প্রতীকী ছবি।
নন্দলাল মেঘনানি। বয়স ৫০। স্ত্রী-কন্যা ও ছেলেদের নিয়ে থাকতেন পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশে। সেখানে মোটর পার্টস-এর ব্যবসা ছিল। ভালই চলত। কিন্তু সব ওলটপালট হয়ে যায়। ভিটেমাটি ছেড়ে এক প্রকার এ দেশে চলে আসতে বাধ্য হন। নন্দলাল জানান, ১৬ বছর হল তিনি এ দেশে এসে থাকতে শুরু করেছেন। নতুন করে একটি ব্যবসাও শুরু করেছেন।
কিন্তু কেন ও দেশ থেকে ভারতে চলে এলেন তিনি?
নন্দলাল তাঁর ভিটেমাটি ছাড়ার জন্য কিন্তু পাকিস্তানে দিনের পর দিন বেড়ে ওঠা অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদকেই দায়ী করেছেন। পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতেই সিন্ধ ছেড়ে ভারতে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। আবেদন করেন ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে সেই আশা পূরণ হল নন্দলালের।
কারণ ভারত সরকার যে ১১৪ জন পাকিস্তানিকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁদের মধ্যে এই নন্দলালও রয়েছেন। তাঁর পরিবারে এখন খুশির হাওয়া।
আরও পড়ুন: কংগ্রেস ছাড়লেন শঙ্কর সিংহ বাঘেলা
নন্দলালের মতোই পাকিস্তান ছেড়ে এ দেশে চলে এসেছেন কৃষ্ণলাল আন্দানি (৫৯)। ২০০৫-এ স্ত্রী ও চার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। তিনিও সিন্ধ প্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন। সেখানে থারপাকর শহরে একটা দোকান চালাতেন আন্দানি। ভিটেমাটি ছেড়ে চলে আসতে খুবই কষ্ট হয়েছে তাঁর। বলতে বলতে চোখের কোণ ভিজে ওঠে এই প্রৌঢ়ার। বলেন, “ও দেশে ফেলে আসা স্মৃতি ও বন্ধুদের কথা খুব মনে পড়ে।” আন্দানি জানান, কী ভয়ের মধ্যে সেখানে জীবনযাপন করতেন। বাড়ি থেকে সকালে বেরিয়ে মনে হত সন্ধ্যায় ফিরব কিনা! এ দেশে এসেও কিন্তু সিন্ধের মুসলিম বন্ধুদের উপকারের কথা ভুলে যাননি আন্দানি। কী ভাবে সেই বন্ধুরা তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, কী ভাবে তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন— সবেরই স্মৃতি রোমন্থন করতে থাকেন। আর কেমন যেন একটু আনমনা হয়ে পড়েন। আন্দানি, তাঁর পুত্র ও পুত্রবধূরা ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানিয়ে রেখেছেন। নন্দলালের ভাগ্যে সেটা জুটে গিয়েছে। অপেক্ষায় রয়েছেন আন্দানি। কবে ভারত সরকার তাঁকে আপন করে নেয়।
নাগরিকত্বের ব্যাপারে জেলাশাসকদের ক্ষমতা দেওয়ার প্রসঙ্গে কেন্দ্রের যথেষ্ট প্রশংসা করেছেন বিষাণদাস মানকানি। ২০০১-এ পাকিস্তান ছেড়ে স্ত্রী-পুত্রদের নিয়ে এ দেশে চলে আসেন। ২০১৬-তেই বিষাণদাস ও তাঁর স্ত্রী এ দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন। এ বার পেলেন তাঁর ছেলেরা।
কেন ও দেশ ছেড়ে এ দেশে এলেন?
বিষাণদাসের সাফ জবাব, ভারত অনেক সুরক্ষিত। যে ভাবে এ দেশের উন্নতি হচ্ছে, পাকিস্তানে সেটা ভাবাই যায় না। পেশায় চিকিত্সক বিষাণদাস তাঁর ছেলেদের সঙ্গে এ দেশে মোবাইলের দোকান খুলেছেন। তাঁর ছেলেরা নাগরিকত্ব পাওয়ায় খুশির হাওয়া বইছে পরিবারে।
১১৪ জন পাকিস্তানিকে শুক্রবার নাগরিকত্ব দিল ভারত। আরও ২১৬ জন পাকিস্তানিকে নাগরিকত্ব দেওয়ার ভাবনাচিন্তা চলছে। তাঁদের নথিপত্র পরীক্ষা করার পরই সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হবে বলে আমদাবাদ জেলাশাসকের দফতর সূত্রে খবর। জেলাশাসক অবন্তিকা সিংহ জানিয়েছেন- পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে যাঁরা এ দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন, সেই নথিপত্র খতিয়ে দেখার জন্য জেলাশাসকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকই বিষয়টি দেখত। ১৯৫৫-র নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী এ দেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে এ বার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy