নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
প্রতি ১০ জন ভারতীয়ের মধ্যে ৯ জনই সমর্থন করছেন নরেন্দ্র মোদীকে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা ক্রমশ বেড়েছে। নোটবন্দির মতো পদক্ষেপের পরেও মোদীর জনপ্রিয়তার লেখ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক সমীক্ষক সংস্থা পিউ (পিইডব্লিউ) রিসার্চ সেন্টারের রিপোর্ট।
২০১৪ থেকে টানা দু’বছর মোদীর জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বমুখী হলেও, নোটবন্দির পর থেকে ক্রমশ বিরক্তি বেড়েছে দেশবাসীর। দাবি বিরোধী দলগুলির। চলতি বছরে জিএসটি প্রবর্তনের পর থেকে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেড়েছে ক্ষোভ। মূল্যবৃদ্ধির জেরে অসন্তোষ সাধারণ মানুষের মধ্যেও। তার পরেও দেশে এত জনপ্রিয়তা মোদীর? সমীক্ষার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নানা শিবির।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের তরফে জানানো হচ্ছে, এই সমীক্ষা নোটবন্দির পরে হলেও জিএসটি প্রবর্তনের আগে হয়েছে। ২০১৬-র ৮ নভেম্বর নোটবন্দির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এই পদক্ষেপকে কী চোখে দেখছেন ভারতের মানুষ, তা জানতে নোটবন্দির প্রায় সাড়ে তিন মাস পরে অর্থাৎ ২০১৭-র ২১ ফেব্রুয়ারি সমীক্ষা শুরু করে আমেরিকা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সমীক্ষক পিউ। ১০ মার্চ পর্যন্ত সমীক্ষার কাজ চলে। দেশের নানা প্রান্তের এবং নানা অর্থনৈতিক শ্রেণির মানুষের সঙ্গে কথা বলেন সমীক্ষকরা। ২ হাজার ৪৬৪ জনের উপর চালানো সমীক্ষার ভিত্তিতে পিউ জানায়, নোটবন্দি পরবর্তী ভারতে প্রতি ১০ নাগরিকের ৯ জনই মোদীকে সমর্থন করছেন। পিউ-এর সূচকে জনপ্রিয়তার নিরিখে নরেন্দ্র মোদী তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ রাহুল গাঁধীর চেয়ে ৩০ পয়েন্ট এগিয়ে। অবশ্য সমীক্ষকরা বার বারই জানাচ্ছেন, এই হিসেব ২০১৭-র গোড়ার দিকের। নোটবন্দির এক বছর কেটে যাওয়ার পর মোদীর ওই পদক্ষেপ নিয়ে ভারতবাসীর মধ্যে উৎসাহ কতটা, জিএসটি প্রবর্তনের পরে মোদী সরকারের জনপ্রিয়তা একই জায়গায় বহাল কি না, তা নিয়ে পিউ-এর তরফে মন্তব্য করা হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: গিলগিটে জলাধার প্রকল্প থেকে চিনকে বাদ দিতে চাইছে পাক সরকার!
নোটবন্দি বা জিএসটি প্রবর্তনের আগে কিন্তু বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতিগুলির মধ্যে ভারতীয় অর্থনীতিই সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বা়ড়ছিল— ৭.৯ শতাংশ হারে। নোটবন্দি এবং জিএসটি পরবর্তী ভারতে অর্থনীতির বৃদ্ধির হার নেমে ৫.৭ শতাংশ। যে সময় সমীক্ষা হয়েছিল, তখন কিন্তু এই সব সূচক সামনে আসেনি। মোদীর পদক্ষেপে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার এতটা ধাক্কা খেয়েছে জানার পরেও কি একই ভাবে তাঁকে সমর্থন করছে দেশবাসী? পিউ-এর সমীক্ষকরা এই প্রশ্নে কিন্তু একটু সন্দিহান। সমীক্ষক সংস্থাটির গ্লোবাল ইকনমিক অ্যাটিটিউড বিভাগের কর্তা তথা মোদীর জনপ্রিয়তা সংক্রান্ত রিপোর্টের অন্যতম লেখক ব্রুস স্টোকস বলছেন, ‘‘শেষ কয়েক মাসে জনগণের মন কী ভাবে বদলেছে, এই তথ্যে তার প্রতিফলন নেই।’’
আরও পড়ুন: প্রার্থী বাছাই নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধে মোদী-রাহুল
স্টোকস আরও জানাচ্ছেন, ‘‘ভারতীয় জনগোষ্ঠীর সব অংশ যে ভাবে দেশের অর্থনীতির প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছিল, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই অর্থনৈতিক সন্তোষ কিন্তু সরকারের প্রতি বিশ্বাস এবং গণতন্ত্রের প্রতি সন্তোষের সঙ্গে সম্পর্কিত।’’ স্টোকসের মন্তব্যে স্পষ্ট, নোটবন্দির সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার পরে ভারতের সরকারের প্রতি ভারতের নাগরিকদের আস্থা এবং বিশ্বাস অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সে কারণেই মোদীর জনপ্রিয়তা হু হু করে বেড়েছিল। কিন্তু নোটবন্দির এক বছর পেরিয়ে এসে সরকারও যখন স্পষ্ট করে বলতে পারছে না, ঠিক কী লাভ হল এই নোটবন্দিতে, তখনও কি ভারতবাসী একই রকম বিশ্বাস রাখছে এই সরকারের উপর? এই প্রশ্নের জবাব কিন্তু নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy