Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জলবায়ু নিয়ে চাপ, আমেরিকা চললেন মোদী

ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করার পরে ভারতের সামনে সুযোগ এসেছে জলবায়ু দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার। নরেন্দ্র মোদী কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় রয়েছেন।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৭ ০৪:৪২
Share: Save:

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আক্রমণ করেছিলেন ভারত ও চিনকে। অভিযোগ করেছিলেন, চুক্তির কারণে এই দু’টি দেশ নাকি কোটি কোটি ডলার কামিয়ে নিচ্ছে! অন্যায় হচ্ছে আমেরিকার সঙ্গে।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন সফরের ঠিক আগে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি নিয়ে বেজিং ও মস্কোর সঙ্গে একটি কৌশলগত অক্ষ তৈরি করল নয়াদিল্লি। আগামী সপ্তাহের গোড়ায় মার্কিন মুলুকে পৌঁছবেন মোদী। ভারতীয় কূটনীতিকদের আশা, এর ফলে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে জলবায়ু দূষণ রোধের প্রশ্নে কিছুটা চাপ তৈরি করতে পারবেন মোদী।

গত ১৮ ও ১৯ জুন বেজিংয়ে ব্রিকসভূক্ত দেশগুলির বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের তালিকায় নিয়ে আসে ভারত। বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহের সঙ্গে এ নিয়ে পৃথক ভাবে আলোচনা হয় চিন ও রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী যথাক্রমে ওয়াং ই এব‌ং সের্গেই লেভরভের সঙ্গে। বৈঠকের পরে বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে নাম না করে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘‘সংশ্লিষ্ট বিদেশমন্ত্রীরা সমস্ত দেশকে আহ্বান করেছেন প্যারিস জলবায়ু চুক্তিকে বাস্তবায়িত করার জন্য। এ কাজে প্রত্যেক রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে।’’ ব্রিকস-এর পক্ষ থেকে যে বিবৃতিটি দেওয়া হয়েছে তাতে একই সুর। সেখানে সরাসরি আমেরিকার নাম না করে বলা হয়েছে, ‘‘প্যারিস চুক্তিতে আর্থিক সহায়তা, প্রযুক্তি হস্তান্তর, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সহায়তা সংক্রান্ত যে সব প্রতিশ্রুতি রয়েছে, উন্নত দেশগুলির তা অবশ্যই পালন করা উচিত।’’

ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করার পরে ভারতের সামনে সুযোগ এসেছে জলবায়ু দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার। নরেন্দ্র মোদী কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় রয়েছেন। ফ্রান্সের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ-র সঙ্গে জুন মাসের গোড়ায় মোদীর বিস্তারিত কথা হয়েছে। মোদী ফ্রান্সের মাটিতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে প্রকৃতপক্ষে আমেরিকার উদ্দেশে বার্তা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে অবদান রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত, তার চেয়েও বেশি ভূমিকা রাখা হবে।’’ মোদীর মতে, ‘‘প্যারিস চুক্তি একটি উপহার যা এই প্রজন্ম ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দিতে পারে।’’

এটা ঘটনা যে বিশ্বে উষ্ণায়নের জন্য মূলত উন্নত দেশগুলিই দায়ী। কিন্তু এর অনেক বেশি প্রভাব গরিব ও অনুন্নত দেশগুলির মানুষের উপরেই পড়ে থাকে। তাই প্যারিস চুক্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, আমেরিকার মতো ধনী দেশ গরিব দেশগুলিকে অর্থ সাহায্য দেবে। ২০২০-র মধ্যে আমেরিকার এই সাহায্য বা অনুদান দেওয়ার কথা ৩০০ কোটি ডলারের। যার মধ্যে ওবামা জমানায় ১০০ কোটি দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া, ২০০৫-এ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের যা মাত্রা ছিল, ২০২৫-এর মধ্যে তা ২৬-২৮ শতাংশ কমানোর কথা আমেরিকার। ট্রাম্পের প্রবল আপত্তি এই জোড়া শর্ত নিয়েই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE