প্রতীকী ছবি।
হাসতে হাসতে তাঁরা বলে থাকেন, সাগরে পেতেছি শয্যা। শিশিরে কী বা ভয়! কিন্তু যদি সুনামি আসে?
গেরুয়া সুনামির ধাক্কায় ত্রিপুরার সিপিএম নেতারা এখন শুধু রাজনৈতিক ভাবেই বেসামাল নন। আক্ষরিক অর্থেই ঠাঁই-চিন্তা করতে হচ্ছে তাঁদের। মানিক সরকারের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় ছিলেন সাহিদ চৌধুরী, মানিক দে, ভানুলাল সাহা, নরেশ জমাতিয়া, অঘোর দেববর্মা বা রতন ভৌমিকেরা। রাজধানী শহরে যাঁদের ঠিকানা ছিল সরকারি কোয়ার্টার। মুখ্যমন্ত্রী মানিকের আটপৌরে জীবনের কথা চর্চায় এসেছে বারবার। এঁদের কথা তেমন কেউ জানতে পারেনি।
দুর্দিনের বাজারে এঁদের মধ্যে যাঁরা জিতেছেন, তাঁদের না হয় বিধায়ক আবাসে ঘর মিলতে পারে। কিন্তু বাকিদের? দিকে দিকে ভাঙা পড়ছে পার্টি অফিস। যেখানে যতটুকু টিকে আছে, সেখানে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন দলের সন্ত্রস্ত কর্মীরা। তা হলে নেতাদের কি ফিরে যেতে হবে গ্রামের পারিবারিক ঠিকানায়? সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশের কথায়, ‘‘পার্টি অফিসগুলোর যা অবস্থা এখন! কোথায় কে থাকবে, জানি না।’’ বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মানিক অবশ্য আপাতত দলের রাজ্য দফতরেই উঠে আসছেন। মুখ্যমন্ত্রিত্ব যাওয়ার পরে নৃপেন চক্রবর্তী যে ভাবে স্যুটকেস নিয়ে পার্টি অফিসে উঠে এসেছিলেন।
বস্তুত, ক্ষমতার বৈভব না দেখিয়ে সাধারণ থেকে যাওয়াই যে দীর্ঘ কালের ত্রিপুরার পরম্পরা, দ্রুত সেই সত্য বুঝতে পারছেন বিজেপি নেতৃত্বও। বিজেপি মানেই বড়লোকের পার্টি, এই তকমা মুছতে তাই তৎপর হয়েছেন তাঁরাও। ভাবী মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব গভীর সম্ভ্রম দেখাচ্ছেন পরাজিত পক্ষের অনাড়ম্বর সৈনিকদের প্রতি। রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সুনীল দেওধর আবার বিজেপির জয়ী বিধায়কদের মধ্যে থেকে তুলে আনার চেষ্টা করছেন বুর্ব মোহন জমাতিয়া, সান্ত্বনা চাকমাদের, যাঁদের সামনে রেখে দেখানো যায়— গরিব মানুষ তাঁদের সঙ্গেও আছেন। তাঁদের মন্ত্রিত্বে বা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আনার প্রয়াস চলছে।
ত্রিপুরার সাদামাঠা মন্ত্রীদের আদর্শ উদাহরণ হতে পারেন সদ্যপ্রয়াত খগেন্দ্র জমাতিয়া। প্রথম যৌবনে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে। পরে আত্মসমর্পণ করে সিপিএমে যোগদান এবং উপজাতি এলাকার স্বশাসিত জেলা পরিষদ (এডিসি) হয়ে কালক্রমে মন্ত্রী। ক্যান্সারের থাবায় ভোট-গণনার মাত্র আগের দিন যখন প্রয়াত হলেন খগেন্দ্র, তাঁর হাতে মৎস্য, দমকল ও সমবায় দফতর। কিছু দিন আগে ঋণ নিয়ে বাড়ি তৈরির কাজে হাত দিয়েছিলেন। যে ঘরে আর তাঁর ঢোকাই হয়নি! তাঁকে স্মরণ করে বিজেপির ভাবী মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব বলছিলেন, ‘‘ওঁরা ওঁদের মতো করে ত্রিপুরার জন্য ভাল কাজ করার চেষ্টা করেছিলেন। সাধারণ ভাবে থাকতেন। নতুন সরকার চালানোর সময়ে এই রকম বামপন্থী মানুষদের সহযোগিতা চাইব।’’
পাল্টা ভাবমূর্তি গড়তে বিজেপি-তে গুরুত্ব পাচ্ছেন করবুক কেন্দ্রের ঝুমচাষি বিধায়ক বুর্ব মোহন। তাঁরও নিজের বাড়ি নেই। এমএসডব্লিউ ডিগ্রিধারী, পেচারথলের সান্ত্বনা বলছেন, ‘‘বেকারদের কাজের চেষ্টা করব। সকলকে ঘর, সব ঘরে কাজ বিজেপি-ই দিতে পারে।’’
কার ঘরে কত সারল্য, দেখছে ত্রিপুরা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy