প্রতীকী ছবি।
মেদিনীপুরের মোহনপুর থানার সেই একচালা ঘর আর বহু কষ্টে দু’মুঠো ভাত জোগাড়ের দিনগুলোর স্মৃতি বহুদিন পর যেন ঘাই মারছে! কারণ হাতে এখন অঢেল সময়।
ভোট মরসুমের এলোমেলো হাওয়ায় যদিও উড়ে বেড়াচ্ছে রঙিন ফানুস। কিন্তু তাতে প্রত্যয় হওয়ার অবস্থায় স্বপনবাবু নেই। ক্যাশ বাক্সের সামনে গোটা দিন মনমরা হয়ে বসে মোবাইলে সিনেমা দেখাটাই এখন একমাত্র কাজ।
নোট বাতিলের জন্মদিনটা যেন আরও উতলা করে দিচ্ছে তাঁকে। কারণ, সেটাই যে শেষের শুরু। তাঁকে হয়তো ফিরতে হবে না, কিন্তু গত এক বছরে একের পর এক কর্মীকে দেশে ফেরানোর যন্ত্রণাটাও বড় কম নয়।
পঁচিশ বছর আগে মেদিনীপুর থেকে সাবরমতীর তীরের এই বণিক-শহরে এসে উঠেছিলেন স্বপনকুমার দাস। প্রথমে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে টুকিটাকি কাজ। তার পর ‘বাবুমশাই’ নামের এক বাঙালি হোটেলে (তখন তা ছিল অমদাবাদের একমাত্র বাঙালি রেস্তোঁরা) রান্নার কাজ। তার পর এটা-সেটা করে দশ বছর
আগে বরাত জোরে অভিজাত বস্ত্রপুরের কাছে সন্দেশ প্রেস রোডের এক কোনায় একটি বড় জায়গা ভাড়ায় পেয়ে যান। ২০০৭ সালে সেখানেই শুরু ‘তৃপ্তি রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড ফাস্ট ফুড’। যা ধোকলা, খাখড়া, ফাপড়া-ক্লান্ত প্রবাসী বাঙালির রসনায় গত দশ বছর জোগান দিয়ে এসেছে ধোঁকার ডালনা থেকে ইলিশ ভাপা! স্বপন বলছেন, “শুধু বাঙালি কেন? অন্য রাজ্যের বাসিন্দাদের ভিড়েও জমজমাট থেকেছে দোকান।” আর তার জোরেই দুই ছেলের জন্য অমদাবাদের উপকণ্ঠে দুটি বাংলো কিনে ফেলেছিলেন স্বপন। ব্যাঙ্ক থেকে ধার নিয়েছিলেন ১
কোটি টাকা!
তবে সব হিসাব উল্টে দিল নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিল। স্বপনের কথায়, “প্রথম তিন মাস ধূ-ধূ করেছে হোটেল। অন্তত অর্ধেক খদ্দের কমেছে এক বছরে। দেশ থেকে ভাল রাঁধুনি-জোগাড়ে এনেছিলাম। ওরাও দুটো পয়সার মুখ দেখছিল। এখন কী ভাবে তাদের মাইনে দেব বলুন! ফেরত পাঠাতে হচ্ছে তাদের।” স্বপন এখন গোটা দিন বসে সাতপাঁচ ভাবেন আর মোবাইল ঘেঁটে সময় কাটান। আনমনে বলেন, “আগে এলে আপনারা আমাকে দেখতেই পেতেন না। কর্মচারীরাই দোকান চালাতো। মাসে ২০-২৫টা ক্যাটারিং এর অর্ডার আসত। এখন মেরে-কেটে দুটো!”
ওই প্লাজায় স্বপনের মতো ভুক্তভোগীর সংখ্যা কম নয়। যাঁদের আশা এ বার একটা বদল হবে। কিন্তু ভরসা করতে পারছেন না। কারণ খেলা কোথায় কত গভীরে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না কেউই।
আগারিয়া হিত রক্ষক মঞ্চের প্রধান হরিভাই পান্ড্য শোনালেন এমনই এক গোপন খেলার কথা! তাঁর কথায়, নোট বাতিল ঘোষণার কয়েক সপ্তাহ আগে গুজরাত
এবং আরও কিছু রাজ্যে বিজেপির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ভূ-মাফিয়াদের কাছে নির্দেশ যায়— জরুরি ভিত্তিতে শহর অঞ্চলে জমি কেনো। বিশেষ করে ঘোষিত স্মার্ট সিটিগুলিতে। সে সময়ে আসল কারণ না জেনে স্রেফ দিল্লির নির্দেশে বিজেপির নেতা কর্মীরাও ভূ-মাফিয়াদের এই কাজে নগদ জোগান। পান্ড্যর কথায়, এর ফলে দু’টি উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে। স্মার্ট সিটি–সহ যেখানে যত নগরোন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা
হয়েছে, লাভের গুড় খেয়েছে দল। পাশাপাশি জমি কেনার কৌশলে গেরুয়া শিবিরের কালো টাকা হাতবদল হয়ে গিয়েছে নোট
বাতিলের আগেই!
ভোটেও এমন খেলা যে হবে না, কে ভরসা করতে পারে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy