Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

খাবার নয়, ইদি’র দিকেই বেশি নজর থাকে ছোটদের

ভোর থকে শুরু হয় রকমারি ইদ স্পেশ্যাল রান্না। নাস্তার জন্য চালগুঁড়ির রুটি, ফিরনি, মাংসের ঝোল ইত্যাদির সঙ্গে লাচ্ছা আর সিমাই তো থাকেই। লাচ্ছা যেহেতু দুধে ভিজিয়ে খাওয়া হয় তাই সিমাইয়ের পায়েস হয় না, পোলাও হয়।

চেন্নাইয়ে খুদেদের ইদ পালন। ছবি: পিটিআই।

চেন্নাইয়ে খুদেদের ইদ পালন। ছবি: পিটিআই।

রোশেনারা খান
শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ১৬:৪৫
Share: Save:

প্রায় এক মাস রমজানের উপবাসের পর পশ্চিমাকাশে এক ফালি বাঁকাচাঁদ উদয় হলেই চাঁদের নামে এ রাতের নাম হয়ে যায় 'চাঁদরাত'। ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় ঘরে বাইরে, বিশেষ করে অন্দরমহলে। কথায় আছে 'খেয়ে ইদ, না খেয়ে বাকরিদ'। ইদুজ্জোহা বা বাকরিদে না খেয়ে নামাজে অংশগ্রহণ করা নিয়ম, তাই এই নামাজ তাড়াতাড়ি শুরু হয়। ইদের নামাজে সব বয়সের পুরুষরা ধর্মীয় রীতি মেনে গোসল ও উজু (মুখ-হাত-পা ধোওয়া)করে, নতুন বা পরিষ্কার পোশাক-টুপি পরে, আতর লাগিয়ে, মিষ্টিমুখ করে নামাজে সামিল হওয়ার জন্য ইদগাহর উদ্দেশে রওনা হন। তাই ব্যস্ততাটা বেশি রান্নাঘরে। বড় পরিবারে মহিলারা চাঁদরাতেই রান্নার উপকরণ গুছিয়ে কিছুটা কাজ এগিয়ে রাখেন।চাঁদরাতে চাঁদ উঁকি দিয়েই ডুবে যায়। পাড়া, শহর সেজে ওঠে আলোকমালায়। তবে কোথাও কোথাও রসভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়ায় মাইকের তীব্র আওয়াজ।

এ দিকে কিশোরী ও তরুণীরা হাতে মেহেন্দি আঁকতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। শাড়ি, চুড়িদার, ল্যাহেঙ্গার সঙ্গে মানানসই চুড়ি আর মেহেন্দি না হলে ইদের সাজ সম্পূর্ণ হয় নাকি? আগের দিনে মেহেন্দিপাতা বেটে হাতে পরা হত, এখন সে ঝামেলা নেই। মেহেন্দিকে খুবই পবিত্র মানা হয়। তাই মুসলিম সমাজে যে কোনও উৎসব ও অনুষ্ঠানে মেহেন্দি পরা বহু প্রাচীন রেওয়াজ। কুমারী, সধবা, বিধবা সকলেই মেহেন্দি পরেন। কাজ গুছিয়ে বাড়ির গৃহিণী, গৃহবধূরাও হাতে মেহেন্দি এঁকে নেন।

ভোপালের তাজ-উল-মসজিদে ইদের দিন নমাজ পাঠ। ছবি: পিটিআই।

ভোর থকে শুরু হয় রকমারি ইদ স্পেশ্যাল রান্না। নাস্তার জন্য চালগুঁড়ির রুটি, ফিরনি, মাংসের ঝোল ইত্যাদির সঙ্গে লাচ্ছা আর সিমাই তো থাকেই। লাচ্ছা যেহেতু দুধে ভিজিয়ে খাওয়া হয় তাই সিমাইয়ের পায়েস হয় না, পোলাও হয়। এই পোলাও বানানো হয় ভাজা সিমাই সেদ্ধ করে ঘি, কাজু, পেস্তা, কিসমিস, চিনি, গরম মশলা ইত্যাদি দিয়ে। এই রান্নাটি পোলাওয়ের মত ঝরঝরে হয়।

দুপুরের জন্য যে যার বাড়ির সদস্যদের পছন্দ মত বিরিয়ানি,পোলাও,রেজালা,মাটন বা চিকেন চ্যাঁপ,টিকিয়া, জালি কাবাব,স্মমি কাবাব ইত্যাদি নানারকম মাংসের পদ।

আরও পড়ুন: ইদের দিনেও অশান্ত কাশ্মীর, পাথরের পাল্টায় পুলিশের কাঁদানে গ্যাস!

ইদ সাম্যের উত্সব, মহামিলনের উতসব। ইদের পূর্বেই পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী নির্ধারিত ফিতরার টাকা এবং সম্পত্তির পরিমাণ অনুযায়ী জাকাতের টাকা দরিদ্রদের মধ্যে ও জনহিতকর প্রতিষ্ঠানে দান করা ধর্মীয় বিধান ও মানবিক কর্তব্য। এই দিন সমস্ত বিদ্বেষ, রাগ-অভিমান ভুলে নতুন করে মিলিত হওয়ার দিন। নামাজ শেষ হলেই ইদের ময়দানে শুরু হয়ে যায় কোলাকুলি। ছোটরা বেরিয়ে পড়ে বাড়ি বাড়ি ইদের সালাম জানাতে। বড়রাও যান তাঁদের থেকে বড় যাঁরা, তাঁদের সালাম ও অন্যদের শুভেচ্ছা জানাতে। বাড়ির মহিলারা এঁদের খাবার পরিবেশন করে আপ্যায়ন করেন। ছোটদের খাবারের থেকেও 'ইদি'র (সালামির টাকা) প্রতি বেশি নজর থাকে।

ছোট পরিবার যাঁদের, সেই সব বাড়ির অল্পবয়সী মেয়ে বউরা ছেলেমেয়ে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বিকেলের দিকে বেরিয়ে পড়েন প্রতিবেশী ও আত্মীয়র বাড়ি ইদের সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। অনেকে এই দিন সময় করে উঠতে পারেন না, অনেকের বাড়িতে রাত্রিতে ছেলে মেয়ের বা স্বামীর বন্ধু-বান্ধবদের নিমন্ত্রণ থাকে, তাই তাঁরা পরে কোনও দিন যান। খুশির ইদ এক দিনের হলেও ইদের খুশি বিনিময় চলতেই থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Eid Eid Celebration festival Ramadan ইদ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE