Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ছেলেকেও খুনের চেষ্টার মামলা

শিনার মৃত্যুর পরেই বিলাসী মিখাইল

মিখাইলকে বিষ খাইয়ে মারার চেষ্টা হয়েছিল বলে ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আজ ৩২৮ ধারাতেও অভিযোগ আনল পুলিশ। কিন্তু অসমে মিখাইলের আত্মীয়-বন্ধুরা ক্রমশই মিখাইলের নানা আচরণে বহু সন্দেহের বীজ খুঁজে পাচ্ছেন।

সেই নতুন গাড়ি নিয়ে চেরাপুঞ্জিতে মিখাইল। বছর দুয়েক আগে।

সেই নতুন গাড়ি নিয়ে চেরাপুঞ্জিতে মিখাইল। বছর দুয়েক আগে।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২১
Share: Save:

মিখাইলকে বিষ খাইয়ে মারার চেষ্টা হয়েছিল বলে ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আজ ৩২৮ ধারাতেও অভিযোগ আনল পুলিশ। কিন্তু অসমে মিখাইলের আত্মীয়-বন্ধুরা ক্রমশই মিখাইলের নানা আচরণে বহু সন্দেহের বীজ খুঁজে পাচ্ছেন। তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন, শিনা খুন হওয়ার পরে মিখাইল কী করে চুপচাপ বিলাসবহুল জীবন কাটাচ্ছিল! যদি তখন মায়ের বিরুদ্ধে সে কিছু বলে না থাকে, তা হলে আজ এত অভিযোগ করছে কেন! সর্বোপরি গত তিন বছরে ইন্দ্রাণীর বাবা-মায়ের শরীর-স্বাস্থ্যের যে দ্রুত অবনতি ঘটেছে, তার জন্য মিখাইলই দায়ী কি না, এ প্রশ্নও তুলছেন ঘনিষ্ঠেরা। নিছক অবহেলা নাকি এর পিছনে অন্য কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে, এই সন্দেহও তাড়া করছে তাঁদের।

মিখাইল দাবি করেছে, শিনা খুন হওয়ার দিনই ইন্দ্রাণী ও সঞ্জীব খন্না মিলে তাকে বিষ মেশানো পানীয় দিয়ে মারার চেষ্টা করেছিল। সে কোনও মতে পালায়। কিন্তু প্রতিবেশী ও বন্ধুদের প্রশ্ন, প্রাণ নিয়ে পালানো ছেলে কী করে সেই ঘটনা বেমালুম ভুলে গিয়ে চাকরিবাকরি ছেড়ে বাবুগিরি চালাতে পারে! প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, শিনা মারা যাওয়ার পরেই প্রায় ১২ লক্ষ টাকা দামের একটি টাটা আরিয়া গাড়ি ছেলেকে উপহার দিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। আগের কেনা মারুতি এস্টিম তো ছিলই। নতুন গাড়ি পাওয়ার পর প্রায়শই গুয়াহাটি-শিলং দাপিয়ে বেড়াত মিখাইল। বাড়ি ফিরত রাত করে। শেষ অবধি দিসপুর এলাকায় একটি দুর্ঘটনা ঘটাবার পরে পুলিশ গাড়িটি নিয়ে যায়।


উপেন্দ্রনাথ বরা ও দুর্গারানি বরা। তিন বছর আগে পবিতরা অভয়ারণ্যে।

শুধু কি গাড়ি? ছেলেকে একটি ল্যাব্রাডর এবং একটি গোল্ডেন রিট্রিভার কিনে দিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। শিনা মারা যাওয়ার পরে ২০১২ সালের ৮ অক্টোবর ফের দিল্লি যায় মিখাইল। সে বার ছেলেকে একটি ইংলিশ ম্যাস্টিফ কুকুরও কিনে দেন তিনি। ওই বছরের ২৪ এপ্রিল শিনা খুন হয়েছিল। ২৯ এপ্রিল থেকেই ফেসবুকে সক্রিয় ছিল মিখাইল। আত্মীয়-বন্ধুরা কেউ কোনও রকম আঁচ পায়নি। আজ সেই আত্মীয়-বন্ধুরাই বলছেন, দিদির মৃত্যুতে মিখাইল যদি সত্যিই দুঃখ পেত, তা হলে কাউকে কিছু না-বলে বিলাসে গা ভাসাতে পারত কি? বরং তাঁদের সন্দেহ, ইন্দ্রাণী ও মিখাইলের মধ্যে স্বার্থের যোগসাজশ থাকার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, শিনার মৃত্যুর পরেই মিখাইলের বিলাসী জীবনযাপন শুরু।

ঘনিষ্ঠদের সন্দেহ আরও বাড়ছে, উপেন্দ্রনাথ বরা ও দুর্গারানির এখনকার ছবি দেখে। চমকে উঠে তাঁরা বলছেন, মাত্র তিন বছরে দু’জনের অবস্থার এমন অবনতি কিছুতেই সম্ভব নয়। এর পিছনে ‘অন্য কারণ’ রয়েছে বলেই ধারণা তাঁদের। ২০১২ সালের প্রথম দিকে দাদু ও দিদিমার সঙ্গে পবিতরা অভয়ারণ্যে গিয়েছিল মিখাইল। তখনকার ছবি রয়েছে এক আত্মীয়ের কাছে। কিন্তু মিখাইলের অসুস্থ দাদু ও দিদিমার এখনকার যে ছবি আনন্দবাজার পেয়েছে, তার সঙ্গে ওই ছবির আকাশ-পাতাল ফারাক। বরা পরিবারের এক ঘনিষ্ঠের দাবি, গত দু’বছরে হঠাৎই উপেন্দ্রবাবু ও দুর্গারানির শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। মিখাইলের হাতেই ছিল দাদু-দিদিমার দেখভালের ভার।


এখন উপেন্দ্রনাথ ও দুর্গারানি

মিখাইল মুম্বই যাওয়ার আগে একাধিক বার সংবাদমাধ্যমে বলেছে, মা তাকেও মেরে ফেলতে পারত। দাদু-দিদিমাকেও বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করতে পারত। প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের ধারণা, গোপন অপরাধমনস্কতা থেকেই এ কথা বলেছে সে। তাঁদের দাবি, ইন্দ্রাণী হয় মিখাইলের মাধ্যমে নিজের মা-বাবাকে মৃত্যুপথে ঠেলে দিচ্ছিলেন। অথবা মিখাইলই দাদু-দিদিমার দেখভাল না করে, চিকিৎসা না করিয়ে তাঁদের এই অবস্থায় এনে ফেলেছে। মিখাইলদের এক আত্মীয় বলেন, সুন্দরপুরের বাড়িটি আছে দুর্গারানির নামে। ‘‘মনে হচ্ছে, বিধির টোপ দিয়ে শিনাকে মারার জন্য সঞ্জীবকে ব্যবহার করেছিল ইন্দ্রাণী। এর পর মিখাইলকে দিয়ে বাবা-মাকে সরাবার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ছেলের ব্ল্যাকমেলে অতিষ্ঠ হয়েই তাকেও মারবার ছক কষা হয়। এখন নিজেকে আড়াল করতে ছেলে সব দোষ মায়ের ঘাড়ে চাপাচ্ছে।’’ গত বছর দুর্গারানি অসুস্থ হওয়ার পরে ইন্দ্রাণী যখন শেষ বার সুন্দরপুরে আসেন, তার পর থেকেই মা-ছেলের সম্পর্কে অবনতি ঘটে। ছেলের দাবি, সে দাদু-দিদার দেখভাল করছে না বলে গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেন ইন্দ্রাণী। কিন্তু মিখাইলের বন্ধুদের দাবি, মিখাইলের টাকার চাহিদা ক্রমশই বাড়ছিল। তাই নিয়েই মা-ছেলের ঝগড়া বাধে।

শিনার এক বন্ধু ও দুর্গাদেবীর এক নিকটাত্মীয় বলেন, সঞ্জীব খন্নার মেয়ে বিধিও অন্তত বার দুয়েক সুন্দরপুরের বাড়িতে এসেছিল। শিনাও তখন ওই বাড়িতে ছিল। তবে মিখাইল ছিল না। ইন্দ্রাণীই বিধিকে নিয়ে গুয়াহাটি আসেন। অবশ্য বিধি শিনার বন্ধুদের জানিয়েছিল, পিটারই তাঁর বাবা। সঞ্জীব খন্নার কথা ওঠেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE