একশো দিনের কর্মসূচি প্রকল্পে কি তালা ঝুলিয়ে দিতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার? নাকি প্রকল্পটি নাম কে ওয়াস্তে রেখে সেটি ক্রমশ অকেজো করে দেওয়াই সরকারের লক্ষ্য!
কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই কিছু পরিবর্তন ঘটিয়েছে এনডিএ সরকার। সেই সঙ্গে সম্প্রতি রাজস্থানের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া কেন্দ্রকে চিঠি লিখে দাবি করেছেন, জাতীয় কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনটি খারিজ করে দিয়ে পরিবর্তে সেটি স্রেফ একটি প্রকল্প করে দেওয়া হোক। যাতে প্রকল্প রূপায়ণের ব্যাপারে কেন্দ্র ও রাজ্যের ওপর কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকে। এরই পাশাপাশি আজ সংযোজন হয়েছে আরও একটি ঘটনা। দিল্লিতে বিভিন্ন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে ডেকেছিলেন কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান। ওই বৈঠকের আলোচ্য পত্রে বলা হয়েছে, একশো দিন কাজের প্রকল্পই দেশে মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতির নেপথ্যে অন্যতম কারণ। কেননা, এই প্রকল্পের জন্য গ্রামের মানুষের হাতে অর্থ এসেছে। ফলে জিনিসের চাহিদা বাড়ছে।
এই তিন ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ কংগ্রেস ও বাম নেতৃত্ব যৌথ ভাবে কেন্দ্রের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন একশো দিনের প্রকল্প কি বন্ধ করে দিতে চাইছে সরকার। এ ব্যাপারে কেন্দ্র অবস্থান স্পষ্ট করুক।
একশো দিনের কাজের প্রকল্প রূপায়ণের জন্য বছরে কমবেশি চল্লিশ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। এই প্রকল্প নিয়ে শিল্পমহল এবং অর্থনীতিকদের একাংশ অনেক দিন ধরেই সরব। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্রের বরাদ্দ অর্থে এই প্রকল্পের মাধ্যমে কোনও স্থায়ী সম্পদ তৈরি হচ্ছে না। কর্মসংস্থানের নামে স্রেফ খয়রাতি করা হচ্ছে কোষাগারের টাকা। বরং ওই অর্থ পরিকাঠামো নির্মাণে খরচ করতে পারে সরকার। অথচ কর্মসংস্থানের প্রকৃত সুযোগ তৈরি না করে, কিছু লোককে শুধু বসিয়ে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একশো দিনের প্রকল্পের মতো কর্মসূচিতে বরাদ্দ কমানোর একটা প্রস্তাব রয়েছে। তা ছাড়া, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও বার বার বলছেন, বল্গাহীন পপুলিজম বন্ধ করে দিয়ে এ বার দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কিন্তু অর্থনীতির সঙ্গে রাজনীতির দ্বন্দ্ব এ দেশে এখনও দস্তুর। আর সেই সুযোগটাই নিতে চাইছেন কংগ্রেস ও বাম নেতারা। কারণ, তাঁরা মনে করছেন আর্থিক সংস্কারের যে যুক্তি তর্ক সরকার দিচ্ছে তা গ্রামের মানুষকে বোঝানো সম্ভব নয়। তাঁরা কাজ ও টাকা না পেলে ক্ষেপে যাবেন। গ্রামে-গঞ্জে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টায় রয়েছেন তাঁরা।
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা আজ প্রশ্ন করেন, “মোদী সরকার কি চায় না মানুষ খেয়ে পরে থাকুক। মোদী সরকার কি দেশের মাথাপিছু আয় বাড়ার বিরোধী?” তাঁর কথায়, “একশো দিনের প্রকল্প তুলে দিলে বা তা লঘু করলে কংগ্রেস ছেড়ে কথা বলবে না। গোটা দেশে এর বিরোধিতায় আন্দোলন গড়ে তুলবে।” প্রসঙ্গত, কেন্দ্রে ইউ পি এ জমানায় একশ দিনের প্রকল্পের রূপায়ণ যখন শুরু হয়েছিল তখন বামেরা ছিল সরকারের সমর্থক দল। সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই সনিয়া-মনমোহন প্রকল্পের রূপরেখা চূড়ান্ত করেন। একশো দিনের প্রকল্প রূপায়ণের কৃতিত্ব দাবি করা নিয়ে তখন কংগ্রেস-সি পি এম টানাপোড়েন কম হয়নি।
একশো দিনের প্রকল্প প্রসঙ্গে আজ সিপিএম পলিটব্যুরো নেত্রী বৃন্দা কারাট কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীকে একটি চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি বলেছেন, কেন্দ্রে নতুন সরকারের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রকল্পের নিয়মাবলিতে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে একশো দিনের কাজের আওতায় এ বার শতকরা ৬০ শতাংশ কাজ কৃষি ও সহায়ক ক্ষেত্রে দেওয়া হবে। বাস্তব হলো, এমনিতেই একশ দিনের প্রকল্পে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ কাজ কৃষি ও কৃষি সহায়ক ক্ষেত্রে দেওয়া হয়। পরে বৃন্দা বলেন, এই অছিলায় সরকার শ্রম দিন কমাতে চাইছে কিনা সেটাই প্রশ্ন! তা ছাড়া, প্রকল্প সংক্রান্ত নিয়মে আরও একটি পরিবর্তন নিয়ে সরব বামেরা। বৃন্দার বক্তব্য, একশ দিনের প্রকল্প কোথায় কী কাজ হবে তা এত দিন ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরে ঠিক হতো। তা পরিবর্তন করে নতুন সরকার সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া জেলাস্তরে নিয়ে আসছে। তাতে আগের তুলনায় আরও কম মানুষের কাজ পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে স্থানীয় ভাবে বৈষম্যও দেখা দিতে পারে।
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, কংগ্রেস বা বামেরাও জানেন এক ঝটকায় একশো দিনের প্রকল্প তুলে দেওয়ার ঝুঁকি হয়তো কেন্দ্র নেবে না। কিন্তু তাঁরা আঁচ করছেন, সরকার এই প্রকল্পটিকে লঘু করতে চাইছে। সেই সঙ্গে ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক করে তোলার চেষ্টায় রয়েছে বিজেপি। এই অবস্থায় কংগ্রেস দ্বিমুখী কৌশল নিয়ে চলছে। সরকার যাতে প্রকল্পটি লঘু করতে না পারে এবং বরাদ্দ কমাতে না পারে তা সুনিশ্চিত করতে চাইছে। কারণ, এই প্রকল্পে বছরে চল্লিশ হাজার টাকা খরচ করলে বাকি কাজ করার মতো রসদ বিশেষ থাকবে না কেন্দ্রের। কিন্তু তার পরেও যদি প্রকল্প লঘু করা হয়, তা হলে তা নিয়ে গ্রামে গঞ্জে রাজনীতি করার সুযোগও থাকছে।
তবে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্র বলছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই কর্মসূচিতে পরিবর্তন খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। প্রকল্প খাতে বরাদ্দ ছাঁটা হবে কিনা তা বাজেটেই স্পষ্ট হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy