Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পরিবেশ রক্ষার লড়াইয়ে রক্তাক্ত তুতিকোরিন, পুলিশের গুলি, হত ৯

মারা গিয়েছেন ৯ জন। গুরুতর আহত অবস্থায় ১২ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর পরেই উত্তেজনা শহর জুড়ে। উত্তপ্ত তামিলনাড়ু থেকে দিল্লির রাজনীতি।

আঁচ: জ্বলছে গাড়ি। ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছে চারপাশ।

আঁচ: জ্বলছে গাড়ি। ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছে চারপাশ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৮ ০৪:১২
Share: Save:

তামার কারখানার জন্য বিষাক্ত হয়ে উঠেছে পরিবেশ। বাড়ছে দুরারোগ্য রোগ। এই অভিযোগে তামিলনাড়ুর তুতিকোরিনে বেদান্ত স্টারলাইট কপার কারখানা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন আশপাশের ১৮টি গ্রামের মানুষ। মঙ্গলবার দুপুরে সেই আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালাল পুলিশ। মারা গিয়েছেন ৯ জন। গুরুতর আহত অবস্থায় ১২ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর পরেই উত্তেজনা শহর জুড়ে। উত্তপ্ত তামিলনাড়ু থেকে দিল্লির রাজনীতি।

তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী শহর থুদুকুড়িতে (তুতিকোরিন) স্টারলাইট কপার কারখানার বিরুদ্ধে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল ঠিক ১০০ দিন আগে। থুদুকুড়িতে ওই কারখানা বিস্তারের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছিল ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে। প্রতিবাদ জানাতে পথে নামেন গ্রামবাসীরা। কারখানা বন্ধের দাবিতে শান্তিপূর্ণ ভাবেই বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। কমল হাসন থেকে শুরু করে তামিল সিনেমা জগতের অনেকেই সেই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।

আজ আন্দোলনের ১০০ দিন উপলক্ষে সকাল থেকেই বড়সড় বিক্ষোভের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কয়েক হাজার মানুষ স্টারলাইট কারখানার বাইরে অবস্থান বিক্ষোভ করতে চাইলে অনুমতি দেয়নি পুলিশ। জারি হয়েছিল ১৪৪ ধারা। কিন্তু বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করেই শহরের মধ্যে দিয়ে মিছিল করে এসে কালেক্টরেটের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে যান আন্দোলনকারীরা। মিছিল কালেক্টরেটে পৌঁছলে আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ। সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। উত্তেজিত জনতা পুলিশকে নিশানা করে ঢিল ছুড়তে শুরু করে। পুলিশের গোটা দশেক গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। দু’টিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। কালেক্টরেটেও আগুন লাগানো হয়। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে গুলি চালায় পুলিশ। যার জেরে মৃত্যু-মিছিল।

খাক: বেদান্ত স্টারলাইট কপার কারখানা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে গাড়ি-মোটরবাইক। মঙ্গলবার তুতিকোরিনে। ছবি: পিটিআই।

এর পরেই বিভিন্ন এলাকায় হাঙ্গামা চালাতে থাকে বিক্ষোভকারীরা। স্টারলাইট কারখানার কর্মীদের আবাসেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী ই পলানীস্বামী অবশ্য দাবি করেছেন, ২০ হাজার উত্তেজিত জনতাকে অন্য কোনও ভাবে আটকাতে না পেরে গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। তবে এই ঘটনায় রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছেন রাহুল গাঁধী, রজনীকান্ত, কমল হাসন, এম কে স্ট্যালিনরা। রাহুলের মতে, ‘‘সরকারি সন্ত্রাসের নির্মম উদাহরণ এটা। অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল মানুষ। তাদের হত্যা করা হল।’’ কমলের ক্ষোভ, ‘‘কারখানার কারণে মানুষ মরছিল। এখন মরতে হল সরকারের জন্য।’’ স্ট্যালিন অভিযোগ করেন, বিক্ষোভকারীদের কথা শোনা হয়নি। উল্টে গুলি চালিয়েছে সরকার। বেঙ্গালুরুতে পৌঁছনোর পরে এই ঘটনা নিয়ে টুইট করে দুঃখপ্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

আরও পড়ুন: আর দেখা হবে না, মৃত্যুর আগে নার্সের শেষ চিঠি স্বামীকে

দু’দশক থেকেই অবশ্য এলাকার মানু়ষের বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছে সংস্থাটিকে। প্রতিবাদীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, তামার কারখানা থেকে বিষাক্ত উপজাত বেরোয়। তার ফলেই এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে যাচ্ছে। কারখানার ক্ষতিকর প্রভাবে গলা ও চোখের ক্যানসারের রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে এলাকায়। বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, ত্বকের অসুখও। এ বছর মার্চের ২৯ তারিখ থেকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কারখানাটি ১৫ দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে সংস্থাটি দাবি করে, তাদের বিরুদ্ধে আনা পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ ভিত্তিহীন।

অনেকেই মনে করেন, স্টারলাইটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বহিরাগতরাও। কিছু দিন আগে এই বিক্ষোভের আঁচ ব্রিটেনেও পৌঁছেছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE