Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঢালাও ২০০০ কেন, উঠছে প্রশ্ন

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ্যে আসায় প্রশ্ন উঠেছে, নোট বাতিল করে কালো টাকা আটক করা যায়নি, তা স্পষ্ট। কারণ প্রায় ৯৯ শতাংশ বাতিল নোট জমা পড়ে গিয়েছে। কিন্তু কালো টাকা বা দুর্নীতির রাস্তাটাও বন্ধ করা গেল কি!

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৩৪
Share: Save:

কালো টাকা ও দুর্নীতি খতম করবেন বলে বড় অঙ্কের নোট বাতিল করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। যুক্তি ছিল, ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোটে কালো টাকার লেনদেন হয়। কালো টাকা মজুত করে রাখাও সোজা। নোট বাতিলের ৯ মাস পরে দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতিতে সেই বড় অঙ্কের নোটেরই দাপট। বাজারে যে পরিমাণ মূল্যের নোট রয়েছে, তার অর্ধেকেরই বেশি নতুন ২০০০ টাকা।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ্যে আসায় প্রশ্ন উঠেছে, নোট বাতিল করে কালো টাকা আটক করা যায়নি, তা স্পষ্ট। কারণ প্রায় ৯৯ শতাংশ বাতিল নোট জমা পড়ে গিয়েছে। কিন্তু কালো টাকা বা দুর্নীতির রাস্তাটাও বন্ধ করা গেল কি!

আরও পড়ুন: সম্পত্তির তথ্য দিলেন মাত্র এগারো মন্ত্রী

গত ৮ নভেম্বর পুরনো ৫০০ ও ২০০০ হাজার টাকার নোট বাতিলের পরে ২০০০ টাকার নোট চালুর সিদ্ধান্ত কেন্দ্র। তখন থেকেই প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম প্রশ্ন তুলছেন, ঘুষ, দুর্নীতি, কালো টাকার লেনদেন রুখতেই যদি ৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিল হয়, তা হলে ২০০০ টাকার নোট চালুর যুক্তি কী! এর ফলে তো কালো টাকার লেনদেন আরও মসৃণ হবে! এক কোটি টাকা ঘুষ দিতে চাইলে বা কালো টাকা লুকিয়ে রাখতে চাইলে তা ৫০০-র নোটের বদলে ২০০০ টাকায় রাখা অনেক সোজা।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, নোট বাতিলের আগে বাজারে যে পরিমাণ মূল্যের নোট ছিল, তার ৮৬.৪ শতাংশই ৫০০-১০০০ টাকার নোট। চলতি বছরের মার্চের হিসেব বলছে, এখন বাজারে থাকা নতুন ৫০০ ও ২০০০ টাকার নোটের মূল্য মোট নোটের ৭২.৭ শতাংশ। যার মধ্যে ২০০০ টাকারই ভাগ ৫০.২ শতাংশ।

কালো টাকা ও বেআইনি অর্থনীতির গবেষক, অর্থনীতিবিদ অরুণ কুমারের যুক্তি, ‘‘প্রথমত, সব কালো টাকা নগদেই রয়েছে, এটা ধরে নিয়ে সরকার ভুল করেছে। আমার হিসেবে, দেশে বছরে ৯৩ লক্ষ কোটি টাকা বেআইনি আয় হয়। এর কতখানি নগদে ধরা থাকে? রোজকার প্রয়োজনেই ছোট ছোট সংস্থা, সাধারণ মানুষের হাতে নগদ থাকে। দ্বিতীয়ত, এ কথা সত্যি, কিছু লোক বস্তা বস্তা নোটে কালো টাকা জমিয়ে রাখে। বড় অঙ্কের নোট পেলে তো সুবিধে!’’ অরুণের মতে, বড় অঙ্কের নোটে বরং মাধ্যমে কালো টাকা তৈরি হওয়াটাই সহজ হয়ে যায়।

আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ অবশ্য বলছেন, ‘‘নোট বাতিলে বাজারে নগদের পরিমাণ কমেছে। বড় অঙ্কের নোটের মূল্যও কমেছে। ফলে কালো টাকার কারবারিরা মুশকিলে পড়বেন।’’ মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, নোট বাতিলের পরে নগদের জোগান বাড়াতেই ২০০০ টাকার নোট চালু করা হয়েছিল। পরে ৫০০-র নোটের জোগান বেড়েছে। এ বার ২০০ টাকার নোটও আসবে। ফলে বাজারে মোট নোটের মধ্যে ২০০০ টাকার নোটের অনুপাতও কমে আসবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE