, রোজগার, শিক্ষা ও চিকিৎসা এখনও পৌঁছায়নি। ছয়, শিক্ষায় আরও ভারতীয়করণ দরকার। সাত, পূর্ণ স্বাক্ষরতা দ্রুত আসা উচিত। আট, শিক্ষা যেন দামি না হয়। সকলের কাছে তা পৌঁছতে পারে। বন্ধ করতে হবে শিক্ষার ব্যবসায়ীকরণ। নয়, ওবিসিদের প্রতিযোগিতা বন্ধ করে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের স্বাভিমান বাড়াতে হবে।
কিন্তু এত কিছু না হওয়ার তালিকায় কী মোদী সরকারের কোনও ইতিবাচক দিক দেখতে পাচ্ছে না সঙ্ঘ?
সঙ্ঘের এক নেতার কথায়, কেন নয়? পাকিস্তান সম্পর্কে মোদী সরকারের নীতিতে সিলমোহর বসিয়েছে সঙ্ঘ। পাকিস্তান-বাংলাদেশ ভারতেরই অঙ্গ। সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের মাধ্যমে সেই সম্পর্ক ভাল করতে হবে। হোসাবোলে আজ বলেন, ‘‘কৌরব ও পাণ্ডবের মধ্যেও ছিল বিবাদ। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তান ভাই ভাই, ধর্মস্থাপনার জন্য সবকিছু করতে হয়।’’ ক’দিন আগে ঠিক একই ভাষায় মোহন ভাগবত বলেছিলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশও আসলে হিন্দুরাষ্ট্র। পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে মোদীর নীতির সঙ্গে এ বারে সঙ্ঘও তাদের অখণ্ড ভারতের অবস্থানকে মিলিয়ে দিতে চাইল।
পাশাপাশি রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ যতই তর্জন-গর্জন করুক, আরএসএস আজ স্পষ্ট করল তারা কোনও দাবি তোলে না। এটি সন্তদের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের টাইম টেবিলেই এটি হবে। যার অর্থ স্পষ্ট, এইমুহূর্তে এই উগ্র হিন্দুত্বের জিগির তুলে সরকারকে কোনও বিপাকে ফেলতে চাইছে না আরএসএস। এমনকী যে প্রবীণ তোগাড়িয়া গতকাল সংখ্যালঘুদের দুটি সন্তান বেধে দেওয়া নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তার থেকেও দূরত্ব বজায় রাখল আরএসএস। ধার্মিক জনগণনা নিয়ে নিজেদের মূল্যায়ণও পিছিয়ে দিয়েছে সঙ্ঘ। হোসাবোলে বলেন, ‘‘সরকারের উপর আমাদের কোনও অসন্তোষ নেই। সরকারের দিশা ঠিক। উপলব্ধিও আছে। কোনও বিষয়ে কোথাও ১০০ শতাংশ সন্তুষ্টি বলতে পারি না। তবে এটি ঠিক, এই প্রথম সরকার শুধু দেশে নয়, বিদেশেও প্রত্যাশা বাড়িয়েছে। তবে গত ১৪ মাসে মানুষের উৎসাহে ভাটা পড়েছে কি না, সেটি সরকার বিবেচনা করে দেখবে।’’ মোদী অবশ্য আজ মোহন ভাগবতের সামনে এসে সাফাই দেন, ‘‘সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছে। যে সব কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, সরকার তা নেবে। স্বয়ংসেবকের জন্যই আমরা আজ এখানে পৌঁছতে পেরেছি। স্বয়ংসেবক হয়ে আমিও গর্বিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy