Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ফের যদি পাল্টি খান? বাবার শর্তে তাই না টিপুর

মাত্র দু’দিন সময় আছে হাতে। অর্থাৎ ৪৮ ঘণ্টা। তার মধ্যে ঠিক করতে হবে, সমাজবাদী পার্টির সাইকেল প্রতীক নিয়ে মারামারিটা চলবে না থামবে! কারণ নির্বাচন কমিশন শুক্রবার বসবে প্রতীক-যুদ্ধের ফয়সালা করতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৭
Share: Save:

মাত্র দু’দিন সময় আছে হাতে। অর্থাৎ ৪৮ ঘণ্টা। তার মধ্যে ঠিক করতে হবে, সমাজবাদী পার্টির সাইকেল প্রতীক নিয়ে মারামারিটা চলবে না থামবে! কারণ নির্বাচন কমিশন শুক্রবার বসবে প্রতীক-যুদ্ধের ফয়সালা করতে। এই অবস্থায় গত কাল বিকেলে সুর নরম করে বাবা মুলায়ম সিংহ যাদব জানিয়েছেন, ভোটে জিতলে ছেলে টিপুই ফের মুখ্যমন্ত্রী। গত কয়েক মাসে শুধু নিজের হাতে গড়া দল নয়, নিজের ছেলে সম্পর্কেও যে ভাবে ঘনঘন মত বদলেছেন মুলায়ম, তার পরে আর দেরি করতে চাননি টিপু ওরফে অখিলেশ। আজ সকালেই নিজের মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন থেকে পায়ে হেঁটে পৌঁছেছিলেন বাবার কাছে। কাল বিকেলের বয়ান বদলের আগেই সমস্যা যাতে মেটানো যায়।

কিন্তু ওই পর্যন্তই! বাবা-ছেলের দেড় ঘণ্টার বৈঠকেও মিলল না সমাধানসূত্র। এবং এ জন্য অখিলেশ-শিবির তো বটেই, সপা-র মুলায়মপন্থী অনেকেও দায়ী করছেন নেতাজিকেই। একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, এটা নাকি ইচ্ছাকৃত নয়। তা হলে? গুঞ্জনটা সেখানেই। সপা-র একটি অংশের বক্তব্য, মুলায়ম নাকি ইদানিং সব কথা মনে রাখতে পারছেন না। গত কয়েক মাসে সমস্যাটা বেড়েছে। সূত্রের খবর, ছেলে টিপু অর্থাৎ অখিলেশ সম্পর্কে বরাবরই একটু বেশি স্নেহপ্রবণ মুলায়ম। সেই ছেলে সামনে গেলেই তাঁকে নির্দ্বিধায় দলের নেতা হিসেবে মেনে নিচ্ছেন। কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রী সাধনা বা ভাই শিবপাল, ‘বন্ধু’ অমর সিংহের সামনে গেলে আগের কথা ভুলে ছেলের বিরুদ্ধে ফোঁস করছেন! ইদানিং এমন হচ্ছে, মুলায়ম সাক্ষাৎকারও দিচ্ছেন লেখা কাগজ দেখে দেখে!

সমস্যাটা বিলক্ষণ বুঝছেন অখিলেশ। তাই আজ সকালে বাবা তাঁকে যে দু’টি প্রস্তাব দিয়েছেন, দু’টিই খারিজ করে দিয়েছেন। এবং তার পর নিজের বাসভবনে ফিরে গিয়েছেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলেই।

কী প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুলায়ম?

সপা সূত্র বলছে, আজকের বৈঠকে ছেলের কাছে দু’টি প্রস্তাব রাখেন মুলায়ন। প্রথমত, বৈঠকের শুরুতেই মুলায়ম জানান, দলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী অখিলেশই। এবং নির্বাচনে জিতলে অখিলেশই হবেন মুখ্যমন্ত্রী। বিনিময়ে অখিলেশ যে তাঁকে হটিয়ে সর্বভারতীয় সভাপতি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন, সেই দাবি থেকে প্রকাশ্যে সরে আসতে হবে। মুলায়মকেই দলের সর্বভারতীয় সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। এবং দ্বিতীয়ত, সাইকেল প্রতীকের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে মুলায়ম-অখিলেশ দুই শিবিরই। আজ মুলায়ম ছেলেকে অনুরোধ করেন, টিপু যেন প্রতীকের দাবি ছেড়ে দেন। না হলে দল ভেঙে যাবে। বাজেয়াপ্ত হবে সাইকেল প্রতীক।

সূ্ত্রের খবর, পিতার দু’টি প্রস্তাবই পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছেন অখিলেশ। মুখ্যমন্ত্রী শিবিরের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশ তথা জাতীয় রাজনীতিতে একদা কুস্তিগীর বাবার ঘনঘন ডিগবাজি বিখ্যাত। সেটা করে অতীতে রাজনৈতিক ফসলও তুলেছেন নেতাজি। কিন্তু ইদানিং তাঁর সমস্যাটা তো অন্য। এই অবস্থায় তিনি সভাপতির পদ ছাড়লেই বাবা অবস্থান বদলাতে পারেন বলে আশঙ্কা অখিলেশের। বিশেষ করে সভাপতি পদে ফিরলেই কাকা শিবপাল, সৎমা সাধনা ও অমর সিংহের মন্ত্রণায় তিনি ফের ‘অখিলেশ হটাও’ অভিযানে নামবেন বলেও আশঙ্কা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী শিবিরে। সে কারণেই আজ অখিলেশ বাবাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটের আগে সভাপতি পদ তিনি ছাড়বেন না। তবে ভোটে জিতলে সভাপতি পদ বাবাকে ছেড়ে দিতে আপত্তি নেই তাঁর।

আর সাইকেল প্রতীক প্রসঙ্গে অখিলেশ-শিবিরের বক্তব্য, কেন ওই প্রতীক তাঁদের কাছে থাকবে, তার যুক্তি হিসেবে গত কাল রামগোপাল যাদব দেড় লক্ষ পাতার একটি আবেদন জমা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে। সেখানে সপা’র সাংসদ, বিধায়ক, দলীয় পদাধিকারী, বিধান পরিষদের সদস্য, পঞ্চায়েত সদস্য-সহ মোট ৪৭১৬ জন হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁদের নেতা অখিলেশই। তাই সাইকেল প্রতীক দখলে রাখার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী অখিলেশ-শিবির। আর সেটা বুঝেই ঘাবড়ে গিয়েছেন মুলায়ম। অখিলেশ বাবাকে জানিয়ে দেন, চূড়ান্ত রফাসূত্র খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত সাইকেলের দাবি থেকে সরার কোনও প্রশ্ন নেই।

কিন্তু বাবার দু’টি প্রস্তাবই এ ভাবে ফেরানোয় অখিলেশের সমস্যা হবে না? মুখ্যমন্ত্রী শিবিরের বক্তব্য, না। কারণ অখিলেশ নিজের দলের অন্দরেই নীতির লড়াই লড়ছেন। সেটা রাজ্যের লোকও গত ক’দিনের ঘটনায় বুঝেছেন। অখিলেশ রাজ্যকে আগামী দিনে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন উপহার দিতে চান। গুন্ডাবাহিনীর সর্দার তথা কাকা শিবপাল দলে থাকলে তা সম্ভব নয়। আবার অমর সিংহ বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন বলেই বিশ্বাস অখিলেশের। এই পরিস্থিতিতে মুলায়মের দাবি মানার অর্থই হল, ওই দু’জনের হাত শক্ত করা। যাতে আখেরে ক্ষতি হবে অখিলেশ তথা সপা-র। ভোটের মুখে সেই ঝুঁকি নিতে নারাজ অখিলেশ। বাবা-ছেলের এমন টানাপড়েনের মধ্যেই আগামী শুক্রবার প্রতীক নিয়ে চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই দিন দু’দলকে নিয়ে বৈঠকে বসবে কমিশনের ফুল বেঞ্চ। অর্থাৎ হাতে সময় মাত্র দু’দিন। এই ৪৮ ঘণ্টায় বিবাদের নিষ্পত্তি হওয়া মুশকিল। কমিশন সূত্রের খবর, দু’পক্ষই নিজেদের দাবিতে অনড় থাকলে আপাতত সাইকেল প্রতীক বাজেয়াপ্ত করা হবে। পরিবর্তে দু’টি আলাদা প্রতীক নিয়ে লড়তে হবে দু’দলকে। যদিও সপা-র অন্যতম প্রভাবশালী নেতা আজম খানের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, এই সময়ের মধ্যে কোনও না কোনও সমাধান সূত্র মিলবেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Akhilesh yadav Mulayam singh yadav
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE