Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বায়ুদূষণ কমলেও শব্দ-তাণ্ডব দিল্লিতে

সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞার শাসানিই হোক কিংবা মানুষের সচেতনতা— গত বছর পর্যন্ত শব্দবাজি যে ভাবে রাত পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াত, এ বারে আর সে’টি দেখা গেল না।

ধোঁয়াশার চাদর: দীপাবলির পরে দিল্লি। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

ধোঁয়াশার চাদর: দীপাবলির পরে দিল্লি। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:১৬
Share: Save:

দিল্লির বাঙালি পাড়া চিত্তরঞ্জন পার্কের নবপল্লির কালীপুজো। অন্য বার মাইক চালিয়েও পুরোহিতের মন্ত্র শোনা যেত না।

আর এ বারে? মাইক ছাড়াই দিব্যি হয়ে গেল পুজো। প্রতিবারের মতো দীপাবলিতে বাজির সেই বিকট শব্দ এ বারে অনেকটাই উধাও।

সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞার শাসানিই হোক কিংবা মানুষের সচেতনতা— গত বছর পর্যন্ত শব্দবাজি যে ভাবে রাত পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াত, এ বারে আর সে’টি দেখা গেল না। তাই বলে চিত্তরঞ্জন পার্কের এই দৃশ্যটাই গোটা দিল্লি বা তার উপকণ্ঠের নয়। অনেক জায়গাতেই রাত বাড়তে বাজির প্রকোপও বেড়েছে। যে কারণে কাল রাত তো বটেই, আজ সকাল থেকেও দিল্লিতে দূষণের মাত্রাটি ছিল ভয়াবহ। গত বারের থেকে কম, কিন্তু বিপদ-সীমার বেশ উপরে।

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের মতে, দীপাবলির এক দিন আগে দিল্লির বাতাসের গুণমান সূচক (একিউআই) ছিল ৩০২। গত কাল দীপাবলির দিন সে’টি একটু বেড়ে হয় ৩১৯। আজ সে’টিই বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪৬। গত বছর দীপাবলির এক দিন আগে ও পরে মিলিয়ে মোট তিন দিনে এই হার ছিল যথাক্রমে ৪০৪, ৪৩১ ও ৪৪৫। ফলে গত বছরের তুলনায় এ’টি কমলেও এখনও ‘বেশ খারাপ’-এর তালিকাতেই রয়েছে বাতাসের হাল।

আরও পড়ুন: লক্ষ লক্ষ অকালমৃত্যু স্রেফ দূষণে! তালিকায় সবচেয়ে উপরে ভারত

সাধারণ হিসাবে একিউআই ০-৫০ এর মধ্যে থাকলে ‘ভাল’ মনে করা হয়, ৫১-১০০ সন্তোষজনক। কিন্তু এর উপরে উঠলেই বিপদসীমা বাড়তে থাকে। পরিবেশবিদদের মতে, আসলে এতটা নিয়ন্ত্রণ যে

শুধু শব্দবাজি কমার ফলে হয়েছে, তা নয়। দিল্লির দূষণ রুখতে অনেক দিন আগে থেকেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। দিল্লির কয়লা চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করা হয়েছে, ডিজেল জেনারেটরে রাশ টানা হয়েছে, পঞ্জাব ও হরিয়ানার ফসল পোড়ানো বন্ধ করেও ধোঁয়া রোখার চেষ্টা হয়েছে। তা ছাড়া আবহাওয়ার উপরেও দূষণ থিতিয়ে যাওয়ার অনেকটা নির্ভর করে। এ বারে ঠান্ডা পড়ার একটু আগেই দীপাবলি হয়ে গিয়েছে।

বাজির দূষণ থেকে বাঁচতে কিছু অভিভাবক সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। এমনকী ছ’মাসের দুই শিশুও আবেদন জানায় এই দূষণের হাত থেকে তাদের বাঁচাতে। চিকিৎসকরাও বলেছিলেন, এই দূষণের জন্য শিশুদের ফুসফুসে গুরুতর প্রভাব পড়ে। তাঁদের অনেকের মতে, বাজি না-বানালে অনেকে কর্মহীন হলে বিকল্প রোজগার খুঁজে নিতে পারবেন। কিন্তু ফুসফুস খারাপ হলে তার বিকল্প পাওয়া যাবে না। কিন্তু এই দূষণ বিতর্কের মধ্যে আজও ফের সাম্প্রদায়িক রং এনে ফেলে বিজেপি। দলের তথ্যপ্রযুক্তি সেলের প্রধান অমিত মালব্য বলেন, ‘‘হিন্দুদের আস্থার উপর লাগাতার আক্রমণ করার জন্য বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। কংগ্রেসের নেতারাই এই সব মামলা লড়ছেন।’

শব্দবাজির উপর সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায়ও মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘এর পর হয়তো মৃতদেহ দাহ করার বিরুদ্ধেও আদালতে আবেদন জমা পড়বে।’’ নোট বাতিল আর জিএসটি-র পর সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞাতেও মাথায় হাত পড়েছিল শব্দবাজি কিনে গুদাম ভরে ফেলা ব্যবসায়ীদের। এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বিজেপির চিরাচরিত ভোটব্যাঙ্ক। কিন্তু স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। অভিভাবকদের অনেকে আজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কারণেই দিল্লি ও আশেপাশে অন্য বারের মতোই দেদার শব্দবাজি ফেটেছে। তবে দূষণ কমিয়ে আনার এই প্রথম পরীক্ষায় চোখে পড়ার মতো সাফল্যের পর আসছে বার থেকে আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার কথাই বলছেন অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE